বাংলা চলচ্চিত্রে অন্যতম একটি চরিত্র পাশ্ব নায়ক। আমরা দর্শকরা স্বভাবগত কারণেই ঘটনাবহুল চলচ্চিত্রেরর কাহিনীর শেষে নায়ককে সকল ক্রেডিট দিয়ে থাকি। আর যত মাতামাতি তার সবটাই মূল নায়ককে নিয়ে। অথচ নায়ক হেরে যাবার সময় বা তার বিপদে (কাহিনী ভিন্নদিকে মোড় নেবার ভয়ে) একজন পাশ্ব নায়কে ডাকতে থাকি। চাঁদপুরে বিকাশ এজেন্টেন ৬১লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় তেমনই এক পাশ্ব নায়কেরর নাম বাদল গাজী। সে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি। বিকাশ এজেন্টের এতোগুলো টাকা ফিরে পাবার অন্যতম ভূমিকা ছিলো এই বাদল গাজীর।
এ দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য হলো : ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। এখান কথা হলো অটোচালক সজীব যদি টাকার ভ্যাগ নিয়ে ভুল মানুষের কাছে যেতো, তবে ঘটনা অন্যরকম হতে পারতো। অটোচালক সজীবের দৃষ্টান্তমূলক উদারতায় মূলত বাদলই পুলিশকে ফোন করে টাকা পাবার বিষয়টি অবগত করে।
ঘটনার বিষয়ে গাজী বাদল তার ফেসবুক আইডিতে লিখে, রোববার বিকেলে সজীবের আত্মীয় সোহাগ তাকে ফোন করে দেখা করতে বলে। তারপর সোহাগ এবং সজীব জানায় ফেসবুকে প্রচার হওয়া হারানো ৬১ লাখ টাকা আমাদের কাছে আছে। এখন আমি কি করতে পারি আপনি একটা পরামর্শ দেন। তাৎক্ষণিক আমি চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন সাহেবকে ফোন করি বিষয়টি অবগত করি এবং ঠিকানা দেই। তাৎক্ষণিক তিনি তিনটি মাইক্রো নিয়ে সঙ্গীয় ফোর্সসহ পুরাণবাজার অটোরিকশার গ্যারেজে চলে আসেন। এভাবেই সম্পূর্ণ টাকাগুলি উদ্ধার করেন।
একই কথা জানিয়ে অটোচালক সজীব বলেন, তিনজন যাত্রী মনের ভুলে টাকার ভ্যাগটা অটোরিকশার সিটে ফেলে যায়। প্রায় আধা ঘন্টা আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপরেও কেউ না আসায়, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আমি তো টাকার মালিকের ঠিকানা জানি না। আর সরাসরি থানায় যেতেও ভয় পাচ্ছিলাম। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসি এবং টাকার ভ্যাগটি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে বোনজামাইর সাথে আলাপ করি। বোনজামাই বিষয়টি প্রতিবেশী বাদল ভাইকে জানায়। এরপর বাদল ভাই চাঁদপুর মডেল থানার ওসি স্যারকে জানায়।
এই ঘটনাটি স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর এটি ছিলো রোববারের টপ অব দ্যা টাউন। ফলে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অটোচালক সজীবকে নিয়ে প্রশংসার ঝড় উঠে। ওইদিন রাতেই চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান এই সততার জন্যে তাৎক্ষণিক অটোচালক সজীববে ৫ হাজার টাকা পুরুস্কার দেন। আজ সকালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও সজীবকে খাদ্যসহায়তা এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এদিকে চাঁদপুরে বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, অটোচালক সজীব চাকরি, নতুন অটোরিকশা অথবা নগদ টাকা- যা চায় তাকে তাই পুরুস্কার দেয়া হবে। সবশেষে জানা যায়, সজীবের চাহিদা মতো আগামী কালকেই তাকে পুরুস্কার হিসেবে নতুন একটি অটোরিকশা কিনে দিবেন তিনি। আমরা উদারতার প্রতিদানে এমন উদারতার জন্যে বিকাশ এজেন্টকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
এখন কথা হলো এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পাশ্ব নায়ক বাদল গাজী কী পেলো। তাৎক্ষনাৎ ভালো পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে সে-ও কী নুন্নতম পুরস্কার পেতে পারে না। অপ্রকাশিত ভাবে যতোটুকুন জেনেছি পুরাণবাজারের একটি চক্র টাকাটা মেরে দিতেও চেয়েছিলো। কিন্তু সজীবের সততা এবং বাদলের বুদ্ধিমত্তায় তারা সফল হয়নি। তাই বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল ভাইয়ের প্রতি মানবিক অনুরোধ থাকবে সততা, বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতার জন্যে বাদল গাজীকেও সামান্যতম হলেও পুরস্কৃত করুন। আর পুলিশ এবং গণমাধ্যমের প্রতি আপনি যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, তার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
অবশ্য চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অটোচালক সজীবসহ জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি বাদলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
আশিক বিন রহিম,২২ জুন ২০২০