বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উৎস হিসেবে বিদেশ ফেরতদের চিহ্নিত করা হলেও চাঁদপুর জেলায় আসা ৫ সহস্রাধিক প্রবাসীর একজনেরও করোনা শনাক্ত হয়নি। স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বদ্ধমূল ধারণা, বাংলাদেশে করোনার হটস্পট খ্যাত নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা আক্রান্তদের মাধ্যমেই চাঁদপুর জেলায় করোনার সংক্রমণ ও বিস্তৃতি ঘটেছে। আগত আক্রান্তদের কারো উপসর্গ ছিল, কারো ছিল না। তবে ওই দু’টি জেলার মানুষ প্রধানত প্রবাসীদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে সবার নজর ছিল বিদেশ ফেরত লোকদের ওপর। কারণটিও ছিল যৌক্তিক। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষণা ও তথ্য অনুযায়ী, বিদেশ ফেরত লোকদের মাধ্যমেই বাংলাদেশসহ দেশে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার ঘটেছে। এ হেতু শুরুর দিকে বিদেশ ফেরত মানুষ নিয়ে ভয়, আতঙ্ক ও সতর্কতা ছিল লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে চীন, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপ ফেরত প্রবাসী হলে তো কথাই ছিল না! কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণের দুই মাস এবং চাঁদপুরে প্রথম শনাক্তের এক মাস পরও জেলায় কোনো প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হননি।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের মাধ্যমে দেশে প্রবাস থেকে লোক আসা বন্ধ হয়েছে বহু আগে। যারা এসেছেন তাদেরও হোম কোয়ারেন্টাইন অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী, বিদেশ ফেরত লোক টানা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকলে এবং তার মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে কিংবা তিনি আক্রান্ত না হলে এরপর তাকে ঝুঁকিমুক্ত মনে করা হয়ে থাকে। চাঁদপুরের বিদেশ প্রত্যাগত মানুষের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে গত ১০ এপ্রিল।
চাঁদপুরে এ পর্যন্ত যে ৪জন করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় মারা গেছেন বলেন শনাক্ত হয়েছেন তাদের একজন ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ফেরত। বাকী ৩জনের প্রবাসী/অন্য জেলার লোকের সংস্পর্শে আসার কেইস স্টোরি নেই।
একইভাবে আক্রান্তদের একাংশ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত, কিছু অংশ স্থানীয় শনাক্তদের সংস্পর্শে আসা আর বাকীদের আক্রান্ত হওয়ার কেইস স্টোরি এখনো অজ্ঞাত। ফলে অজ্ঞাত কারণে আক্রান্ত শনাক্ত এসব লোক বিদেশ প্রত্যাগতদের মাধ্যমে নাকি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন তা গবেষণার দাবি রাখে। একই সাথে বর্তমানে চাঁদপুরে যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে এটিতে কাদের ভূমিকা বেশি তাও খুঁজে বের করা সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রেও স্থানীয় চিকিৎসকরা ধারণা, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ফেরতদের মাধ্যমে চাঁদপুরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও শুরু হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, গত ১ মার্চ থেকে চাঁদপুর জেলায় বিদেশ প্রত্যাগত লোকের সংখ্যা ৫ হাজার ১৪৬জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ১০৮জনের ঠিকানা ও অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন বলছে, এদের সবার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে।
চাঁদপুর স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী জেলায় এখন (৬ মে) পর্যন্ত মোট শনাক্তকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা ২৮। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ১৩জন, ফরিদগঞ্জে ৬জন, হাজীগঞ্জে ৪জন, মতলব উত্তরে ৩জন, হাইমচরে ২জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪জন মৃত এবং ১০জন ইতিমধ্যে ১০ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
জেলায় শনাক্ত হওয়া প্রথম ৩জন এবং এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ফেরত। চট্টগ্রাম ফেরতও ১জন রয়েছেন। প্রথম আক্রান্ত শনাক্তের পর থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকদের তালিকা করে তাদের যথাসম্ভব হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা প্রশাসনের হিসেবে, গতকাল ৬ মে পর্যন্ত ভিন জেলা থেকে আগত লোকের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬১২জন।
যদিও একটি বিষয় এখানে বিবেচ্য যে, চাঁদপুরে করোনা সংক্রমণের শুরুতে বিদেশ ফেরত প্রচুর লোক আসলেও তখন নমুনা পরীক্ষার হার ছিল একেবারেই নগণ্য। মার্চের শুরু থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় মাত্র ২জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাও সেই দু’জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের আসার পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন ইতালি ফেরত ছিলেন। তাদের দু’জনের রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছিল।
তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- বিদেশ প্রত্যাগতরা কি সত্যিই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন? থাকলে শনাক্ত হননি বা হচ্ছেন না কেন? তারা শনাক্ত না হয়েও কি অন্যদের মাঝে তা সংক্রমিত করেছেন। চাঁদপুরে বর্তমানে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তাদের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে নাকি বিদেশ ফেরত কেউ’ই করোনায় উপসর্গ বহন করে দেশে ফেরেননি? চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কি ভাবছেন জেলায় করোনা সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে। এ নিয়ে অনুসন্ধানকালে চাঁদপুরের সিংহভাগ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে উত্তর খুঁজেছেন এ প্রতিবেদক।
চাঁদপুরে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্য করোনা রোগী শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় কাজ করেছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি জানান, সদর হাসপাতালে এখনো কোনো প্রবাসী উপসর্গ বা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেননি। তার ধারণা, চাঁদপুরে কোনো প্রবাস ফেরত লোক করোনায় আক্রান্ত হননি এবং তাদের মাধ্যমে এখানে করোনার সংক্রমণও হয়নি। করোনা বিষয়ে চাঁদপুরের প্রথম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক মনে করেন, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা লোকজনের মাধ্যমে চাঁদপুরে করোনার সংক্রমণ। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও শুরু হয়েছে তাদের মাধ্যমে।
চাঁদপুরে এ পর্যন্ত সর্বাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলায়। এখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম পলিন জানান, সদরে শনাক্তকৃত ১৩জনের একজনও প্রবাসী ও প্রবাসীর সংস্পর্শে আসা রোগী নেই। তিনি মনে করেন, প্রবাসীদের মাধ্যমে নয়, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ফেরত লোকদের মাধ্যমে চাঁদপুরে করোনার সংক্রমণ। সদরে মারা যাওয়া করোনা আক্রান্ত লোকটিও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। করোনা বিষয়ে চাঁদপুরের প্রথম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক মনে করেন, চাঁদপুরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হলেও এখনো তা সর্বত্র নয়, কিছু কিছু জায়গায় ছড়িয়েছে।
জেলার সবচেয়ে বেশি প্রবাসী অধ্যুষিত ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া উপজেলা ফরিদগঞ্জ। সেখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশ্রাফ আহমেদ চৌধুরীও জেলায় করোনা সংক্রমণের জন্য প্রবাস ফেরতদের উৎস হিসেবে মনে করেন না। তার মতে, নারায়ণঞ্জ ও ঢাকা ফেরত লোকজন সংক্রমণের প্রধান কারণ। জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন জরিপ, কর্মশালা, সেমিনার ও অনুসন্ধানী কার্যক্রমের সাথে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত এই কর্মকর্তা মনে করেন, ব্যাপক ভিত্তিতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা গেলে সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেত। ফরিদগঞ্জে মারা যাওয়া বৃদ্ধ ও কিশোরী মৃত্যুর আগে প্রবাসী এমনকি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের কারো সংস্পর্শেও আসার কেইস হিস্ট্রি নেই। যে কারণে তার ধারণা, ভেতর ভেতর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে।
চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া মতলব উত্তর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন মনে করেন, তার এলাকায় প্রবাসীদের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ঘটেনি। অদূরবর্তী নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা লোকেদের মাধ্যমেই এখানে করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার শুরু। তিনি জানান, তার উপজেলায় শনাক্তকৃত ৩জনের দু’জন নারায়ণগঞ্জ ফেরত এবং অপরজন তাদের চিকিৎসা করতে যেয়ে আক্রান্ত হওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক। সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও আছে বলে ধারণা তার। এই উপজেলায় প্রথম ইতালি ফেরত এক বৃদ্ধ অসুস্থ হলে করোনা সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করে তাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। তবে নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসে করোনা নেগেটিভ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোয়েব আহম্মেদ চিশতী অবশ্য তার উপজেলায় আক্রান্তের উৎস নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে একজন ঢাকা ও চট্টগ্রাম ফেরত। ইউএনও এবং অন্যজন প্রবাসী বা ভিন্ন জেলা থেকে আসা কারো সংস্পর্শে থাকার হিস্ট্র্রি নেই। তাই তাকেও ভাবাচ্ছে, ওই দু’জন আক্রান্ত হওয়ার উৎস কি? তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও বুঝতে পারছি না সংক্রমণের উৎস কি।’
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের এখানে কোনো প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়নি। শনাক্তকৃত ২জনের ১জন ঢাকা ফেরত অন্যজন ফরিদগঞ্জ ফেরত। ধারণা করা হচ্ছে, এরা অন্য রোগী থেকে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলার শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চাঁদপুর জেলায় কোনো প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হননি। এমনকি তাদের দ্বারা একজনও সংক্রমণের প্রমাণ মিলেনি। প্রবাসীদের আক্রান্ত ও সংক্রমণের সময়সীমাও অনেক আগে পেরিয়ে গেছে। মূলত নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ফেরতদের মাধ্যমেই চাঁদপুরে করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার ঘটেছে। এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছি আমরা। বিশেষ করে উপসর্গহীন আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঝুঁকির সবচেয়ে বড় কারণ। করোনা থেকে রক্ষায় সবাইকে ঘরের বাইরে থাকা অবস্থায় মাস্ক পড়া ও ৬ ফিট দূরত্বে থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আমরাই প্রথম চাঁদপুরে বিদেশ প্রত্যাগতদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেছি। যার সুফলও আমরা ভালোভাবে পেয়েছি। আল্লাহ’র রহমতে চাঁদপুরে কোনো প্রবাস ফেরত লোক করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়নি। কোনো প্রবাসী উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ বা মারা যাওয়ার খবরও মিলেনি। কিন্তু ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ লকডাউন করার পর সেখান থেকে পালিয়ে আসা কিছু লোকের মাধ্যমেই চাঁদপুরে করোনার সংক্রমণ হয়েছে। তবে আশপাশের জেলার তুলনায় চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বস্তিদায়ক।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, চাঁদপুরে বিদেশ প্রত্যাগতরা হয়তো করোনার উপসর্গে তেমনভাবে আক্রান্ত ছিলেন না। আর কেউ আক্রান্ত হলেও নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে ভালো হয়ে থাকতে পারেন। কোয়ারেন্টাইন মানাও অনেকের ভালো থাকার কারণ হতে পারে। আবার কিছু লোক আক্রান্ত থেকে ভালো হয়ে অগোচরে অন্যের মধ্যে তা ছড়িয়ে থাকতেও পারেন। তবে বিদেশীরা যে ব্যাপক হারে আক্রান্ত ছিলেন না এবং ব্যাপকভাবে এর সংক্রমণের জন্য দায়ী নন বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি’ই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে প্রবাসের যেসব দেশে চাঁদপুরের প্রবাসী সর্বাধিক সেসব দেশেও খবর নিয়ে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি ও সিঙ্গাপুর ছাড়া অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশী আক্রান্তের সংখ্যা এখনো তুলনামূলক অনেক কম। খোদ ইতালিতেই বাংলাদেশী আক্রান্তের হার খুব কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইতালি প্রবাসী জানান, মার্চের মধ্যভাগে পূর্ব নির্ধারিত পারিবারিক পরিকল্পনায় দেশে ফিরেন তিনি। ঢাকায় টানা ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে এলাকায় ফেরার পর মানুষ তার দিকে এতটা ঘৃণা-সংশয়-সন্দেহভরা আড়চোখে তাকাতো যে, মাঝে মাঝে তার মনে হতো এদেশে প্রবাসীর চেয়ে বড় অপরাধী আর কেউ নেই। সবাই এড়িয়ে চলতো। এমনকি স্বজনদের অনেকেও এড়িয়ে চলতো। কারো কারো ভাবখানা এমন যে, মোবাইলে তার সাথে কথা বললেও বুঝি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবেন! অথচ এর আগে প্রতিবছর দেশে আসার পরের চিত্র ছিল শতভাগ উল্টো।
করোনা ঠেকাতে চাঁদপুর জেলাবাসী প্রবাসীদের বিষয়ে যতটা সতর্ক ও সচেতন ছিলেন সে তুলনা অনেকটাই উদাসীন ছিলেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের নিয়ে। এই অসতর্কতা ও অসচেতনতায় চাঁদপুরেও দিনে দিনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ করোনা সংক্রমণে দায়ী না হয়েও চাঁদপুরে আসা অনেক রেমিটেন্সযোদ্ধাকে চরমভাবে বিপর্যস্ত, বিব্রত, লজ্জিত ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নিজ বাসা-বাড়িতেও প্রবেশে বাধা পেয়েছেন অনেকে। অনেকের মনে তা এমনভাবে দাগ কেটেছে যে বাকী জীবনেও তা ভুলতে পারবেন না তারা। ইতালি প্রবাসী এমন এক ব্যক্তি তো বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবাসে ফেরত যেয়ে পণ করেছেন, এ দেশে আর নয়! (প্রতিবেদন তৈরি করেছেন : রহিম বাদশা, সহ-সভাপতি চাঁদপুর প্রেসক্লাব)
বার্তা কক্ষ, ৭ মে ২০২০