চাঁদপুর আল- আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবদুল গাফফারের একটি ভিডিও ক্লিপ সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে বুধবার (৪ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় বিক্ষোভ করেছে সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এসময় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ক্যাম্পাস ও ছাত্রী শাখার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মাঠে নেমে পড়ে। পরে তারা রাস্তায় নেমে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ননএমপিওভুক্ত ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিনিয়র একজন এমপিও শিক্ষককে ছুটি নিয়ে গালাগালের কলরেকর্ড ভিডিও আকারে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তারা পূর্বের নানা অনিয়ম ও খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। (কল রেকর্ডের বক্তব্য অশালীন হওয়ায় পাঠকদের জন্যে প্রকাশ করা হয়নি)
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভরত অবস্থায় ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, সকাল ১০ টার দিকে এইচএসসি ২০০০ থেকে ২০১৪-১৫ সালের সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রধান ক্যাম্পাসের ঢুকে অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে হুড়মুড়ে ক্লাসরত সব শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে মাঠে চলে এসে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে।
এসময় অধ্যক্ষের কক্ষে তিনি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সংস্থা আল-আমিন সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল্লাহ ছিলেন। বাইরে ডিবি পুলিশ অবস্থান করায় শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষের দিকে এগুতে না পারলেও তারা জানালার গøাস দিয়ে অধ্যক্ষকে জুতা প্রদর্শন করেন। পদত্যাগ! পদত্যাগ শ্লোগানে পুরো ক্যাম্পাস বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
এর আগে সকাল থেকে স্কুলের সামনে ডিবি ও মডেল থানা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান করে। এ খবর শুনে চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামনুন্নাহার ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ওই দিন বিকেলে আন্দোলনরত সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল, শিক্ষকদের কয়েকজন ও সাংবাদিকদের কয়েকজন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যেতে অনুরোধ করেন।
এর মধ্যে খবর আসে, ছাত্রী শাখার শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জন করে অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ছাত্রীরা সবাই মাঠ থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে। পরে পুলিশ সুপার সেখানে গিয়ে ছাত্রীদেরকে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেন।
আল- আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ ছাত্রী শাখার দায়িত্বে থাকা ফেরদৌসী বেগম জানায়, ‘ক্লাস চলাকালিন সময়ে হঠাৎ শিক্ষাথীরা অধ্যক্ষের অপসারনের দাবিতে শ্লোগান শুরু করে। স্কুল ছুটি ছাড়াই তারা ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়। তবে কি কারনে তাদের আন্দোলন না আমি জানি না।’
পরে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, কারো স্বার্থ হাসিলের জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদদের কেউ ব্যবহার করবে। তা মেনে নেওয়া হবে না। আইন আইনের গতিতে চলবে।
পুলিশ সুপারের ঘোষণা অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষক প্রতিনিধি, পরিচালনা সংস্থা আল-আমিন সোসাইটির চেয়ারম্যান, ছাত্রীশাখার কয়েক শিক্ষার্থীসহ সাবেক শিক্ষার্থী প্রতিনিধিবৃন্দ এসপি শামসুন্নাহারের সাথে বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘অসুস্থ এমপিওভুক্ত শিক্ষক জাকির স্যারসহ বিভিন্ন শিক্ষকদের সাথে নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক আব্দুল গাফফার স্যারের বিভিন্ন সময়ে অশুভ আচরণ। পুলিশ সুপারের আশ্বাসে আমরা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। যেহেতু বিতর্কিত এ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে সেহেতু তাকে অপসারণ করতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ না করা হলে আমরা আরো কঠিন আন্দোলনের ডাক দেবো।’
অধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুল গাফফারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে নাউজুবিল্লাহ তার কিছুই আমি জানি না।’
তবে কেন কোন কারণ ছাড়াই তিনি স্কুল ছুটি ঘোষণা করেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
আল-আমিন সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল্লাহ বিক্ষোভ সম্পর্কে বলেন, ‘আমার কাছে কিছু অ্যাভিডেন্স (তথ্য-প্রমাণ) আসছে। আমি প্রপ্রার ওয়েতে (যথাযথভাবে) ব্যবস্থা নিবো। এর বেশি কিছু মিডয়াতে বলতে পারবো না।’
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সম্পর্কে পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যানের ভাগ্নে হয়, তাকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে আরেকটি সূত্রে প্রতিষ্ঠানটির ৪ শাখা মিলে ২১০ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে বলে জানা যায়। এরমধ্যে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী ছাড়া বাকিরা সবাই অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়য়টি চাঁদপুর টাইমসের সংরক্ষণে রয়েছে। ওই কপিতে শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ অধ্যক্ষের স্বজনপ্রীতি, আচরণ ও অযোগ্যতাকে দায়ী করে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।
প্রধান ক্যাম্পাস ও ছাত্রী শাখায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের একাশং- ভিডিও
প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন ও মাজহারুল ইসলাম অনিক