১৬ দোকান থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অগ্রিম আদায় : বিভাগীয় তদন্ত কমিটির পরিদর্শন
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহরের কুমিল্লা রোডস্থ তাজ ম্যানশনের পিছনে মডেল থানা ও পৌরসভার ৩০ গজের মধ্যে অবৈধভাবে রেলওয়ের সম্পত্তির উপর মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে। এ মার্কেটে ১৬টি দোকান দেওয়ার পূর্বেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছে অবৈধ নির্মাণকারীরা।
গত ২ দিন যাবত রেলওয়ে ১৪নং কোয়ার্টারের পিছনে মার্কেটের পরিচালক আবুল বাশার একটি অস্ত্রধারী সংঘবদ্ধ চক্রদের সাথে নিয়ে এ নির্মাণ কাজ করছে, বলে মার্কেটের পুরাতন ব্যাবসায়ীরা জানান।
স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা গ্রহন না করায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন) সহ ৩ সদস্যের ১টি টিম গতকাল শনিবার বিকেলে চাঁদপুরে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন । এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা গ্রহন করার জন্য এসএসএই (কার্য) চাঁদপুরকে নির্দেশ প্রদান করেন।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, শহরের কুমিল্লা রোডের সাবেক শেখ ম্যানশন বর্তমানে তাজ ম্যানশন নামে একটি মার্কেট রয়েছে। সে ৫ তলা বিশিষ্ট মার্কেটের পিছনে রেলওয়ের প্রায় ১ হাজার বর্গফুট জায়গা খালি অবস্থায় আছে। যা’ চাঁদপুরস্থ রেলওয়ে স্টাফদের বসবাসরত ১৪নং কোয়াটার এলাকার পিছনের অংশ।
স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও তাজ ম্যানশনের পুরাতন ব্যবসায়ীরা জানান, তাজ ম্যানশনের মালিক ইটালী প্রবাসী আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারী ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের কেয়ারটেকার (পরিচালক) আবুল হোসেন ও ম্যানেজার মুকবুল হোসেন ১টি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী লোকদের সাথে নিয়ে রেলওয়ে সম্পত্তির উপর পাঁকা মার্কেট নির্মাণ করে যাচ্ছে । গত ২দিন যাবত প্রায় ১ শ ফুট লম্বা ৫০ ফুট প্রস্থ্যের মূল্যবান স্থানে ১৬টি দোকান নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দোকানগুলি নির্মাণের পূর্বে ১৬টি দোকানের বিপরীতে প্রতি দোকান থেকে ১০ লাখ টাকা পজেশন মাসিক ৪ হাজার টাকা ভাড়া সিদ্ধান্তে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু চক্রটি। তারা দোকান নির্মাণের পর তাজ ম্যানশনের দু’পাশে পূর্বের ১২টি দোকান মাঝখানে চলাচলের গলি রয়েছে। সে দোকানের সাথে একত্র করে গলির শেষ অংশের গ্রীল খুলে দিয়ে পুরো দোকানগুলো তাজ ম্যানশনের আওতাভুক্ত করে ১টি মার্কেটের রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত করছেন।
ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশের আইন আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করার সামিল হয়ে দাঁড়াবে। রেলওয়ের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি যদি এভাবে জোড়পূর্বক অবৈধভাবে পেশি শক্তি ব্যাবহার করে দখল করা হয়। তাহলে আগামীতে চাঁদপুর রেলওয়ে শত শত একর সম্পত্তি যে কেউ দখল করে নেবে। কোনোপ্রকার জবাবদিহিতা থাকবে না। এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি রক্ষাকল্পে জরুরী প্রদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকার ১৪নং কোয়াটারের পেছন থেকে পালবাজার পর্যন্ত বিশাল এ জায়গাটি বিএনপি সরকারের শাষনকালে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়। টেন্ডারে এ জায়গাটি তখন সর্বোচ্চ দরদাতা হন বিশিষ্ট শিল্পপতি মাহবুবুর রহমান শাহীন। স্থানীয় ব্যাবসায়ী আব্দুল কুদ্দুছের মামলার পরিপেক্ষিতে সে সময় আর এ সম্পত্তিটি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। যা আদালতে এখন মামলা চলিত অবস্থায় রয়েছে বলে তাজ ম্যানশনের পার্শ্ববর্তী মার্কেটের মালিক জানান।
রেলওয়ে কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন (দেলু) অ্যাটেন্ডডেন্স, চট্টগ্রাম-এর ছেলে শরিফ সরকার তার সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী চক্রদের মাধ্যমে এ কাজ করার সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে তাজ ম্যানশনের ব্যাবসায়ীরা জানিয়েছেন। সে ২০ লাখ টাকা কন্ট্রাকের মাধ্যমে এ কাজটি করছে। এর পূর্বে এই শরিফ রেলওয়ের কোয়াটার এল-৪৪ (ক), এল-৪৪ (খ) ২টি কোয়াটার ভেঙ্গে বাজার রোডের পাশে হওয়ায় ৭টি দোকান নির্মাণ করে পজেশন বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিমাসে দোকান থেকে ২/৪ হাজার টাকা প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা ভাড়া তুলে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ সম্পত্তি যেন তাদের পূর্বপূরুষের ওয়ারিশ। স্থানীয় প্রশাসন এ মার্কেট নির্মাণের ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পুরো রেলওয়ের এলাকায় এ শরিফ সরকার দখল করে মানুষের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাড়িঘর দোকানপাট তুলে দিয়ে সরকারি সম্পত্তি বেহাত করে চলছে। তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সে এভাবে চালিয়ে গেলে চাঁদপুরে রেলওয়ের সম্পদ রেলওয়ে থাকবে না। সব অবৈধভাবে ভূমিদস্যুদের হাতে চলে যাবে। তারা নিজেরা মালিক বনে যাবে। এ ব্যাপারে ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে তাজমহলের ব্যবসায়ীসহ সকল ব্যবসায়ীরা মত প্রকাশ করেছেন।
মাজহারুল ইসলাম অনিক
|| আপডেট: ০৭:৩৭ অপরাহ্ন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, রোববার
এমআরআর