‘চাঁদপুর জেলার বিচারিক সেবাকে আরো গতিশীল করা হবে’

চাঁদপুরের জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আইনজীবী, চিকিৎসক এবং পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে চাঁদপুর জেলার বিচারিক সেবাকে আরও গতিশীল করা হবে। চাঁদপুর জেলার বিচার ব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী করা হবে। বিচারিক সেবাকে বিচারপ্রার্থী জনগণের দৌরগোড়ায় পৌছে দেয়া হবে।’

শনিবার সকালে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিভিল রুলস এন্ড অর্ডার এর বিধান ত্রৈমাসিক এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা ও দায়রা জজ এক্ষেত্রে জেলার এ্যাডভোকেট, চিকিৎসক, পুলিশ প্রশাসন, গণপুর্ত বিভাগ এবং কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি আরও বলেন, বিচার প্রশাসন পরিচালনা অর্থাৎ বিচারের ভার বিচারকদের উপর ন্যস্ত হলেও এর সাথে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যেমন পুলিশ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, গণপুর্ত বিভাগ, কারা কর্তৃপক্ষ এবং আইনজীবীগণ সরাসরি সম্পৃক্ত। ন্যয় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ, স্বাস্থ্য, গণপুর্ত ও কারা কর্তৃপক্ষের উপর বিচার বিভাগকে প্রতিনিয়ত নির্ভর করতে হয়। প্রত্যেকে নিজস্ব অবস্থানে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে বিচার ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে এবং মামলা নিষ্পত্তির হার আরও বৃদ্ধি পাবে। চাঁদপুরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন ভবন নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। তিনি তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে আরও বলেন, দেওয়ানী আদালতসমূহে পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার জন্য উপস্থিত বিচারকদের নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে তিনি উপস্থিত আইনজীবীগণকে সর্বাতœক সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষী হাজিরকরণের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে এ বিষয়ে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মামুনুর রশীদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিয়ে পরষ্পরের মাঝে আলোচনা করা যাতে ভুল ভ্রান্তি দূর হয়। তিনি শিশু আদালতের বিচারক হিসেবে শিশু আইন, ২০১৩ এর কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী আলোচনা করেন। ফৌজদারী মামলায় জখমী সনদ এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিষয়ে ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরেন।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতোয়ার রহমান তার বক্তব্যে বলেন, এ্যডভোকেট, পুলিশ প্রশাসন, চিকিৎসক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা নিয়ে চাঁদপুরের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকারভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিচারক সংকট এবং এজলাশ সংকট থাকা সত্ত্বেও বিগত বছরে চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে ১১,২০০মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং দায়ের হয়েছে ১১,৪০০ মামলা। নতুন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন না হওয়া পর্যন্ত আপাতত সমাধান হিসেবে তিনি বিদ্যমান কাঠামোতে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আদালত প্রাঙ্গনের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর তিনি মামলার তদন্ত বিষয়ে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, আদালত প্রাঙ্গন এবং বিচারকবৃন্দের নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এ বিষয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

তিনি বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি আলোচনা হয়েছে সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যডভোকেট মোঃ মজিবুর রহমান ভূইয়া চাঁদপুর জেলায় বার ও বেঞ্চের সুসম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

মেডিকেল সার্টিফিকের্ট এর ভাষা যাতে আরো সহজ ও প্রঞ্জল হয় সে বিষয়ে সিভিল সার্জনের প্রতিনিধির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মামলার নিষ্পত্তির মাধ্যমে ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠায় চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সর্বাতœক সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

সম্মেলনে অনান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সিনিয়র সহকারী কমিশনার কানিজ ফাতেমা, গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আমান উল্লাহ, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডাঃ খালেদ জাহান ফাহিম, যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ্বাস, জেল সুপার মোঃ মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞ যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ মো. মোস্তফা শাহরিয়ার খান, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ কায়সার মোশাররফ ইউসুফ, বিচারক (যুগ্ন জেলা জজ) সিরাজাম মুনীরা, সিনিয়ির সহকারী জজ সানজিদা আফরীন দীবা, সিনিয়ির সহকারী জজ মাহমুদুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী জজ শামসাদ জাহান খান, সহকারী জজ সুমাইয়া রহমান, জেলা লিগাল এইড অফিসার (সহকারী জজ) শুভ্রা চক্রবর্তী, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কফিল উদ্দিন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী রহমান, সহকারী জজ তানিয়া ইসলাম, সহকারী জজ মোহসিনা ইসলাম, সহকারী জজ আসমা জাহান নিপা, ভিপি জিপি শেখ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ভিপি জিপি মোঃ সহিদ উল্লাহ কায়সার এবং স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ হাবিবুল ইসলাম তালুকদার ,জেলা জজ আদালতের নাজির আব্দুল্লাহহিল কাফি, নায়েব নাজির গাফফার খান নাদিম,চীফ জুডিশিয়াল কোর্টের নাজির ফখরুদ্দিন।

করেসপন্ডেন্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭ : ২০ পিএম, ২১ মে ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Share