এক বছরে ১ হাজার ১৭৪টি নরমাল ডেলিভারি

চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র মাতৃস্বাস্থ্য সেবায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত এক বছরে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ১৭৪টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। যা জেলার স্বাস্থ্যখাতে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিরাপদ মাতৃত্ব, চিকিৎসাসেবায় আন্তরিকতা এবং প্রশিক্ষিত পরিদর্শীকাদের নিরলস প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের মাসভিত্তিক নরমাল ডেলিভারির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ১১৫ জন , নভেম্বর ৯৩ জন, ডিসেম্বরে ১০১ জন প্রসূতি মা সন্তান প্রসব করেছেন।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৮২জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৩, মার্চ মাসে ৯৩জন, এপ্রিলে ১০৪, মে মাসে ১১০, জুন মাসে ৮৬, জুলাইয়ে ১০১, আগস্টে ১০৭ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১০৯ জন মা এখানে নিরাপদ প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন।
এ কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা জানান, বর্তমানে চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা ও প্রসব, পর্যবেক্ষণের মান এখন এতটা ভালো পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঢাকা বা সদর হাসপাতালে রেফার করার প্রয়োজন হয় খুব কম রোগীকেই। অধিকাংশ প্রসব এখানেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

চাঁদপুর প্রেসক্লাব রোডে অবস্থিত এই মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রেই প্রতিদিন শত শত গর্ভবতী ও প্রসূতী মায়েরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন

শুধু বিশেষ জটিলতা যেমন খিঁচুনি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পূর্বের সিজারের ইতিহাস বা গর্ভে শিশুর মলত্যাগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রোগীকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ফলে স্থানীয় গর্ভবতী মায়েরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই কেন্দ্রেই প্রসব করাতে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই কেন্দ্রে সেবা নিতে আসেন শতাধিক মা ও গর্ভবতী নারীরা। এখানে প্রতি মাসে গড়ে ৮০০ থেকে ১,০০০ জন গর্ভবতী মা নিয়মিত চেকআপ করিয়ে থাকেন।

নরমাল ডেলিভারি ছাড়াও প্রতি মাসে গড়ে ১৫০ জন নারী পরিবার পরিকল্পনা ইনপ্লান্ট পদ্ধতি গ্রহণ করেন, আর গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা নিচ্ছেন প্রায় দেড় হাজার নারী। এছাড়া আইইউডি পদ্ধতি গ্রহণ করেন মাসে গড়ে ২০–২২ জন।

এই সফলতার পেছনে নিবেদিতপ্রাণ চারজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকার ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। তারা হলেন, নাছিমা আক্তার, রাজিয়া বেগম, রাহিমা ও পপি দাস।

তারা শুধু দায়িত্ব পালন করেন না, বরং প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে পারিবারিক স্নেহের বন্ধন গড়ে তোলেন। প্রসবের সময় মা’দের সাহস জোগানো, মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং পরবর্তী সেবায় তাদের যত্ন নেওয়ার মধ্য দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানের আস্থা অর্জন করেছেন।
অনেক মায়েরা বলেন,এখানকার আপুরা আমাদের পরিবারের মতো পাশে থাকেন, তাই ভয় পাই না। তাদের হাসিমুখেই যেন সাহস পাই।

সাধারণ নারীর মুখে এমন মন্তব্যই প্রমাণ করে, সেবা শুধু ওষুধে নয়, ভালোবাসাতেও পূর্ণ হয়।

এ বিষয়ে মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. ইশরাত শারমিন লিজা বলেন, আমরা যতটা সম্ভব নরমাল ডেলিভারিতে উৎসাহ দিই। তবে খিঁচুনি, পানি ভেঙে যাওয়া, জরায়ুর মুখ না খোলা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, আগের সিজারের ইতিহাস বা শিশুর জটিলতার ক্ষেত্রে রোগীকে সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রথমবার সন্তান প্রসবের সময় এপিসিওটমি করতে হয়।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি/
১৩ অক্টোবর ২০২৫