Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর ত্রিনদী মোহনায় জাগো নিউজ পরিবারের আনন্দধারা
চাঁদপুর ত্রিনদী মোহনায় জাগো নিউজ পরিবারের আনন্দধারা

চাঁদপুর ত্রিনদী মোহনায় জাগো নিউজ পরিবারের আনন্দধারা

ভোরের কুশায়া তখন শহরের পিচঢালা পথে থিতু হয়েছে। শীতের প্রকোপ যেটুকু, তা আনন্দনগরে এসে উষ্ণপ্রায়। হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে যে উষ্ণতা, তা অতটুকু ঠাণ্ডায় ম্লান হয়ও না বটে। আর ভোরের আলো যখন বুড়িগঙ্গার নদীতে পড়লো, তখন সদরঘাটে প্রাণের উচ্ছ্বাস বইছে।

রাতের জরা আর শীতের রিক্ততা পায়ে ঠেলে সবাই যেন আনন্দমেলায় ঝড় তুললো নদীর ঘাটে মিলে গিয়েই। ঘাটে ক্ষণে ক্ষণে লঞ্চের সাইরেন বাজছে, আর তাতে প্রাণ আন্দোলিত হচ্ছে। এই বুঝি নদীবক্ষের বিশালতায় প্রাণতরী ভেসে যায় যায়!

বেলা তখনও উত্তাপ ছড়ানোর পরিবর্তে প্রশান্তির মুক্তাদানা ছড়িয়ে দিচ্ছে। সে মুক্তার ঝলক এসে পড়ছে চাঁদপুরগামী লঞ্চ পূবালীর গায়েও। ততক্ষণে লঞ্চের ডেক, ছাদ আর কেবিনগুলোতে খুশির খই ফুটছে।

দেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম-এর সদস্যরা গত শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) আনন্দবাজারে রূপ দিয়েছিল ঢাকার সদরঘাটকে। জাগো নিউজের এদিনের ফ্যামিলি ডে-তে শরিক হলেন আরও শতেক স্বজন-পরিবার। পরিবারগুলো আলাদা বটে, কিন্তু এ লঞ্চে ওঠে সবাই যেন জাগো পরিবারে মিলে গেল।

সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ লঞ্চ পূবালী যখন রওনা হলো, তখন নদী থেকে ওঠে আসা হিমেল হাওয়া প্রাণে প্রাণে দোলা দিল। সেই যে প্রাণ দুললো, তা আর থামলোই না। গান, গল্প, আড্ডা আর সেলফিতেই চার ঘণ্টা পার! খেলাও চললো। নারীরা লুডু খেলায় মত্ত আর পুরুষরা দাবায়। নারীর কপালে টিপও পরানো হলো খেলার ছলে।
বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে মেঘনার ঢেউয়ে যখন লঞ্চ পূবালীর মিলনমেলা ঘটল, তখন ভাবতরঙ্গে উথাল-পাতাল। আর ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার মোহনায় আসতেই জুমার নামাজের আজান কানে ভেসে আসল।

তখন ভাটার টান। গভীর মোহনা পেরিয়ে নদী ডাকাতিয়ার কোলে আসতেই চাঁদপুর শহরের বিভাজিত রূপে চোখ জুড়াল। এ ডাকাতিয়া নদীই চাঁদপুর শহরকে ভাগ করেছে। নদীর পাড় ঘেঁষেই পিকনিক স্পট ‘মুনীরা ভবন’। চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের এ বাড়িটিই ডাকাতিয়া নদী পাড়ের রূপ বাড়িয়ে দিয়েছে। লঞ্চ পূবালী নোঙর পাতলো সেখানেই। তীরে উঠতেই খোলা মাঠ আর সবুজ ঘাসের হাতছানি। দেহ-মন এলিয়ে দিয়ে সে ঘাসেই খানিক মিতালি হলো। মিতালি হলো অসংখ্য কবুতর আর হরিণের সঙ্গেও।

নদী, মোহনা আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে অবগাহন করে মুনীরা ভবনের খোলা প্রান্তরে চললো খেলার আয়োজনও। বিবাহিত-অবিবাহিত সদস্যদের নিয়ে ফুটবলের আয়োজন ছিল সত্যিই মনে রাখার মতো।

জাগো নিউজের প্রধান প্রতিবেদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের পরিচালনায় মনোমুগ্ধকর দুই পর্বের ফুটবল খেলা উত্তাপ ছড়িয়েছিল মাঠজুড়েই। ফিচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরমানের পরিচালনায় মোরগ লড়াই, সে তো খুনসুটির আদলেই সম্পন্ন হলো। এদিকে খেলা আর বিশ্রামের রেশ কাটতে না কাটতেই দুপুরের খাবারের ডাক এলো। খাবারের পুরোভাগেই ছিল বাঙালিয়ানায় ভরা। চাঁদপুরের সুস্বাদু ইলিশের ঝোল আর হরেক পদের ভর্তা মন কেড়েছিল সব বয়সীদেরই। সাধারণ অথচ মেন্যু এবং রান্নায় বিশেষ মুন্সিয়ানা থাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও সহ-সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।

খাবার পর্ব শেষ হতে না হতেই শীতবেলার বেরসিক সূর্য আর সময় দিল না। আনন্দমেলা ভেঙে দিতেই মোহনার ওপারে ঢলে পড়তে চাইল সূর্য। তখন জোয়ারের তেজ বাড়ছে। রক্তিম সূর্যকে সাক্ষী রেখেই ফের লঞ্চে ওঠা। কেউ কেউ লঞ্চে ওঠে নদীর টাটকা ইলিশও ক্রয় করলেন, নৌকায় থাকা জেলের কাছ থেকে।

ফ্যামেলি ডের বিশেষ আকর্ষণ ছিল র‌্যাফেল ড্র। সন্ধ্যার পর থেকেই চলে র‌্যাফেল ড্র’র টানটান উত্তেজনার দীর্ঘ আয়োজন। ভিশন ইলেকট্রনিক্স ও আরএফএল প্লাস্টিকের অসংখ্য পণ্য পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে তুলে দেয়া হয়। পুরস্কার দেয়া হয় কেপিসি পেপার কাপ, রানার অটোমোবাইলস, মিনিস্টার হাইটেক পার্ক, রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের পক্ষ থেকে। তবে বিমান বাংলাদেশের ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা এবং ইউএস বাংলার ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা বিমানের কাপল টিকিট নিয়ে উৎসাহ ছিল সবার মধ্যেই। অবশেষে জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক লিমন আহমেদ বিমান বাংলাদেশের লন্ডনের এবং ওয়েব সম্পাদক মিথুন ইউএস বাংলার টিকিট লুফে নেন।

জাগো নিউজের ফিচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরমানের পরিচালনায় র‌্যাফেল ড্র’র উত্তেজনা কমতে না কমতেই নাচ আর গানে ঢেউ ওঠে লঞ্চের ডেকেও। মেঘনার ঢেউ ভেঙে তখন লাইটার জাহাগুলো মিলে যাচ্ছিল দূর অজানায়। জাহাজগুলোর আলো আর চাঁদের জ্যোৎস্না মিলে রাতের রূপ ফেলছিল নদীর জলে। আর সেই তালেই বাউলের গানে উদাস বনে যায় সুর পিয়াসীরা। জলসার কেন্দ্রে দরবেশ মাহবুব আর দোহারী রাসেল, রিতম, বুলবুল, লিমন, সুমন, পলাশ ও খলিলের তালে-বেতালের সুরে ঝড় ওঠে লঞ্চের ছাদে। গানের পরে গান। তালির পরে তালি। এ যেন সুর আর প্রাণের মিতালি। এ বেলায় লাগামহীন নৃত্যে উবে গেল নবান্নের শীত। চার ঘণ্টার ফিরতি যাত্রায় মেঘনায়-বুড়িগঙ্গায় বইলো জাগো পরিবারের আনন্দধারাও।

ফ্যামিলি ডে’র এ আয়োজন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান জাগোনিউজ২৪.কম-এর সম্পাদক সুজন মাহমুদ। তিনি বলেন, বছর ঘুরে এমন একটি দিনের আয়োজনে সবাই আরও কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পাই। অফিস কলিগদের পরিবারবর্গের সবাইকে নিয়ে এমন আয়োজন সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
আগামীদিনের ফ্যামিলি ডে আরও সমৃদ্ধ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব জরা আর দ্বিধা দূরে ঠেলেই একটি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আপন করতে হয়। আমরা সে প্রয়াসই চালিয়ে যাব।

জাগো নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, এ দিনটি আমাদের কাছে মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা এ আনন্দমেলায় মিলেছিলাম পরস্পর পরস্পরের আপন হতে। আর এ আনন্দধারার পূর্ণতা এসেছে নদীপথে ভ্রমণ করে। দিনভর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে গিয়ে নির্মল আর প্রাণবন্ত আনন্দ খুঁজে পেলাম। চাঁদপুরের মোহনা ঘেঁষা পিকনিক স্পট মুনীরা ভবনের রূপেও আমরা মুগ্ধ।

সবে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত। নববধূকে নিয়ে এ আনন্দে শরিক হতে পেরে তিনি আত্মহারা প্রায়। তিনি বলেন, নদীপথের এ যাত্রায় কী যে আনন্দ মিললো, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিমান বাংলাদেশের ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা বিমানরে টিকিট পেয়ে লিমন আহমেদ বলেন, টিকিটটি পাওয়ার জন্য ঠিক এবার যেন প্রত্যাশিতই ছিলাম। ভাগ্যে জুটলো বটে। দারুণ লেগেছে। আশা করছি, লন্ডন যাত্রাও আনন্দময় হবে। (উৎস- জাগো নিউজ)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:১০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, রোববার
ডিএইচ