চাঁদপুরে ৪১ হাজার বিদেশগামীদের ফিঙ্গার টেস্ট-নিবন্ধন সম্পন্ন
চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ব্যুরোর কার্যালয় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ৬ মাসে এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৪১ হাজার ৭শ ২৩ জন বিদেশগামী বা প্রত্যাশী যুবকদের ফিঙ্গার টেস্ট ও নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.সফিকুর রহমান গেলো সপ্তাহে এ তথ্য জানান ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে- ফিঙ্গার টেস্ট গ্রহণ ও নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। এরাই তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পাবে বলে জানা যায় । তিনি বলেন,‘ ২২০ টাকার মাধ্যমে চাঁদপুরের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ব্যাংকের জমা রশিদ নিয়ে আসলেই আমাদের এ কার্যালয়ে ফিঙ্গার টেস্ট গ্রহণ করা হয়। সাথে স্ব স্ব ভিসার কপি ও পাসপোর্ট এর ফটোকপি জমা দিতে হবে। সিঙ্গার টেস্টের পর বিদেশগামী একজন যুবক চাঁদপুর মেরিনস্থ একাডেমিতে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পরেই সে বিদেশে যেতে পারব্। ’চাঁদপুরের ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি বিদেশে গমনেচ্ছুকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান করা হয়। বর্তমানে চাঁদপুরের ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি বিদেশে গমনেচ্ছুকর্মীদের প্রশিক্ষণ এখন চাঁন খাঁর পুল নামক স্থানে নতুন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ’
২০১৭ সালের জুন থেকে প্রত্যেক বিদেশ শ্রমজীবীকে ৩ দিনের ওরিয়েন্টেশন কোর্সটির প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ পর্যন্ত সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ও মালোয়েশিয়ায় ৫০% শ্রমজীবী পুরুষ ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে পেরেছেন। ২০০৫ হতে ২০১৯ সালে পর্যন্ত পরিসংখ্যান মতে, চাদঁপুরের বৈধ প্রবাসীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার। এর পর জাতীয়ভাবে জেলাওয়ারী আর কোনো পরিসংখ্যান তৈরি হয়নি।
চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ব্যুরোর কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে – ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে -৪ হাজার ৯৮ জন , ফেব্রুয়ারি মাসে -৩ হাজার ৬ শ ৬১ জন , মার্চ মাসে -২ হাজার ৮ শ ৭৩ জন , এপ্রিল মাসে -৩ হাজার ৭ শ ৫৩ জন , মে মাসে -৪ হাজার ১ শ ৭৫ জন , জুন মাসে -৩ হাজার ২ শ ৬৩ জন , জুলাই মাসে -৪ হাজার ২৬ জন , আহস্ট মাসে -৪ হাজার ৩শ ৩৮ জন ,সেপ্টেম্বর মাসে মাসে -৪ হাজার ৩ শ ৬ জন , অক্টোবর মাসে -৩ হাজার ৪শ ৩৭ জন,এবং নভেম্বর মাসে ৩ হাজার ৭শ ৯৩ জন বিদেশগামী বা প্রত্যাশী যুবকদের ফিঙ্গার টেস্ট ও নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে বলে জানা যায় ।
সূত্রটি আরো জানায়, প্রত্যেক বিদেশ গমনেচ্ছুককর্মী যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা নিশ্চিত হওয়ার পর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত ফিসারী গেইট নামক থানে ফিঙ্গার টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর পরই তাকে ২শ’ টাকা ফি দিয়ে ৩ দিনের এ ওরিয়েন্টেশন কোর্সটি সম্পন্ন করতে হয়। বর্তমানে ফিঙ্গার টেস্টের ক্ষেত্রে বিষয়টি শিথিল করে বিদেশ গমনেচ্ছুককর্মীর পাসপোর্ট থাকলেই ওরিয়েন্টেশন কোর্সটি সম্পন্ন করার সুযোগ পাচ্ছে।
সহকারী পরিচালক মো. সফিকুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল ডাটা তৈরি, নিবন্ধন, ফিঙ্গার টেস্ট, পাসপোর্স্ট পরিচিতি ও নম্বর, দূতাবাসের সকল ধরনের সুবিধা পেতে, প্রবাসে অবস্থান কালে যে কোনো সমস্যা সমাধানে, ওয়ার্ক ভিসা, বিমানে উঠার পর কী করণীয়, কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পর কী কী করবে বা কী কী করতে পারবে না, সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা ও আবহাওয়া,ভিসা পুন:যাচাই-বাচাই, বিমান বন্দরের প্রবেশের আগে ইমিগ্রেশান কার্যক্রমে করণীয়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ, উপার্জিত টাকা প্রেরণের পদ্ধতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ কোর্স গ্রহণ কালে ধারণা প্রদান করা হয়। এ প্রশিক্ষণটি বিদেশগামীদের জন্যে বাধ্যতামূলক।’
তিনি আরো বলেন,‘বিদেশ গমনেচ্ছুককর্মীর সকল ডাটা সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বিদেশে যেকোনো বিমান বন্দরে তার পাসপোর্ট নাম্বারে ক্লিক করলেই ঔ যুবকের সকল ডাটা ইমিগ্রেশান কর্মকর্তাগণ জেনে যাবে এবং তাঁর আগমনের বৈধতা সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য জানতে পারবে। ফলে কোনো ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘ ফ্রি ভিসা বলতে কোনো ফিসা নেই। সুতারাং এ প্রশিক্ষণটি হলো প্রাবাসীদের বিদেশ গমণের বৈধভাবে যাবার অন্যতম শর্ত। কেননা -ফিসা দেখেই তার ফিঙ্গার টেস্টসহ সকল প্রকার ডাটা ব্যাচ সংরক্ষণ করা হয়। পৃথিবী যে কোনো দেশের ইমিগ্রেসনে পার হবার সময় তাঁর ফিসা ও পাসপোর্ট নম্বর টি সততা যাচাই করার পর পর তিনি পার হতে পারবেন।’প্রশিক্ষণ চলা কালে তার সকল ডাটা লিপিবদ্ধ করা হয় । কেউ এর ব্যতিরেকে যেতে চাইলে তার ভাগ্যে কী পরিণতি বয়ে আনবে-তা একমাত্র আল্লাাহই জানেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগে একজন বিদেশ গমনকারীকে বাধ্যতামূলক এ প্রশিক্ষণটির জন্যে ঢাকায় এবং পরবর্তীতে কুমিল্লায় দিনের পর দিন অফিসের বারান্দায় বসে কিংবা রাত অতিবাহিত করতে হতো। বর্তমানে চাঁদপুরের বিদেশগামী মানুষ জেলা শহরেই এ সুযোগ পাচ্ছে। এর পরও কোনো বিদেশগামী অবৈধভাবে গেলে তার কোনো তথ্য এ অফিস থেকে পাওয়া যাবে না। চাঁদপুর শহরের প্রায় ৮ কি.মি.পূর্বে কুমিল্লা রোডের উত্তর পাশে চাঁনখারপুল নামক স্থানে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ হয়।
গণপূর্ত বিভাগ চাঁদপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলে একজন সহকারী তড়িৎ প্রকৌশলী তথ্য জানান। যার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ হয়। এটি জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো দেয়া তথ্য মতে জানা যায়-এখানে প্রবাসী শ্রমজীবীদের সার্বিক ও গমনাচ্ছুকদের কর্মের প্রশিক্ষণ, ফিঙ্গার টেস্ট ও তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও প্রবাসীদের কল্যাণে সার্বিক সহায়তা দান হিসেবে একটি ইউনিট থাকবে বলে জানা যায়।
প্রতিবেদক: আবদুল গনি/
৫ ডিসেম্বর ২০২৫