চাঁদপুর জেলায় ৩ লাখ ২ হাজার ৭শ’ ৭৪ জন মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা লেনদেন করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে চাঁদপুরে এজেন্ট সংখ্যা ৪ হাজার ২শ’ ১০ টি। ৪টি মোবাইল অপারেটিং টাকা লেনদেন করা সংস্থার পৃথক পৃথক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট বাজার, জনাকীর্ণ স্থানে ও মোড়ে বিকাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থ লেনদেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার নিয়ন্ত্রণকারী বিকাশের কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিকাশের ২ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক এবং ২ হাজার ১ শ’ এজেন্ট রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
দিনমজুর, ভ্যান, রিক্সা, অটো, সিএনজি চালকসহ বিভিন্ন স্বল্প আয়ের পেশাজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিকাশের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত মোবাইল ব্যাংকিয়ের গ্রাহক ও এজেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বল্প আয়ের পেশাজীবিরা প্রতিনিয়ত তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে ওইসব অর্থ বিকাশের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। খুব সহজ পদ্ধতিতে এসব টাকা বিকাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ লেনদেন করছে। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যেই বিকাশ লেনদেন করছে। এছাড়াও প্রতি হাজারে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা কমিশন কেটে রাখা হচ্ছে। চাঁদপুরের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে চাঁদপুর জেলায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৯০ হাজার এবং এজেন্ট সংখ্যা ১ হাজার ৬শ’। যার মাধ্যমে চাঁদপুরে গড়ে আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ২০১৩ সালে চালু হওয়া কৃষি ব্যাংকের ২৮টি শাখায় ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭শ’ ৭৪টি।
নতুন করে এ বছর স্কুল-কলেজ ও মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যক্রম ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। ইউসিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সূত্রে চাঁদপুর জেলার ৫শ’ এজেন্টের মাধ্যমে ৫ হাজার গ্রাহক ইউ ক্যাশ এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকার মত লেনদেন হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলার বিকাশের টেরিটোরিয়াল ম্যানেজার শামিম আল জাবি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, “প্রতিদিনই বিকাশ গ্রাহক ও এজেন্ট সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের ভেতর বিকাশের লেনদেনে আস্থা রয়েছে। তবে, কোনো কোনো মানুষ লেখাপড়ার অভাবে মোবাইল ব্যাংকিং এখনও বুঝে উঠেনি কিংবা আস্থা রাখতে পারছেনা। মানুষ ভাবছে মোবাইলের মাধ্যমে কেবলমাত্র কথা বলা যায়। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে এখন অনেক কল-কারখানার শ্রমিদের বেতন প্রদান, শপিংমলে কেনা কাটা, মোবাইল রিচার্জের টাকা পরিশোধ ও বৈদেশিক রেমিটেন্স এর মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। বিকাশ এক্ষেত্রে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।”
চাঁদপুর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, “ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে। এর আলাধা নিরাপত্তার জন্যে বিশেষ নাম্বার সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরের সাথে যোগাযোগ করে হিসাব করা হয়েছে। তাই ডাচ বাংলা ব্যাংকিং কার্যক্রম মানুষ সহজেই এর সেবা গ্রহণ করে নিচ্ছে। বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের সাথেও ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চাঁদপুর শহরের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সুবিশাল ব্যাংক পরিসরে ও কৃষি ব্যাংকের জেলার ২৮টি শাখায় সাধারণ মানুষ অর্থ লেনদেন করতে পাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, বিকাশ ব্যাংক ব্যাংকের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলেও ব্র্যাক ব্যাংকে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম এর সুবিধা নেই। ডাচ্-বাংলা এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে।”
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, “প্রতি মাসে বৈদেশিক লেমিটেন্স আসাছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলোও এক্ষেত্রে সেবা দিচ্ছে।”
ইউ ক্যাশ হচ্ছে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর জেলায় এর একমাত্র ডিলার মোঃ ইউনুস মিয়াজী বলেন, “সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইউ ক্যাশ কার্যক্রম জোরালোভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। প্রচার ও প্রসারের অভাব ও রয়েছে।”
চাঁদপুর জেলা ও শহরের প্রথম বিকাশ এজেন্ট চিত্রলেখার মোড়ে অবস্থিত প্রতিদিন জেনারেল স্টোরের মালিক অপু সরকার জানান, “সাধারণ মানুষ বিকাশ লেনদেন সহজভাবে করতে শিখে ফেলেছে। বিভিন্ন স্বল্প আয়ের শ্রমজীবি ও পেশজীবীদের কাছে বিকাশ লেনদেন জনপ্রিয় হয়ে উঠান দিনদিন এর প্রসার লাভ করছে। মূলত বিশ্বস্ততার জন্যই বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে যাচ্ছে।” এক্ষেত্রে এজেন্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।”
চাঁদপুরে ২০১২ সালে সর্ব প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয়। প্রাপ্ত একটি সূত্র মতে, সারাদেশব্যাপী বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। গত একমাসে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ লাখ। গত এক মাসে এসব গ্রহকের মাধ্যমে সারাদেশ ব্যাপী ১৫ হাজার ৬৬ কোটি টাকার মত লেনদেন হয়েছে বলে জাতীয় দৈনিকে জানা গেছে।
আবদুল গনি
।। আপডেট ১১:৪৮ পিএম ০৯ নভেম্বব, ২০১৫ সোমবার
ডিএইচ