এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন “ স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরনের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। ”
সময়টা ২০১৪ সালের নভেম্বরের মাস। চাঁদপুরের তিন জন তরুণ সাংবাদিকের চোখের বারান্দায় হাঠাৎ করেই এমন একটি স্বপ্ন উঁকি দেয়। সে স্বপ্নটি তাঁদের আর ঘুমাতে দেয় না। এমএ আকিব, মিজানুর রহমান রানা এবং মো. দেলোয়ার হোসেন নামের এই তিন সাংবাদিক বিছানা থেকে পিচঢালা পথে স্বপ্নটি মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান। তাঁদের ছোঁয়াচে স্বপ্নের অসুখটি স্পর্শ করে বয়সে আরেকটু তরুণ সাংবাদিক আমাকেও।
এরপর পথে-প্রান্তরে কাজের ফাঁকে, রানা ভাইয়ের বাসা থেকে দেলোয়ার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে- মাথাগুলো এক হলেই সে স্বপ্নেন ভ্রমণটাকে ভূমিষ্ঠ করতে আলাপ- আলোচনা চলতে লাগলো। গোল টেবিলহীন এই আলোচনায় কোন সময় বা দিনক্ষণ নির্ধারণ ছিলো না। আলোচনা চলতো গভীর অবদিও।
এই স্বপ্নটি বাস্তবায়নে সবার আগে যা প্রয়োজন, সেটি হলো ষষ্ঠ আঙুল বা কলম। আশার কথা হলো, এই চারজনের ডান হাতেই একটি করে শক্তি-সামর্থ্যবান ধারালো ষষ্ঠ আঙুল আছে। তাছাড়া বুকের অন্দরে কর্মদক্ষ মনোবল, উদ্যমতা, উচ্ছ্বাস কী নেই আমাদের। হ্যাঁ একটি জিনিস নেই। এই ‘নেই’ শব্দটি তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধান ও শক্তিশালি বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেটি হলো একটি গণমাধ্যম তৈরির করার ব্যয়ের সক্ষমতা।
কারণ যে কোনো ভালো কাজেই অর্থের শক্তিটা বড় অর্থ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই মুহূর্তে একজন পৃষ্ঠপোষক বা অর্থের যোগানদাতা আমাদের বড় প্রয়োজন। কিন্ত সমস্যা হলো, আজকাল ভালোকাজে পৃষ্ঠপোষকতার মানুষ যে কমে যাচ্ছে। এই সমাজে অর্থশালী মানুষে বাড়ছে কিন্তু কমছে চিন্তাশীল মানুষ। বৃত্তবান আর বিত্তবান মানুষের ফরাকটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে চলেছে ক্রমান্বয়ে। এরইমধ্যে আকিব ভাই তার প্রিয় ক্যামেরাটা বিক্রি করে দিয়েছেন স্বপ্নপূরণে।
এ যেনো একটি স্বপ্নপূরনে আরেকটি প্রিয়র বলিদান।
হঠাৎ একদিন আকিব ভাই ও দেলোয়ার ভাইকে খুব হাসি-খুশি দেখতে পেলাম। কিছু জানতে চাইবার আগেই আকিব ভাই বললেন একটা খুশির খবর আছে, আমরা একজন বড় মনের সুন্দর চিন্তাশীল ও চিত্তবান মানুষ পেয়েছি। যিনি আমাদের স্বপ্নটাকে লালন-পালন এবং প্রতিষ্ঠিত করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিবেন। কথাটা শুনেই মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। পরে জানতে পালাম সেই চিত্তবান মানুষটির নাম কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল। সংবাদকর্মী হিসেবে এই কর্মদক্ষ মানুষটিকে অনেক আগ থেকেই আমাদের পাঠ করা ছিলো। ছাত্ররাজনীতি থেকে তিনি তিনি তখন চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমের হিতাকাংক্ষী ও সফল সংগঠক। এমন একজন মানুষ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন আমাদের সম্মিলিত স্বপ্নটির বাধাহীন নির্মল পথ চলায়! এমন সুখে নিজেকে ভাগ্যবান- ভাবাই যায়। এরই মধ্যে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন উদীয়মান তরুণ সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম ও চাঁদপুরের অনেক পুরোনো লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গনি ভাই।
এবার সবাই মিলে স্বপ্নটির একটা নাম দিলো ‘চাঁদপুর টাইমস’ অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এতো ব্যয়বহুল পরিকল্পনা নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টালটির নামের আগে চাঁদপুর কেনো থাকবে? এমন প্রশ্ন আমারো ছিলো। কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল ভাই এর মন ভেজানো চমৎকার ব্যখ্যা দিলেন এভাবে…’পৃথিবী বিখ্যাত একটি নিউজ এজেন্সি বা অনলাইন পোর্টাল ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।
নিজের শহরকে বুকে ধরে নামকরণের এই পোর্টালটি যদি গোটা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হতে পারে তবে ‘চাঁদপুর টাইমস’ কেনো নয়!। এরপর থেকে সম্পাদক ও প্রকাশক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল ভাইয়ের নেতৃত্বে, নির্বাহী সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাইয়ের ক্লান্তিহীন পরিশ্রমে এগিয়ে চলে ‘চাঁদপুর টাইমস’।
এভাবেই ২০১৪ সালের ১ডিসেম্বর শুরু হলো ‘চাঁদপুর টাইমস’ এর পথচলা। মাত্র ৫ বছরের এই পথচলায় ‘চাঁদপুর টাইমস’ জয় করেছে লাখো মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গাটি। জেলা পর্যায়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন পোর্টাল হিসেবে ‘চাঁদপুর টাইমস’
জানান দিয়েছে তার আত্মপরিচয় আর ভবিষ্যত পরিকল্পনা। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমি প্রধান প্রতিবেদক থাকলেও বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। এরই মাঝে ‘চাঁদপুর টাইমস’ পরিবারের সাথে অনেকেই যুক্ত হয়েছেন। যাদের শ্রমে-ঘামে বেড়ে উঠছে ‘চাঁদপুর টাইমস’ নামের স্বপ্নটি।
এই পথ চলায় আমাদের অর্জনের ঝুঁড়িটা কম ভারি হয়নি। যখন দেখি ‘চাঁদপুর টাইমসে সংবাদ প্রকাশ পাওয়ায় ৯ বছরের ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী মারজানার লাশ ফের কবর থেকে উত্তোলন করে হত্যার আলামত পায়, খুনিদের মুখোশ উন্মোচন হওয়ায় তারা আত্মগোপনে চলে যায়।
যখন শুনি ‘চাঁদপুর টাইমসে সংবাদ প্রকাশের পর একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে প্রবাস থেকে কেউ হুইল চেয়ার দান করে, বিচারপ্রার্থী অসহায় কোনো পরিবারের পাশে দাঁড়ায় জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি, অমানবিক ক্ষতির শিকার একজন আমড়া ওয়ালার পাশে দাঁড়ায় হাজারো মানুষ; তখন নিজের অগোচরেই একথা মুখে এসে যায়… চাঁদপুর টাইমস তুমি দীর্ঘজীবী হয়। জয় তু ‘চাঁদপুর টাইমস’।
লেখক : যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস।