‘সিটি অব হিলশা’ বাংলা সংস্করণে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ -এর রুপকার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। যিনি দায়িত্ব পালনের মাত্র এক বছরের মাথায় ‘ডিজিটাল ওয়র্ল্ড-২০১৬’ পুরস্কার পেয়ে গোটা দেশকে চমকে দিয়েছেন।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে চাঁদপুর জেলা প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি দেশসেরা জেলা প্রশাসক হিসেবে এ পুরস্কার অর্জন করেন।
তাঁর কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ গত ২১ অক্টোবর শুক্রবার ন্যাশনাল কনভেশন সিটি বসুন্ধরা সেন্টারে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক পদে কর্মরত থাকাকালিন সময়ে ২০১৫ সালের ১০ জুন তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। ২ জুলাই তিনি চাঁদপুরে যোগদান করে তিনি চাঁদপুরকে ডিজিটাল জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
তাঁর লক্ষ এবং উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে চাঁদপুরকে দেশের সেরা জেলা হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল ওয়র্ল্ড-২০১৬’ পুরস্কার’ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে উঠে আসে তার এই কৃতিত্বের গল্প।
তিনি জানান, আইসিটির মাধ্যমে যেসকল নাগরিক সেবায় তিনি দেশসেরা হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; জেলার ৮ উপজেলার ভূমি অফিসে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা। এতে করে চাঁদপুরে ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা এখন অনলাইনে দেয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ সেবা কার্যক্রম চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ২শ’ ৬৯জন সেবা গ্রহণ। ই-স্বাস্থ্যসেবা (টেলিমেডিসিন) জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা। এ পর্যন্ত ই-স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছ ৪ হাজার ৬শ’ ৪১ জন। এছাড়া জেলা প্রশাসক চাঁদপুর জেলার তিন বছরের যে উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা নিয়েছেন তাতে ৬০টি প্রতিষ্ঠানে ওয়াইফাই চালু করার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্ত এক বছরেই জেলার ১শ’ ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ওয়াইফাই আওতায় এসেছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আইসিটি শাখা সূত্র জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের ইনোভেশন (উদ্ভাবনী) সংক্রান্ত ব্যাপক কর্মসূচি ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২৪ টি শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে ২টির এবং ৪০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছ ১টি।
এছাড়া আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২০টির মতো কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শতভাগ বাস্তবায়ন হওয়া ২৪টি কার্যক্রম হচ্ছে-
-জনগণকে স্বল্প সময়ে কাঙ্খিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ‘নাগরিক সেবা সনদ প্রদান’ প্রণয়ন।
-জেলার ৮টি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর নেতৃত্বে ভূমি অফিসে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু।
-সকল মৎস চাষীর ডাটাবেইজ তৈরি, সকল সমবায়ীর ডাটাবেইজ তৈরি।
-নিত্যপণ্যের মূল্যের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন, ডিলিং লাইসেন্স।
-ইটভটা লাইসেন্স, ফার্নেস ওয়ার্ল, ভেন্ডার লাইসেন্স।
-অস্ত্রের লাইসেন্স ও হোটেল রেস্তোরাঁর লাইসেন্স সেবা অনলাইনে প্রদান।
-প্রতিটি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা উপজেলা সদরে অবস্থিত হাসপাতাল/জেলা সদরের হাসপাতাল হতে অনলাইনে/স্কাইপের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা (টেলি মেডিসিন) গ্রহণ করা।
-সকল কর্মকর্তাকে আইসিটি বান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ।
-শাখাভিত্তিক নাগরিক সনদ প্রদর্শন।
-দালালমুক্ত অফিস গঠনে প্রত্যেক শাখার সামনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছবিসহ নাম টানানো।
-কাইজেন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অফিস, সার্কিট হাউজ ও জেলা প্রশাসকের বাংলোর সমস্যা সমাধান।
-সরকার কর্তৃক ‘সিটি অব হিলশা’ বাংলা সংস্করণে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর।
-নামে চাঁদপুর জেলাকে ব্রান্ডিং করা।
-নাগরিক সেবা সনদ জেলা ওয়েব-পোর্টালে প্রকাশ করা।
-নাগরিক সেবা সনদ ডিসি অফিস চাঁদপুর ফেসবুকে প্রকাশ করা।
-চাঁদপুরের ৮টি উপজেলার ৪০৪টি স্কুলে সর্বমোট ৪৮৬টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমে পাঠদান।
-৩৭টি স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমে আইসিটি কার্যক্রম।
-৮টি উপজেলায় স্কুলসমূহে মোট ৭২টি ল্যাবে ৫৯৩টি কম্পিউটারে পাঠদান কার্যক্রম চলমান।
-বিবাহ নিবন্ধক (কাজী) ব্যতীত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের যারা বিয়ে পড়ান তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা।
-সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যারা বিয়ে পড়ান তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ২০ জন নতুন জেলা প্রশাসকগণ যাতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বেগবান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন সে জন্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তাদের নিয়োগের পরপরই চারদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
এ প্রশিক্ষণের শেষদিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকগণকে আগামী ৩ বছরের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ৭ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
যার উদ্দেশ্য ছিলো জেলা প্রশাসকগণ মাঠ প্রশাসনে আগামী ৩ বছরে কী কী কাজ করতে চান তার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা।
মুখ্য সচিবের নির্দেশনার আলোকে মো. আব্দুস সবুর মন্ডল চাঁদপুর জেলায় যোগদানের মাত্র ৭দিনের মাথায় ৯ জুলাই ২০১৫ তিন বছরের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করেন।
এসব পরিকল্পনাগুলো হলো, স্বল্প মেয়াদী (১ বছর), মধ্যম মেয়াদী (২ বছর) ও দীর্ঘ মেয়াদী (৩ বছর) ছিল। এসকল কর্মপরিকল্পনার সফলতার বাস্তবায়নে তিনি এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।