চাঁদপুর

‘কোনো অবস্থাতেই শিক্ষকরা কেন্দ্রে স্মার্ট ফোন নিয়ে যেতে পারবে না’

চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের সভাপতিত্বে শুরুতেই বিগত সভার কার্যবিবরণী, সিদ্ধান্ত পাঠ এবং এর অগ্রগতি তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা আক্তার।

পরে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে জেলার আইন-শৃঙ্খলার বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম, নৌ- পুলিশ সুপার সুব্রত হালদার, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেল তত্ত¡াবধায়ক ডা. হোসনে আরা বেগম, চাঁদপুর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, সরকারি মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ প্রফের এমএ মতিন মিয়া, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধ ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাহাঙ্গির আখন্দ সেলিম।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, চলতি মাসটি চাঁদপুর জেলার আইনশৃঙ্খলা জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে এসএসসি পরীক্ষা চলছে আর অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রায়কে ঘিয়ে দেশবাসী নানা উৎকণ্ঠায় মধ্যে রয়েছে। এর পাশাপাশি হাইমচরে স্কাউটের আয়োজনে মাননীয় প্রধামন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে আমাদের ব্যপক প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে জেলা সকল পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা কর্মীদের প্রচন্ড রকমে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে।

আমি চাঁদপুরের প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এ কারণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এখনো পর্যন্ত এই জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের যে কোনো জেলার চাইতে ভালো রয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে এখানকার রাজনীতিক নেতৃবৃন্দসহ সকল মানুষের সহযোগিতার কারণে।

তিনি বলেন, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় এখানে দু’একটি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। আর অনিয়মের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের এমপিও বালিতের জন্য আমরা মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠাবো। এখন থেকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া শিক্ষকরাও কেন্দ্রে স্মার্ট ফোন নিয়ে যেতে পারবে না। এখন থেকে আর এ বিষয়ে কোনো বিবেচনা বা ছাড় নয়।

টাক্টর ও লাইসেন্স বিহীন ইটভাটার বিষয়ে তিনি বলেন, লাইসেন্স বিহীন একটি ইটভাটা চলতে দেয়া যাবে না। স্ব-স্ব উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তাগণ আবারো এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া গেলো। টাক্টরের বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। চাঁদপুরে টাক্টর নিষিদ্ধ রয়েছে তা কোনো অবস্থাতেই চলতে দেয়া হবে না।

চাঁদপুর ইচুলী লঞ্চঘাটের বিষয়ে তিনি বলেন, শহরের জানযট কমাতে ইচলী লঞ্চঘাট আবারো চালু করতে হবে। যে লঞ্চের ইচলী ঘাটে যাওয়র কথা রয়েছে সেগুলো অবশ্যই ইচলী যাবে। নয়তো লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সরকারের কর্মচারি। তাই সরকারি যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আমাদের যতোটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন ততটাই কঠোর হবে।

জেলা প্রাইভেট ক্লিনিট ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরে লাইসেন্স ছাড়া যতগুলো প্রাইভেট ক্লিনিট ডায়াগন্টিক সেন্টার রয়েছে তার তালিকা করতে হবে। তাদের অনিয়মের বিষয়টি নজরে এনে খতিয়ে দেখতে হবে। প্রতিটি প্রাইভেট ক্লিনিট ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন টেস্টের মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। আর শহরের যানজট কমিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আজকে যে আলোচনাগুলো হয়েছে তার ফলাফল আমরা দেখতে চাই। আমরা শুধুমাত্র আলোচনার মধ্যেই সিমাদ্ধ থাকতে চাই না। বাস্তবে এর প্রতিফল দেখতে চাই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিয়ে মানুষের মাঝে যে উৎকণ্ঠা বা ভয়ভিতী ছিলো তা কিছুটা হলেও কমে এসছে। এ ক্ষেত্রে জেলা সকল শ্রেণির মানুষ আমাদের সহযোগিতা করেছে। এজন্য আমি চাঁদপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছরটি নির্বাচনের বছর। নির্বাচনের সময়ে দেশের প্রতিটি রাজনীতিক দল তাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। আমাদের কাজ হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। তাই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা কিছু করার দরকার আমরা তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়াকে থামিয়ে দিতে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই এই শান্তি বিনষ্ট করা যাবে না। এজন্য প্রশাসনের সতর্ক থাকার জন্য আমি অনুরোধ করছি।

জেলা আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, চাঁদপুর হাইমচের স্কাউটের অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসবেন। তার এই আগমনে চাঁদপুরের অনেক উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তার আগমনের বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই হালকা করে দেখা যাবে না।

সভায় অন্যানের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, সদর মডেল থানার ওসি ওয়ালি উল্যাহ অলি, জেলা শিক্ষা অফিসার ইউনুস ফারুকী, চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র নতুন বাজার শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ইকবাল, সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত, চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার মো. ফরহাদ উদ্দিন, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়–য়া, মতলব উত্তর নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, মতলব দক্ষিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ।

প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০ : ৫৫ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রোববার
এইউ

Share