Wednesday, 01 July, 2015 11:59:06 PM
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
গেল বছরের ২৪ জুন ফয়সাল গাজী বাহারকে আহ্বায়ক ও মাসুদুর রহমান মাঝিকে যুগ্ম আহবায়ক করে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের ৮ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। শুরু থেকেই এ কমিটি নিয়ে চলছিল নানা গুঞ্জন। সমালোচনার ঝড় বইছিলো সাবেক ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে। সমালোচকদের দাবি তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক অবস্থান ও নেতাকর্মীদের মতামত আমলে না নিয়ে কেবলমাত্র ব্যক্তি বিশেষদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল বেশিমাত্রায়। যার ফলে ৮ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত হয়।
যার জের ধরে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তীব্র সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয় স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতা ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ। তৎকালীন সময়ে এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তো বহুদূরের ব্যপার দলের স্থানীয় কোনো নেতাই আমলে নেননি। তা সত্ত্বেও আশা ছাড়তে নারাজ জেলার তৃণমূল ছাত্রদল।
বরাবরের ন্যায় তৃণমূল যাদের ভূমিকায় আশান্বিত হয়ে প্রহর গুণছিলো জেলা ছাত্রদলের ঐতিহ্য উদ্ধারে এগিয়ে আসবেন এবং সঠিক নেতৃত্বের ধারায় দলটিকে ফিরিয়ে আনবেন, সর্বশেষ যখন আশার প্রদীপটুকুও নিভে যায়, তখন সেসব সাবেক ছাত্রনেতারা ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে। এসব নেতাদের অতিতকালের প্রশংসনীয় ভুমিকার বর্তমান রূপ দেখে তৃণমূল থেকে প্রশ্ন ওঠে, এক সময়ে নব্বইয়ের গণ আন্দলনসহ তৎকালীন সময়ে চাঁদপুরে বিভিন্ন আন্দলন সংগ্রামে এসব তেজষ¦ী ও আপসহীন ছাত্রনেতাদের সাহসী ভুমিকাতেই উজ্জিবীত হতো জেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তবে কী আজ স্থানীয় বিশেষ ব্যক্তিদের আধিপত্যের কাছে মাথা নত করে দলীয় পদ-পদবী রক্ষায় মুখে আগল টেনে রেখেছে সেসব ত্যগী নেতারা? অদ্যবধি এসব প্রশ্নের জবাব মেলাতে পারেনি দলের কোনো নেতা-কর্মী।
ফলে দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক বহুল সমালোচিত আহ্বায়ক কমিটির (তিন মাসের) নির্ধারিত মেয়াদ পার হলেও আজও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এতে দলের মধ্যে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। চলতি বছরের ২৩ জুন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলে বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ এনে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুল আলম সূর্য ও কামরুজ্জামান হাসনাতকে শোকজ করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি।
শোকজপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান হাসানাত ও শামছুল আলম সূর্য কারণ দর্শানোর চিঠির জবাব ইতোমধ্যে দিয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে চাঁদপুরে ছাত্রদল কমিটিতে বিভাজনের বিষয়ে দলীয় একাধিক সূত্র থেকে সত্যতা পাওয়া গেছে। বিভাজনের প্রভাব শুধু যে জাতীয়তাবাদী শক্তির কান্ডারী ছাত্রদল কমিিিটতেই সীমাবদ্ধ, এমনটি ভাবার কোন অবকাশ নেই। চাঁদপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝেও এর প্রভাব বিরাজমান।
নির্ভরযোগ্য অপর এক সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের সাবেক সংসদ সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী একাধিক নেতা নিজেদের দলীয় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করার নেপথ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। তাই মূলদলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের স্বার্থসিদ্ধির আশীর্বাদপুষ্ট জেলা ছাত্রদল কমিটি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
জেলা ছাত্রদলে বিভাজনের নেপথ্যের কারিগররা যতই আড়ালে ও নিরাপদ দূরত্ব রেখে কলকাঠি নাড়ার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কর্মীদের চোখে তাদের স্বার্থ সিদ্ধির রূপ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারন দর্শানো বিষয়ে অভিযুক্ত ও শোকজপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়কগণের কাছে জানতে চাইলে তারা জেলা বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিকে অপব্যবহার করে আমাদের দু’জনকে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কথা বলা হলেও, কি ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোন বিবরণ দেয়া হয় নি। শুধুমাত্র প্রেরিত নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বয়াক মাসুদ মাঝি বলেন, ‘ব্যাক্তিগত পর্যায়ে আমি চাই না কেউ দল থেকে মাইনাস হোক, তবে শোকজের বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেত্ববৃন্দই ভাল জানেন, কেন তারা তাদেরকে শোকজ করেছেন।’
স্থানীয় ব্যাক্তি বিশেষদের ইন্ধনে শোকজ করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজস্ব কিছু লোক প্রতি জেলাতেই থাকে। সুতরাং তারা কার মাধ্যমে গ্রুপিং বিষয়ে তদারকি করেছেন বা জেনেছেন বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারাই ভালো বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফয়সাল গাজী বাহার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘তাদেরকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। তবে আমি যতটুকো জানি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গ্রুপিংয়ের অভিযোগে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নে নির্ধারিত সময় ফেরিয়ে গেলেও কাউন্সিল না হওয়ার বিষয়ে এ নেতা জানান, ‘বিগত দিনের দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মামলাজনিত কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় সময়মতো কাউন্সিলটি করা সম্ভব হয় নি। তবে অচিরেই কাউন্সিল করে পূর্নাঙ্গ কমিটির প্রস্তুতি নেয় হবে।’
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ছাত্র সংগঠন, ছাত্রদলের রাজনৈতিক ঐতিহ্যে হারিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যক্তিগত স্বার্থে দলকে ব্যবহার, বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে আধিপত্য বিস্তার করার প্রবণতা, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সকলস্তরে অভিজ্ঞদের কমিটিতে দ্বায়িত্বশীল পদে না রেখে অবমূল্যায়ন করাতেই দলটিতে বর্তমানে এমন জটলা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা ও সমন্বয়হীনতাসহ নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের উল্লেখিত কারণ সমূহের বাস্তবতা ও এ থেকে উত্তরণের উপায় জানতে, জেলা বিএনপি, ছাত্রদল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক সাবেক ও বর্তমান নেতার সাথে মুঠো ফোনে আলাপ হয়। আলাপকালে বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেইসাথে রয়েছে চমকপ্রদ নানা অজানা তথ্য ……. ( চলবে )।
চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের গ্রুপিং নেপথ্যে কারা? ক্লিক করে ২য় পর্ব পড়ুন
চাঁদপুর টাইমস/স্পেশাল-এমএএ/এএস/ডিএইচ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।