প্রতিষ্ঠাকালের হিসেব মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং প্রচীণ পৌরসভা চাঁদপুর। বিগত পরিষদের মেয়াদকাল চাঁদপুর পৌরসভাকে একটি আধুনিক, ডিজিটাল, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা বলা হলেও আদতে এর রুপ ছিল কিছুটা ভিন্ন। অনেক ত্রুটিপূর্ণ কার্যক্রমের পাশাপাশি চাঁদপুর পৌরসভার ৫৭ কোটি টাকা দেনাগ্রস্ত ছিল। ফলে জাইকাসহ দাতা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এই খাতে বরাদ্দ ছিল খুবই নগণ্য।
একই মানের পৌরসভাগুলো যেখানে ৫ বছরে ২০০কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে, সেখানে চাঁদপুর পৌরসভা পেয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েলের নেতৃত্বে নতুন পরিষদ তাই দেনাগ্রস্ততা থেকে পৌরসভা কে মুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পৌরসভার অপব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
২ জানুয়ারি সোমবার চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচিত নতুন পরিষদের দায়িত্বগ্রহণের প্রথম ৩ মাসের কর্মকাণ্ড এবং কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। আত্মতত্ত্ব সূত্রে যেসব ক্ষেত্রে পৌরসভার অপব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানো হবে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
চাঁদপুর পৌরসভার মোট ৮০টি বিদ্যুতের মিটার ছিলো। যার সবগুলো ছিলো পোস্টপেইড। সবগুলোতেই বকেয়া ছিলো। বর্তমান পরিষদ ৪২টি মিটারের পুরো বকেয়া পরিশোধ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেগুলো কোনো কাজে আসে না। বর্তমানে ৩৮টি মিটার আছে। ৪টি বাদে সবগুলো প্রিপেইড করা হয়েছে। এতে করে খরচের হিসেব টের পাওয়া যাবে। ৩ মাসে অর্ধকোটি টাকার দেনা পরশোধ করা হয়েছে। এরফলে দাতা সংস্থাকে বলা যাবে, বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে।
এতোদিন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১কোটি ১৮ লাখ টাকা।বর্তমান পরিষদের মেয়ারদকালের ১বছরে কর্মচারিদের বকেয় পরিশোধ করা হবে। পৌরসভার অব্যহত গাড়ির তেলের জন্যে ব্যায় হতো বছরে ১৭ লাখ টাকা। এখন থেকে কেউ পৌরসভার কাজ ছাড়া অতিরিক্ত ব্যবহার করলে তার তেলের বিল সে নিজে দিবে। এতে বছরে ২ লাখ টাকা আয় হবে।
পৌরসভার আরেকটি বড় অপব্যয়ের খ্যাত ছিলো পানি। পানি শাখায় বছরে আড়াই কোটি টাকা লস হয়। তদন্ত করে দেখা গেছে একটি ওয়ার্ডে এতোদিন অবৈধ সংযোগ ছিলো ৭৮৬টি। যা প্রায় ২৬শ’ পরিবার যুক্ত ছিলো। তাছাড়া মাসিক বিল কম নেয়া হয়। যা ছিলো ১০০ শ’ টাকা, এবং খুবই নগন্ন। তা কিছু বাড়ানো হবে। পানির লাইন রিফেয়ারিংয় করতে বড় অংকের টাকা দিয়ে ঠিকাদের মাধ্যমে কাজ করা হতো।
এখন পানি শাখার নিজস্ব একটি টিম করা হয়েছে। লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে নিজস্ব লোক একং যন্ত্রাংশ দিয়ে লিক সারানো হবে। এতে বছরে ৫০/৬০ লাখ টাকা বাঁচবে। পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত ৭টি বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো চালাতে বড় অঙ্কের টাকা লাগে। ফলে পৌরসভা অনেক কিছু দিতে পারে না। এখন এর মধ্যে ৪টি প্রাইমারি স্কুলকে সরকারি করা হবে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার মান বাড়বে, শিক্ষা ভালো পাবে। অচিরেই সরকারি করা হবে।
পৌরসভার বিলবোর্ডে দাতারা চরম ফাঁকিবাজি করছে। একপাশ দেখিয়ে ২পাশ ব্যবহার করছে। তাদের কাছে ভাড়ার বকেয়া পাওনা আছর। পাওনা পেতে মামলা করা হয়েছে। পাওনা বিল না দিলে তাদের বিলবোর্ড বাজেয়াপ্ত করা হবে। এতে বড় আয় হবে।
পৌরসভার কার্যক্রম-অটোমেশন করা হবে। যাতে কাজের গতি আসে। এবিষয়ে একটি বিদেশী সংস্থার থেকে ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ আনা হয়েছে। শহর পরিচ্ছন্নতা বড় সমস্যা হলো যানবাহন কম। নুতন যানবাহন আনার চেষ্টা চলছে। যা ৬ মাসের মধ্যে করা হবে। আগে ২৩০জন পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন ডেইলি লেবার পদ্দতিতে হাতে হাতে দেয়া হতো।
এখন ২৩০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বেতন ব্যাংক একাউন্টে পাবে। তারা ফিঙারপ্রিন্টের মাধ্যমে বেতন তুলতে পারবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো চর্জ নিবে না। এটি একটি বড় অর্জন। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্যে বহুতল ভবনে এ্যাপটম্যান্ট করা হবে। তারা অনাধুনিক আবাসন পাবে।
ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে নগরবাসীকে সেবা দেয়া হবে। সেবাগ্রহীতা একটি রুমেই যাবে। প্রয়োজনে কর্মকর্তা নিজেরা ফাইল নিয়ে ঘুরবে। নাগরীককে ফাইল নিয়ে ঘুরতে হবে না। সকল সনদ অনলাইনে দেয়া হবে। কর্মচারিদের অবসরকালিন ভাতা সাড়ে ৮কোটি টাকা বকেয়া ছিলো। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অবসরকালিন বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
তথ্যসূত্র আরো বলা হয়, পৌরসভার বহুতল ভবনের প্লানিংয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে নতুন ভবনের লেয়ার উঠানোর সময় স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পৌরসভার ইঞ্জিনিয়কে রাখতেই হবে। কাজ ত্রুটি থাকলে তারা আসামী হবেন। বর্তমান পরিষদের মেয়াদকালে একটি ভবনের নকশার এক ইঞ্চি পরিবর্তন হলেই তা ভেঙ্গে দেয়া হবে। নকশাবহীরভূত ভবন হতে দেয়া হবে না।বর্তমান পরিষদের টার্গেট বছরে ১কোটি টাকা অপব্যায় কমিয়ে, ৩ কোটি আয় বাড়নো।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,২ ফেব্রুয়ারি ২০২১