যুবলীগ কর্মীকে চাঁদাবাজি মামলায় শহরের গুয়াখোলা বাসার সামনে থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আটক করে ডিবি পুলিশ। আটকের পর তাকে নির্মমভাবে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনে তার বাম হাতের কনুইয়ের উপরিভাগ এবং বাম পা, নিতম্বে মারাত্মক জখম হয়েছে।
শাহাদাত চাঁদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দিয়া এলাকার সিরাজ হাওলাদারের ছেলে শাহাদাত সদর উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
শনিবার (১৫ জুন) পুলিশি পাহারায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাহাদতের কনুই ও নিতম্ব কালো হয়ে গেলেও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ডিবি পুলিশ বলেছে ওই দাগ অন্য কোনোভাবে হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য তাকে বেদম মারধর করেছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন শাহাদাত।
বর্তমানে তিনি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩ নম্বর বেডে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন আছেন।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দুইজন কারারক্ষীর পাহারায় কাতরাচ্ছেন শাহাদাত। শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো কালো দাগ পড়ে আছে। বিশেষ করে বাম হাতের কনুইয়ের উপরিভাগ এবং বাম পায়ে মারাত্মক জখমের চিহ্ন রয়েছে।
চিকিৎসারত অবস্থায় শাহাদাত জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ক’জন ডিবি পুলিশ তাদের গুয়াখোলাস্থ বাসার সামনে থেকে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচের তলায় ডিবি অফিসে যেতে বলে।
কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এসপি স্যারের নির্দেশ।’ আমি এসপি স্যারের কথা শুনে তাদের সাথে চলে আসি। কিন্তু তারা এসপি মহোদয়ের সাথে আমাকে সাক্ষাৎ না করিয়ে তাদের অফিসে নিয়ে বেদম প্রহার শুরু করে। তারা বলে ‘এমন মার দেবো কাউকে দেখাতে পারবি না’ বলে লাঠি দিয়ে পেছনে মারতে থাকে ওসি মোস্তফা কামাল।
শাহাদাত আরো বলেন, ‘মাটিতে উপুড় করে শুইয়ে একজন ডিবি পুলিশ পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকে আর ডিবির ওসি পেছনের অংশে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। লাঠি ভেঙ্গে যাওয়ার পর হকিস্টিক দিয়ে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে চারজন ডিবি পুলিশ আমাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডাক্তারকে শুধু হাত দেখাতে বলে। না হয় আমাকে ক্রসফায়ার করে দেবে বলে ভয় দেখায়। আমি ভয়ে ডাক্তারকে শুধু হাতের যখম দেখাই। পরদিন শুক্রবার আমাকে আদালতে হাজির করলে আদালত আমাকে জেল-হাজতে পাঠায়।’
সাহাদাতের বাবা সিরাজ হাওলাদার জানান, “পিটিয়ে পুরো পেছনের অংশ বিবর্ণ করে ফেলেছে। কনুইর উপরিভাগেও দাগ হয়ে গেছে। এমন অমানুষিক নির্যাতনের পরও তাকে চিকিৎসা না করিয়ে হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। শনিবার আদালত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। শাহাদাতের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গোবিন্দিয়া এলাকায় একটি মাছের ঝিল নিয়ে একই এলাকার জহির প্রকাশের সাথে তাদের বিরোধ রয়েছে বলে তিনি জানান।
সাহাদাতের স্ত্রী আসমা নূর বলেন, “মানুষ মানুষের ওপর এমন নির্যাতন চালাতে পারে ভাবা যায় না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। দোষী পুলিশের শাস্তি চাই।”
হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ বলেন, “সাহাদাতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার সুস্থ হতে সময় লাগবে।”
চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান এ ঘটনায় ওসি মোস্তফা কামালের বিচার দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, “ওসি মোস্তফা যে অত্যাচার করেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর যদি সঠিক বিচার না হয় তাহলে যা যা করা দরকার তা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ করবে।”
চাঁদপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান মোল্লা জানান, সাহাদাতের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দিয়ার মজিবর শেখ চাঁদাবাজির অভিযোগে সাহাদতসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটক করে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল জানান, শাহাদাতের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা রয়েছে। মামলার বাদী হচ্ছেন গোবিন্দিয়া গ্রামের মজিবুর রহমান (জহিরের ভাই)। এ মামলা ডিবির কাছে আসলে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করে।’
তিনি শাহাদাতের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, “আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি এসপি স্যারের নজরে আসায় তিনি আমাকে অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি বিষয়টি দেখছি।”
হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ বলেন, “সাহাদাতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার সুস্থ হতে সময় লাগবে।”
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ০০ পিএম, ১৮ জুন ২০১৭, রোববার
ডিএইচ