চাঁদপুরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকি ছাড়া ও তাদের অনুপস্থিতে ঠিকাদার দিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মত ভেকু দিয়ে বহুতল ভবনের মাটি খনন করায় পাশের বহুতল ভবন কাত হয়ে বিভিন্নস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোডে ভেকু দিয়ে মাটি খনন করায় মুক্তিযোদ্ধা হাজী আব্দুর রশিদ খানের মালিকানাধিন নাহার ভবনের (৪তলা) ফাটল দেখা দেয়। ভবনটি হেলে পড়ার আতংকে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা অন্যত্র মালামাল নিয়ে সরে যাচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে,চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার জনবহুল আবাসিক এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হাজী আব্দুর রশিদ খানের মালিকানাধিন নাহার ভবনে।
একইস্থানের পাশের ৪টি ভবনের মাটির নীচের অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী মারাত্বক আতংকের মধ্যে রয়েছে,ভবন মালিক চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন,প্রয়াত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের পরিবার,প্রয়াত প্রফেসার ফরহাদের স্ত্রী এডভোকেট রিয়া ও তার পরিবারবর্গ ,বেবী বেগম ও খোকন মুন্সিসহ এলাকাবাসী। যেকোন মূহুতে বড় ধরনের ভবন ধবস দেখা দিতে পারে বলে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
সংবাদ পেয়ে বিকেলে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো.জিল্লুর রহমান জুয়েল,পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচ শামসুদ্দৌহা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান মানিক, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, চাঁদপুর গনপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তন্ময় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় মাটি খনন করার ভেকুটি জব্দ করেছে, চাঁদপুর পৌর সভা ও জেলা প্রশাসন। মাটি খনন করার ফলে বহুতল ভবনটি হেলে যাওয়ায় ও ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে, ভবনের লোকজনকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে। চাঁদপুর পৌসভার মেয়রের নিদের্শে পৌর কর্তৃপক্ষ মাটি খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মারাত্বক ভাবে পক্ষে ও বিপক্ষে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোডে ভেকু দিয়ে মাটি খনন করায় মুক্তিযোদ্ধা হাজী আব্দুর রশিদ খানের মালিকানাধিন নাহার ভবনের (হোল্ডিং-০০৬৭) হেলে ও ফাটল দেখা দেয়ায় আতংকের সৃষ্টি হয়। এই খবর শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
২২ মার্চ সোমবার দুপুরে রাস্তা থেকে ভবন দেবে যাচ্ছে এই ধরনের চিৎকার করলে ভবনে থাকা লোকজন দ্রæত বেড়িয়ে আসেন এবং মালামাল অন্যত্র সড়িয়ে নেন।
স্থানীয়রা জানান, রোবরার রাত ১১টার দিকে মেঘনার চর অঞ্চলের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী আবদুর গফুর দর্জির ছেলে নূর মোহাম্মদ দর্জির ১০ শতাংশ জায়গার ক্রয় করে ২ কোটি ৪০লাখ টাকায়। সে জায়গার উপর ভেকু দিয়ে ১০ ফিট গভীরে মাটি খনন করার কাজ চলছিল। ৮ফুট গভীর করার পর হঠাৎ পার্শবর্তী ৪ তলা বিশিষ্ট নাহার ভবনটি কাত হয়ে যায় এবং বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। হেলে যাওয়া ভবনের মালিক মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ আব্দুর রশিদ খান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন… চাঁদপুরে ভেকু দিয়ে মাটি খনন করায় ৪ তলা ভবনে ফাটল, ভেকু জব্দ
নাহার ভবনের মালিক মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ আব্দুর রশিদ খানের ছেলে জসিম উদ্দিন জানায়, ভবন করার নামে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছিল। আমরা বাসায় থাকা লোকজন প্রথমে মনে করেছিলাম হয়ত ভূমিকম্প হয়েছে। পরে নিচে এসে ঘটনাটি বুঝতে পেরে দ্রুত বাড়ির সবাই বাহিরে চলে আসি। রাতে বাড়ির বাহিরে ছিলাম। দুপুর ১২ টায় আবার ফাটল দেখা দিলে আমরা ও এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ি এবং বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়।
নূর মোহাম্মদ দর্জি বলেন, আমি আমার নিজ জায়গায় ভবনের জন্য কাজ শুরু করি। প্রকৌশলী যেভাবে কাজ করার জন্য বলেছেন, সেভাবেই করা হচ্ছে। কিন্তু কি কারণে ওই ভবন ফাটল দেখা দিয়েছে তা আমার জানা নেই। ওই বিষয়ে পৌরসভার প্রকৌশলী ভাল বলতে পারবেন।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, তাৎক্ষনিক ভেকুটি জব্দ করা হয়েছে। গনপূর্ত ও পৌরসভার দুই ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা উভয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবে। সেখানে কোন ত্রæটি থাকলে মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। নতুন ভবনের জন্য কাজ করতে আনা ভেকুটি জব্দ করা হয়েছে। আর নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪ তলা ভবনের লোকজনকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট,২২ মার্চ ২০২১