চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট –
চাঁদপুর টাইমস-এর সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে চাঁদপুরের নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় নেতা চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর পৌর বিএনপি’র সদস্য কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল বলেছেন, রাজনীতি শুধুই জনগণের সেবা প্রদানের জন্যে।
নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে জনগণের মঙ্গল সাধনই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করতে হবে। তাহলে দেশ সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে হীনমন্যতার আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজেদের দোষ-ত্রুটি নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ রাজনীতি বলতে আমরা বুঝি ত্যাগের বিষয়, সেবার বিষয়। যেমন করেছেন মওলানা ভাসানী, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তাঁরা সব সময় রাজনীতি করেছেন জনগণের কল্যাণে মহান সেবার ব্রত নিয়ে। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে তাঁরা প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। আমাদেরও কথায় ও কাজে এঁদের মতো হতে হবে।
এছাড়াও তিনি চাঁদপুর টাইমস-এর সাথে সমকালীন রাজনীতি, দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন তার অভিজ্ঞতার কথা। নিম্নে তা আগ্রহী পাঠকের জন্যে পত্রস্থ করা হলো।
চাঁদপুর টাইমস : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমাদের খুবই ভাবিয়ে তুলছে। দেশে একদিকে যেমন আইনের শাসনের খুবই অভাব তেমনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের অভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বস্তুত সরকার দেশে একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালাচ্ছে। ফলে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ- নিজেদের মধ্যে অন্তকলহ, হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে। যার ফলে দেশে শিক্ষাঙ্গন সহ সর্বক্ষেত্রে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকতো তাহলে দেশের জনগণের মধ্যে শান্তি বিরাজ করতো এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বজায় থাকতো। দেশের উন্নয়ন ঘটতো।
গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাবে আজ সারা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগ অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনে মেধাবী ছাত্রের লাশ পড়ছে। চাঁদপুরেও এর প্রভাব পড়ছে। চাঁদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কালু ভূঁইয়ার ওপর ক’দিন আগে তারই দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হামলা করে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এই পরিস্থিতি থেকে আওয়ামী লীগও ব্যতিক্রম নয়।
এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে বলা যায়, যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে, জনগণের কাছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা মন্ত্রী এমপিদের জবাবদিহীতার মনোভাব ও সুশাসন থাকে তাহলে দেশের কল্যাণ সাধিত হবে। অন্যথায় দেশের উন্নয়ন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশ সাধিত হবে না।
চাঁদপুর টাইমস : এই সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় এবং এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের করণীয় কী?
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : এই সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের ভোটে দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠন করা।
এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের করণীয় হচ্ছে সকল দল ও মতের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের এবং জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে রাজনীতিবদগণ একমত পোষণ করে জনগণের কল্যাণে সুস্থ রাজনীতি করা। তাহলেই এই সঙ্কট কেটে যাবে। অন্যথায় অসুস্থ রাজনীতি আমাদেরকে সার্বিকভাবে গ্রাস করবে।
চাঁদপুর টাইমস : সুস্থ ও অসুস্থ রাজনীতির কুফল কী?
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : সুস্থ রাজনীতি হচ্ছে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি। এটি স্বাভাবিকভাবেই ভালো ফল বয়ে আনে। আর অসুস্থ রাজনীতি হচ্ছে মানুষের মধ্যে বিভেদ, দুর্নীতি এবং নিজের স্বার্থের রাজনীতি। এসব স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কল্যাণ করে না এবং এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির কুফল বয়ে আনে।
এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের সুস্থধারার রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে দেশ এবং জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে পরিচালিত করতে হবে।
চাঁদপুর টাইমস : এক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতিবিদদের কাছে আমাদের কী প্রত্যাশা?
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : দলের রাজনীতিবিদ এবং নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে- ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে অবশ্যই দেশ বড়। এই বিবেচনা নেতা-কর্মীদের মনে সাহসিকতা তৈরি করে মাঠে-ময়দানেসহ সকল স্থানে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। তাহলেই আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে সব সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।
চাঁদপুর টাইমস : এ ক্ষেত্রে বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে আপনার কি কোনো ম্যাসেজ আছে?
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : কথায় বলে, ‘আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দল-দেশ-জাতির অধিনায়ক।’ সেক্ষেত্রে আগামী প্রজন্মকে অবশ্যই সকল ক্ষেত্রে সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং পরিকল্পিতভাবে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন প্রজন্মকে আদর্শ এবং নৈতিকতার দিক থেকে তৈরি করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ প্রবীণদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
নতুন মানেই সুন্দর, পবিত্র ও সুশৃঙ্খল। এই ধারাকে বজায় রেখে আগামী প্রজন্মকে দেশ রক্ষার কাজে এগিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে দেশ ও জাতির স্বার্থ বিবেচনার পতাকাকে সবসময় সমুন্নত রাখতে হবে।
চাঁদপুর টাইমস : চাঁদপুর পৌরসভার ৫ বছর মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন হচ্ছে না। বিষয়টি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল : যেকোনো জিনিষেরই একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। কিন্তু দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন এবং চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন প্রায় দশ বছর হয়ে গেলেও হচ্ছে না।
স্বাভাবিকভাবে যখন কোনো কিছুতে অনিয়ম হয় তখন সেখানে দুর্নীতি নিয়মকে গ্রাস করে ফেলে। তা সমাজের জন্যে খুব ক্ষতিকর।
কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল-এর পিতা মরহুম আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাফেজ কাজী। মাতার নাম ফিরোজা বেগম। বাসস্থান ষোলঘর বিটি রোড কাজী বাড়ি, ১৫ নং ওয়ার্ড, চাঁদপুর পৌরসভা। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম (পাস), বর্তমানে তিনি এলএলবিতে অধ্যয়নরত। তিনি চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁদপুর পৌর বিএনপি’র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও তিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্মানীত সদস্য, চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রদলের সভাপতি, আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক, শেরেবাংলা হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের চাঁদপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী, চাঁদপুর জেলা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, চাঁদপুর জেলা সমন্বিত ছাত্রবৃন্দ’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে মেসার্স জুয়েল এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফিরোজা হাফেজ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা, হাফেজ কাজী স্মৃতি সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, আল হেরা একাডেমি, চাঁদপুর মঞ্চ, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র চাঁদপুর, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রাম পরিষদ ২০০২-এর সভাপতি, চাঁদপুর ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিক সমিতি, বাইতুল কাদের জামে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও নাজিরপড়া সমবায় সমিতি, চাঁদপুর ফুটবল একাডেমী, অগ্নিতরুণ নাট্যসংগঠন, জামেয়া আশ্রাফিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক,
মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী সংগ্রাম কমিটি ২০০৩, আমারদেশ পাঠক মেলা চাঁদপুর জেলার আহ্বায়ক, নাজিরপাড়া ক্রীড়া চক্রের যুগ্ম সম্পাদক, আমরা ক’জন সাহিত্যপ্রেমি, উপমা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক পরিষদ, নবীন সাহিত্য পত্রিকা, বনলতা সাহিত্যপত্র’র উপদেষ্টা, আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) মহিলা মাদ্রাসার সদস্য সচিব, ছাত্র ঐক্য পরিষদ চাঁদপুর জেলা, চাঁসক বিতর্ক পরিষদ’র প্রধান সমন্বয়কারী, রেডক্রিসেন্ট চাঁদপুর ইউনিট, ডায়াবেটিক সমিতি চাঁদপুর-এর আজীবন সদস্য এবং চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী কাবের সদস্য হিসেবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মিজানুর রহমান রানা ও মুসাদ্দেক আল আকিব।
সাক্ষাতকার গ্রহণের সময় : ২৪ নভেম্বর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১০টা।