চাঁদপুর

চাঁদপুরে ৮ সহস্রাধিক মানুষ আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত

চাঁদপুর জেলায় আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলার ৮টি উপজেলাতেই আর্সেনিকোসিস রোগী রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শাহরাস্তি, তারপর হাজীগঞ্জ উপজেলায়।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব মতে, চাঁদপুর জেলায় আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৪শ’ ৯ জন। আর গুরুতর আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত হচ্ছেন এমন সম্ভাব্য ব্যক্তির সংখ্যা হচ্ছে ৫৪৯ জন। এই হিসাব চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত।

শাহরাস্তি উপজেলায় ৫ হাজার ১শ’ ৪৩ জন রোগী আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১শ’ ৫৫ জন আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া কচুয়া উপজেলায় ৩শ’ ৪৩ জন, সম্ভাব্য রোগীর সংখ্যা ৪শ’ ৫০ জন। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় আক্রান্ত রোগী ৫শ’ ৩১ জন এবং মতলব উত্তর উপজেলায় ৪শ’ ৫০ জন রোগী রয়েছেন। চাঁদপুর সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৪শ’ ৬৩ জন, গুরুতর রোগী ২১ জন, হাইমচর উপজেলায় আক্রান্ত ৫৪ জন, গুরুতর ১০ জন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আক্রান্ত রোগী ২শ’ ৭০ জন এবং গুরুতর রোগী ৬৮ জন।

এদিকে চাঁদপুর জেলায় ২০০৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করা হয়। যেসব টিউবওয়েলে আর্সেনিক পাওয়া গেছে সেগুলোতে লাল রঙ আর আর্সেনিকবিহীন টিউবওয়েলে সবুজ রঙ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর দীর্ঘ এক যুগেও আর্সেনিক পরীক্ষা বা কোনো জরিপ না হওয়ায় গ্রামের লোকজন নিরূপায় হয়ে অনেকটা অন্ধের মতই আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছেন। এতে দিন দিন এই জেলায় আর্সেনিকোসিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় মোট নলকূপ রয়েছে ৩১ হাজার ৯শ’ ৩৭টি। এর মধ্যে চালু আছে ২৬ হাজার ৩শ’ ৫২টি। আর বন্ধ বা অকেজো হয়ে আছে ৫ হাজার ৫শ’ ৮৫টি। অগভীর নলকূপ রয়েছে ২১ হাজার ৫শ’ ২৬টি। এর মধ্যে বন্ধ আছে ৪ হাজার ৮শ’ ১৭টি। গভীর নলকূূপ রয়েছে ৪ হাজার ৯শ’ ৮৭টি, বন্ধ আছে ২শ’ ৬টি। গভীর তারা নলকূপ রয়েছে ৫ হাজার ১৩টি। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ২শ’ ৬৮টি। পিএসএফ অর্থাৎ পুকুরের পানির ফিল্টার প্রকল্প রয়েছে ৪শ’ ১১টি। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ২শ’ ৯৪টি।

কাগজে কলমে এ পরিসংখ্যান থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কারণ অগভীর নলকূপগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশই নষ্ট এবং আর্সেনিকযুক্ত। একটি নলকূপ নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যাবার পর সময়মত জনস্বাস্থ্য বিভাগের সেবা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও যন্ত্রাংশের অভাবে তা মেরামত করা হয় না। এর মধ্যে আবার কলের মাথা চুরি যাওয়া তো নিত্যদিনের ঘটনা।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের জনৈক প্রকৌশলী জানান, ৮টি উপজেলার জন্য মাত্র ৩০ জন মেরামতকারী রয়েছে। তাই হয়তো সময়মত মেরামতকারী পেতে সমস্যা হয়। ওই প্রকৌশলী বলেন, একটি নলকূপ স্থাপন করার পর তা বিকল হলে মেরামতের দায়িত্ব বাড়ির মালিক অথবা সুবিধাভোগীদেরই। যন্ত্রাংশও তাদেরই সরবরাহ করার কথা।

স্বাস্থ্য বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, একজন আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত রোগীর সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় ওষুধের যোগান এবং তার চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মিত করে যাচ্ছে। তবে এত ব্যাপক সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সময়মত ওষুধও পাওয়া যায় না।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ||আপডেট: ০৬:২৯ পিএম,১৫ অক্টোবর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

 এমআরএস/ এমআরআর

Share