শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুর জেলার ৬৮৬ কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপন

করোনা দুর্যোগের কারণে সরকারি নির্দেশে দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষা উদ্যোগতাদের পরিচালিত কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীগণ। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চাঁদপুর জেলার ৬৮৬ কিন্ডারগার্টেনের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীগণ মানবেতর জীবন করছেন।

এ সকল শিক্ষকদের পরিবারে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় চলা এসব শিক্ষকদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ফলে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

জেলার কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় ৬৮৬ কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী
১ লক্ষ ২৬ হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। স্বল্প বেতনের টাকা দিয়ে আর প্রাইভেট টিউশনের ফি দিয়ে চলত শিক্ষকদের অস্বচ্ছল পরিবারের ভরণপোষণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন যেমন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে প্রাইভেট টিউশন। ফলে কোনোদিক দিয়েও তারা উপার্জন করতে পারছে না। চক্ষু লজ্জার ভয়ে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতেও পারছেন না। পারছেন না মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে।

লজ্জা আর সামাজিক হেনস্থার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সকল প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষক কান্না জড়িত কণ্ঠে যা বল্লেন,তার মূল অর্থ হলো, কেজি স্কুলের শিক্ষকতা আর প্রাইভেট পড়িয়ে কোনোরকম পরিবার নিয়ে চলতাম। এমনিতেই বেতন পাই না, তার উপর করোনায় টিউশনি বন্ধ। পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহার এবং অনাহারে চরম বিপাকে রয়েছি। আমরা শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিয়েছি তাই তেমন কোন কাজ কর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই।তার পরও আমাদের কিছু সংখ্যক কর্মচারীরা রাতের আঁধারে অটোরিক্সা চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি এবং চাঁদপুর সদর মর্ডান শিশু একাডেমির অধ্যক্ষ ওমর ফারুক বলেন,প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দশ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দিয়ে তিন বেলা আহারের ব্যাবস্থা করে যে উদারতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। অত্যন্ত বিনয়ের সহিত বলছি বেসরকারি কেজি স্কুলের শিক্ষকরা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের থেকেও খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কোনো বেতন দিচ্ছে না। ওরা বেতন না দিলে তো শিক্ষকদেরও বেতন দেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া কেজি স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। এ দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে।

তবে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার প্রচেষ্টায় হাজীগঞ্জ উপজেলা এবং মতলব ঊত্তর উপজেলা ব্যতিত বাকী উপজেলা গুলোর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের করোনা কালীন সময়ে জেলা সদরে একবার ২০ কেজি চাল এবং উপজেলা সদরে ১০ কেজি চাল বরাদ্ধ নিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস ছিলো প্রতি মাসে নিয়মিত কিছু টাকাটা বরাদ্ধ পাবো কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি তাই নিজেদের কর্মফল মনে করে নিরব দুর্ভিক্ষকে আমরা মেনেনিয়েছি। একমাত্র আল্লাহই জানেন আমাদের ভাগ্যে কি আছে। তার পরও সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাছিনার নেক দৃষ্টি কামনা করছি।

এছাড়া বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রামচঁন্দ্রপুর গ্রামিণ ইনটারন্যাশানাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সবুজ ভদ্র বলেন,বাংলাদেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরকরতে এবং সরকারের শতভাগ শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখতে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনগুলো বিশাল ভুমিকা রাখছে।

তাই কিন্ডারগার্টেনগুলো এবং তাদের শিক্ষকদের বাঁচিয়ে রাখলে সরকারের লোকশান হবেনা বরং লাভই হবে ।তিনি শুধু চাঁদপুর জেলার একটি পরি সংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এ জেলায় ৬৮৬ কেজি স্কুলে ১লক্ষ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে প্রতি স্কুলে ৩’শ ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সরকারের আরো ৫’শ স্কুল স্থাপন করতে হবে এবং প্রায় দু’হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। যার ব্যয়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। সে বিশাল অংকের ব্যয় থেকে সরকারকে যেহেতু বেসরকারি কেজি স্কুলের উদ্যোগতারা সহযোগিতা করে আসছে,তাই আমি মনে করি সরকারের দায়িত্ব করোনাকালীন

এ সময়ে আমাদের পাশে থাকা। সরকার প্রধান মানবতার মা বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের শেষ ভরসার স্থল মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিতে আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

করেসপন্ডেট,১ অক্টোবর ২০২০

Share