চাঁদপুর

চাঁদপুর জেলায় দেড় শতাধিক ডাকঘরের নেই কোনো ঘর

চাঁদপুর কার্যালয়ের অধীনে ৯৮টি, হাজীগঞ্জের অধীনে ১০১টি ডাকঘর রয়েছে। এমরধ্য চাঁদপুর জেলায় দেড় শতাধিক ডাকঘরের নেই কোনো ঘর । কার্যক্রম চলছে বাসস্থান, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও বেতন-ভাতা সহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে পোস্টমাস্টারগণ দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে আসছে। জেলায় ১৯৯টি ডাকঘরে কার্যক্রম চলছে।

চাঁদপুর জেলা ডাক বিভাগের পরিদর্শক কাঞ্চন সাহা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, পোস্ট অফিসের শাখা অফিস গুলোতে কেউ তিন শতাংশ সম্পত্তি অনুদান দিলেই আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে থাকি। বিষয়টি কুমিল্লা আঞ্চলিক পোস্ট অফিস তদারকি করছেন।

চাঁদপুর পোস্ট অফিসের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি চাঁদপুর সদর শাখা ও অন্যটি হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখা। দুইটি কার্যালয় থেকে উপ-শাখাগুলো পরিচালিত হয়। চাঁদপুরের ৯৮টি ও হাজীগঞ্জে ১০১টি ডাকঘর পরিচালিত হয়ে আসছে। যেমন হাজীগঞ্জ কার্যালয়ের অধীনে হাজীগঞ্জ শাখার মাধ্যমে ১৬টি ডাকঘর, বলাখাল শাখার মাধ্যমে ১৩টি ও কচুয়া শাখার মাধ্যমে ১৩টি ডাকঘর পরিচালিত হয়। ওইসব ডাকঘরগুলো অধিকাংশের নির্দিষ্ট কার্যালয় নেই। পোস্ট মাস্টারগণ নিজ বাসস্থান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ফেরারী হয়ে, সরকারী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সরেজমিনে কচুয়া-হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী রঘুনাথপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ডাকঘরটি অকেজো হয়ে রয়েছে। তবে সেখানে একজন পোস্টমাস্টার, পোস্টম্যান ও রানার নিযুক্ত আছে।

রঘুনাথপুর বাজার ডাকঘরে পোস্টম্যান হিসেবে ত্রিশ বছর দায়িত্ব পালন করছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, একটা ইন্টারভিউ কার্ড আসলে খুব কষ্ট পাই। ঠিকমতো পৌঁছাতে পারিনা। রঘুনাথপুর বাজারে দ্রুত ডাকঘরের নির্দিষ্ট কার্যালয় হলে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হবে। এই ডাকঘরে ১৭টি গ্রামের মানুষের চিঠিপত্র, মামলা-মোকাদ্দমার কাগজপত্র আসে।

রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, রঘুনাথপুর বাজারটি খুবই জনবহুল একটি বাজার। এখানে পোস্ট অফিসের অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরী প্রয়োজন।

রঘুনাথপুর ডাকঘরের অধীনে কচুয়া উপজেলার কাদলা, দেবীপুর, বরৈগাঁও, মুরাদপুর, নোয়ার্দ্দা, তেগুরিয়া, শাশনখোলা, আয়মা, হাজীগঞ্জ উপজেলার তারাপাল্লা, ফিরোজপুর, সাতবাড়িয়া, নিশ্চিন্তপুর, মহব্বতপুর, সিহিরচোঁ গ্রামের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

হাজীগঞ্জ শাখার অধীনে রয়েছে টঙ্গীরপাড়, বলিয়া বাজার, ধড্ডা, পাতানিশ, কালচোঁ, সুহিলপুর, আলীগঞ্জ, উয়ারুক, আহাম্মদপুর, বড়কুল, পালিশারা, কাশিমপুর, সেন্দ্রা, ঘনিয়া, মনতলা, চৌধুরী বাজার প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে ৩নং কালচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানীয়া চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ডাকঘরের জন্য স্থায়ী সম্পত্তি না থাকায় ভবন করা যাচ্ছে না। রঘুনাথপুরের ডাকঘরটি ব্রিটিশ আমলের ডাকঘর। এই ডাকঘর পুনরায় সচল করা প্রয়োজন।

গ্রামাঞ্চলের ডাকঘরগুলোতে ঘর না থাকা প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার আবুল বাসার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ডাকঘরগুলোর ঘর নাই। রঘুনাথপুরের মতোই জেলার অধিকাংশ ডাকঘরের ঘর নাই। ডিজিটাল ডাকঘরের ডিজিটাল কার্যক্রম পরিচালিত করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন করা খুবই জরুরী দরকার।

কচুয়া শাখার দায়িত্বরত পোস্ট মাস্টার আব্দুল ওয়াদুদ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ডাকঘর গুলো অবকাঠামো উন্নয়নে স্থানীয়দের ভূমিকা নিতে হয়।

হাজীগঞ্জ কার্যালয়ের পোস্ট মাস্টার কেফায়েত উল্লাহ ও সহকারী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, বিশেষ করে সরকারি পরীক্ষার খাতা- পত্র গুলো সরবরাহের কার্যক্রম বেশি চলছে। এছাড়াও ডাক সঞ্চয় ও অর্থ লেনদেন হচ্ছে। তবে বিভিন্ন শাখা ডাকঘর গুলো অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন। তাহলে জনগণের সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ পোস্টাল ইডি কর্মচারী ইউনিয়ন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি এ বিএম হানিফ মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বেতন বৃদ্ধি ও উৎসব ভাতার দাবির পাশাপাশি গ্রামীণ ডাক ব্যবস্থার উন্নয়নে আন্দোলন করে আসছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের বরাবর দশ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছি।

প্রতিবেদক : মনিরুজ্জামান বাবলু, ২ মার্চ ২০২০

Share