শুধু শিক্ষার্থীদের না, ক্লাসে শিক্ষকদের মানও বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে : ডিসি
মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, শিক্ষার মান, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ল্যাবসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রদের নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুচিত্র রঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসক বলেন, প্রথমে আমি বলবো আমাদের স্কুলগুলোতে যে ম্যানেজিং কমিটি আছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদাসীন। বিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধাগুলো সাধারণত এদের কাছে একরকম জিম্মি হয়ে পড়ে। এর মূল কারণ হলো কমিটির সদস্য নিজেরাই বেশিরভাগ অশিক্ষিত। তারা জানেই না আসল সমস্যা কোথায়। এর পরে তাদের অনেকেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে কিছুই করতে পারে না। তারা অধিকাংশ সময়ে রাজনৈতিক নেতার লেজুড়বৃত্তিতে মেতে ওঠে। এসব করতে গিয়ে তারা বিদ্যাগুলোর অত্যাবশকীয় জিনিস তাদের নজরে পড়ে না। এখন শিক্ষার মান নিয়ে আসুন। শিক্ষার মান আমাদের দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এখন আপনারা গত বছরের বোর্ডের ফলাফলের দিকে তাকান। সেখানে আপনারা এ জেলার ফলাফলের অবস্থা খারাপ বলা যায়। আপনারা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে অভিভাবকদের নিয়ে বসেন না। দুই মাসে অন্তত একবার আপনাদের বসা উচিত। এমনও হয় যে আমাকে অনেকে বলে আমরা অভিভাবকদের নিয়ে বসি কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে উনারা বসেন না। এই মিথ্যার আশ্র্য় নিচ্ছেন এটা তো আপনারা আপনাদের ছেলে মেয়েদের, আপনাদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেখুন শিক্ষকদের তার ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষার মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে শিক্ষার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে শিখতে হবে। শিক্ষা কোনো ফায়দা হাসিল করার জন্য না। যখনই এটা ফায়দার জন্য হবে তখনই শিক্ষার্থীরা ভূল পথে পরিচালিত হবে। মোবাইলের কুশিক্ষা তাদের বোঝাতে হবে। টেকনোলজির অশেষ সুবিধা তাদের দেখিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি উন্নত চরিত্র, সমাজে মেলামেশা করতে দেয়া প্রয়োজন। তবেই সে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু শিক্ষার্থীদের না, ক্লাসে শিক্ষকদের মানও বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে। শুধুমাত্র কোচিং নির্ভর ক্লাস করিয়ে আপনারা ক্ষান্ত দেন যেটা নৈতিকতা বিরোধী। আমার কাছে এমনও অভিযোগ আছে যে কোচিং করে বা সংশ্লিষ্ট স্যারের কাছে পড়ে তাকে সেই বিষয়ে ভালো নাম্বার দেয়া হয়। দেখুন আপনারা বেতন পান কিন্তু সব ছাত্রদের পড়ানোর জন্য। যত্ন নিলে সবার নিতে হবে। এটা না করা জঘন্যতম অপরাধ। শিক্ষকরা কেন অপরাধে জড়াতে যাবে? আর যদি নাই পারেন তাহলে এ পেশাকে ছেড়ে দেন। জাতির বিবেককে আমরা এরকম দূর্নীতিগ্রস্থ দেখতে চাই না।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক সরঞ্জামের ব্যবস্থা আমরা করতে পারি না। এমনো বিদ্যালয় আছে যেখানে ঠিকমত কার্যকর ল্যাব নেই। এরকম দৈন্যদশা উপর আরো যোগ হয়েছে আমাদের সরকারি বন্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তারপর যদি বিদ্যালয়ের সার্বিক সুবিধা কম থাকে। এর মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। আমার আহবান থাকবে যে আসুন আমরা অভিভাবক, শিক্ষকরা মিলে আপনার আমার সন্তানের একটা উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার জন্য সম্মিলিত চেষ্টা করি।
কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এরশাদ উদ্দিন, জেলা শিক্ষা কর্মকতা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত, জেলা সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক কাদের পলাশ, হাজী আব্দুল কাদের মোল্লা ফাতেমা বেগম ট্রাস্ট কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন কামরান, ডেফোডিল স্কুলের অধ্যক্ষ নুর খান, সময় টিভির প্রতিনিধি ফারুক আহাম্মদসহ অন্যান্যরা।
উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীগণ।
প্রতিবেদক: মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া/ ১২ আগস্ট ২০২৫