সিনেমার কাহিনীকে হার মানিয়ে নতুন এক কুকীর্তির ইতিহাস গড়লেন সিলেটের মৌলভীবাজারের রাজনগরের চেরাগ আলী।
ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে নিজের তিন মাসের শিশুকন্যাকে হত্যা আর নিজ স্ত্রীকে ধর্ষণ করালেন তিনি। শুধু প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোই ছিল তার উদ্দেশ্য। আর স্ত্রী জোসনা বেগমও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত।
সিআইডি পুলিশ অন্তত তিন বছর পর এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে।
চেরাগ আলী এবং জাসনা বেগম এখন এই ঘটনায় কারাগারে। রাজনগর থানা পুলিশ এর আগে দুইবার এই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দিলেও অবশেষে তিন বছরের মাথায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হলো।
মূলত এলাকার দুই মেম্বারের বিরোধকে পুঁজি করে আর নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই রোমহর্ষক ঘটনার জন্ম দেন চেরাগ আলী; যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০১২ সালের ১১ আগস্ট রাতে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুরিখাল গ্রামে চেরাগ আলীর শিশু কন্যা আকলিমা খুন হন। একই সময় চেরাগ আলীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যাকারীরা।
এই ঘটনায় একই গ্রামের আজমান (২৫), বাহার উদ্দিন ওরফে গেদা মিয়া (৫০) ও আমান উল্লাসহ অজ্ঞাত আরও দুইজনকে আসামি করে রাজনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন শিশুকন্যা আকলিমার পিতা চেরাগ আলী।
তিনি অভিযোগ করেন, বাড়িতে একা পেয়ে হত্যাকারীরা তার শিশু কন্যাকে বটি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা এবং স্ত্রী জোসনা বেগমকে ধর্ষণের পর চুল কেটে দেয়।
রাজনগর থানা পুলিশ এই ঘটনা তদন্তের পর সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে দুইবারই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করে। মৌলভীবাজার ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এত বড় একটি ঘটনায় বারবার পুলিশের ফাইনাল রিপোর্ট আর বাদীর নারাজি আবেদন পাওয়ায় এক পর্যায়ে পুলিশকে এই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের নির্দেশ দেন।
এরপর ২০১৪ সালে মামলাটি ন্যস্ত হয় পুলিশের সিআইডির (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টম্যান্ট) ওপর। প্রথমে সিআইডির ইন্সপেক্টর দেবাশীষ চৌধুরী মামলার তদন্ত শুরু করলেও তিনি বদলি হলে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্ত শুরু করেন সিআইডির ইন্সপেক্টর শ.ম কামাল হোসাইন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিইআইডির ইন্সপেক্টর শ.ম কামাল হোসাইন জানান, মামলার বাদী চেরাগ আলী ও তার স্ত্রী জোসনা বেগমের সাক্ষ্য নিতে গেলে বিষয়টি আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়।
এক পর্যায়ে চেরাগ আলীর স্ত্রী জোসনা বেগমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জবানবন্দিতে আজমানদের সাথে তার স্বামীর মামলা মোকদ্দমা নিয়ে বিরোধ থাকার কথা জানান। আর স্থানীয় মেম্বার মানিক বেগ ও গেদা মিয়ার নির্বাচনী বিরোধ থাকায় মেম্বার মানিক বেগের শরণাপন্ন হলে আজমান ও গেদা মিয়াকে ঘায়েল করতে মেম্বার তাদের এই কুপরামর্শ দেন।
মেম্বারের পরামর্শে একই গ্রামের মৃত আরব উল্ব্যার পুত্র শাহীন ও তার সহযোগীদের নিয়ে তার স্বামী চেরাগ আলী তাকে ধর্ষণ ও শিশুকন্যা আকলিমাকে হত্যা করায়।
পরে শাহীনকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে জোসনা বেগমও এই ঘটনায় জড়িত বলে শাহীন পুলিশকে জানান। পরে তিনি আদালতেও এ ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
শ ম কামাল হোসাইন জানান, স্থানীয় মেম্বার মানিক বেগসহ ১৩ জনকে নিয়ে বসে এই হত্যা ও ধর্ষণের পরিকল্পনা করা হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে আকলিমার পিতা চেরাগ আলী।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, জোসনা বেগম ২২ ডিসেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৭:৩১ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫, সোমবার
এমআরআর