Home / চাঁদপুর / আজ চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক জন্মদিন
ilish Selfy jone
চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে ইলিশ সেলফি জোন।

আজ চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক জন্মদিন

আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক জন্মদিন। ১৯৮৪ সালের এ দিনে চাঁদপুর মহকুমা নতুন নামে চাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের ফলে চাঁদপুর মহকুমার উৎপত্তি হয়। ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৯৬০ খ্রি. পর্যন্ত এ জেলার নাম ছিল ত্রিপুরা জেলা। যা ৪টি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল। সেগুলো হলো ত্রিপুরা সদর উত্তর, ত্রিপুরা সদর দক্ষিণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর। ত্রিপুরার ২১টি থানা ও ৩৬২টি ইউনিয়ন কাউন্সিল ছিল। চাঁদপুর মহকুমায় চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া ও মতলব নামে ৫টি থানা ছিলো।

বর্তমান চাঁদপুর প্রাচীন বঙ্গ সমতট রাজ্যের অধিনে ছিলো। সপ্তম শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদের শেষ দিকে চৈনিক পরিব্রাজক ওয়ান চোয়াঙ সমতট রাজ্যে আগমন করেছেন মর্মে ভ্রমণ বৃত্তান্তে পাওয়া যায়। তিনি সমতট রাজ্যকে সমুদ্র তীরবর্তী নিম্ন আদ্র-ভূমি রূপে বর্ণনা করেছেন যা এ অঞ্চলকে বুঝায়। প্রাচীন বাংলার গুপ্ত পাল ও সেন রাজবংশের রাজারা এই অঞ্চল শাসন করেছেন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।  তবে চাঁদপুর জেলার কোনো স্বতন্ত্র আদি নাম সনাক্ত করা সম্ভব না হলেও এ জেলাকে চাঁদপুর হিসেবে নামকরণের ঐতিহাসিক কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

Meghna boro station

চাঁদপুর বড়স্টেশন মেঘনায় ঘূর্ণন স্রোত (ফাইল ছবি)

বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক জে এম সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।

অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তার নামানুসারে নাম হয়েছে চাঁদপুর।

ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ-বিন-বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক বঙ্গ বিজয়ের পর পুরো বাংলা মুসলিম শাসনের অধিকারে আসার সাথে সাথে এ অঞ্চলও স্বাভাবিকভাবে মুসলিম শাসনের অধিনস্থ হয়। বিশেষ করে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ এ অঞ্চলে শাসন করেছেন এমন প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়।

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুর পাক হানাদার মুক্ত হতে থাকে। ৭ এপ্রিল সকাল ৯টায় পাক হানাদার বাহিনী প্রথম চাঁদপুরের পুরাণবাজারে বিমান হামলা চালায়। চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এদের মধ্যে বাবুরহাট, টেকনিক্যাল হাইস্কুল, বাখরপুর মজুমদার বাড়ি, ফরিদগঞ্জ-এর গাজীপুর ওটতলী নামক স্থান অন্যতম। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১০টায় চাঁদপুর পুরোপুরি শত্রু মুক্ত হয়। সে হিসেবে এ দিনটি চাঁদপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আরো পড়ুন- আজ চাঁদপুর মুক্ত দিবস

আধুনিক রুপে চাঁদপুরকে দেশ-বিদেশে বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য ২০১৫ সালের আগস্ট মাস হতে জেলা ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল। ইলিশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর ব্র্যান্ডিং নাম দেন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। ২০১৭ সালে দেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে চাঁদপুর স্বীকৃতি পায়। এ নামানুসারে একটি লোগো রয়েছে, যা অঙ্কন করেছেন এ জেলার সন্তান বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। একইসাথে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এর রূপকার হিসেবে স্বীকৃতি পান তৎকালিন  জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল। তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নদী বিধৌত চাঁদপুরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী। এসব নদী কৃষি অঞ্চল চাঁদপুরের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ব্যাপক অবদান রাখে। নদীকেন্দ্রিক এ জেলার ১১টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরে চাঁদপুর ধান পাট, মরিচ, আলু, আখ ও শীতকালিন নানা প্রজাতির শাকসবজিে উৎপাদন হয়। চরাঞ্চলবাসীর বেশিরভাগই কৃষিজীবী, মৎস্যজীবী ও পশু পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। পশু পালনের মধ্যে হাঁস, মুরগী, গরু-ছাগল ইত্যাদি রয়েছে। গাভীর দুধ উৎপাদনে চাঁদপুরের চরাঞ্চল বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। আরো পড়ুন- বরগুনা কি ইলিশ জেলা? নাকি ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে চাঁদপুর জেলায় দুটি সেচ প্রকল্পের ব্যাপক ভূমিকায় নিজস্ব উৎপাদিত শস্য থেকে এ জেলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের ১৫ ভাগ খাদ্য উৎপাদন চাঁদপুর জেলার মানচিত্র থেকেই হয়ে থাকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে চাঁদপুর থেকে ২৩ কি.মি উত্তরে পদ্ম নদী মেঘনা নদীর সাথে এখলাসপুর নামক স্থানে মিলিত হওয়ার কারণেই চাঁদপুর জেলাকে পদ্মা নদী স্পর্শ করে। তাদের হিসেবে পদ্মার ২০ কি.মি এলাকা চাঁদপুরের মানচিত্রে রয়েছে। বাংলাদেশের ছোট-বড় ৩৮টি নদীর সাথে মেঘনা নদীর সংযোগ থাকায় বর্ষা মৌসুমে প্রবল পানির স্রোত দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ার চাঁদপুরকে নদী বন্দর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে। অনেক লেখক, কবি, শিল্পী সাহিত্যিকের জন্ম এ চাঁদপুরে।

chandpur-lake

চাঁদপুর লেকের সম্পাদিত ফাইল ছবি

বিমান বন্দর ছাড়া চাঁদপুর জেলায় সড়ক, নৌ ও রেলপথের উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থা রয়েছে। এ জেলার প্রধান সড়ক হল ঢাকা-চাঁদপুর মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর মহাসড়ক। শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার জন্য আলাদা একটি রেল পথ রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন চাঁদপুর-চট্টগ্রাম এবং চাঁদপুর-কুমিল্লার আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে নৌপথে যোগাযোগের জন্যে রয়েছে চাঁদপুর নদী বন্দর।

প্রতিবেদন : দেলোয়ার হোসাইন, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০