চাঁদপুরের ৮ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ২শ’১৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হওয়া সত্ত্বেও ২৭ দিন ধরে তালা ঝুলছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা সেবা নিতে পারছেন না। যারা প্রতিনিয়ত কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নেন, তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত প্রোভাইডারগণের বেতন সরকারের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর তথা ‘ চাকুরি জাতীয়করণ’র দাবিতে কর্মবিরতিসহ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে তালা ঝুলানো কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
সারা দেশের প্রোভাইডারগণের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রিয় কর্মসূচির আলোকে এ তালা ঝুলছে বলে চাঁদপুরে তাদের সংগঠনের সভাপতি মো. কামরুল হাসান চাঁদপুর টাইমকে এ তথ্য জানান।
চাঁদপুর কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মো.কামরুল হাসান বলেন , ‘কেন্দ্রিয় কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়শনের ডাকে চাঁদপুর জেলার স্ব-স্ব উপজেলায় ২০,২১ ও ২২ জানুয়ারি তারা অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর ২৬ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া ৩১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এতেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পাওয়ায় গত ১ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি তথা ২৭ দিন চাঁদপুর কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডারগণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে তালা ঝুলানো কর্মসূচি পালন করবে।
২০১৩ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও প্রশাসন কর্মকর্তা ডা.শাহনেওয়াজ দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের চাকুরি রাজস্ব খাতে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেন।
সেদিন যদি ওই চিটি না দিতেন তাহলে অনেক কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অন্য চাকুরির চেষ্ঠা করতেন বলে চাঁদপুর কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়শনের সভাপতি মো.কামরুল হাসান জানান ।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর জেলায় ২শ’১৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২শ’১৮ জন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার কর্মরত রয়েছেন। সারা দেশে অনুরূপ ১৩ হাজার ৭শ’ ৬৫ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয় । এ সব ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অসামান্য অবদান রেখে চলছে।
বর্তমান সরকারের ‘সবার জন্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত’ করতে এগুলো ব্যাপক কাজ করছে। বিশেষ করে পল্লীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রধান ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক একটি। পল্লীর জনগোষ্ঠীর কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সফলতা অর্জন করছে।
ক্লিনিকগুলোতে আন্তরিক পরিবেশে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারিভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত করছে। চালুকৃত প্রতিটি ক্লিনিকে দৈনিক গড়ে ৪০-৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ রোগী, বাচ্চাদের শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ,গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারী সেবাসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে এখানে ।
দেশের প্রতিটি সিভিল সার্জন অফিস থেকে মাসে দু’বার ৩০ প্রকারের ওষুধ ক্লিনিকগুলোতে দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা রাখতে সরকারি নির্দেশ রয়েছে ।
জাতীয়ভাবে ঘোষিত চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় ৮৯ ইউনিয়নে যেখানে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল নেই ও অর্ধ-ঘন্টার মধ্যে একজন গর্ভবতী মা খুব স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে আসতে পারে এমন স্থানে প্রতি ৬ হাজার পল্লী এলাকার হতদরিদ্র অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পর ২শ’১৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে চাঁদপুরে চালু রয়েছে। চালুকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ২ শ’১৮ জন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইটার কর্মরত রয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর সদরে ৪৪টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ৪৩ জন কর্মরত, কচুয়ায় ৩৫টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ৩৩ জন কর্মরত ,শাহারাস্তিতে ২২ টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ১৮ জন কর্মরত,হাজীগঞ্জে ১৭ টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ২১ জন কর্মরত,মতলব দক্ষিণে ১৭ টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ১৫ জন কর্মরত, মতলব উত্তরে ৩৫ টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ৩৩ জন কর্মরত, হাইমচরে ১১ টি ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ১০ জন কর্মরত এবং ফরিদগঞ্জে ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ৩৭ জন কর্মরত ও চালু রয়েছে।
এসব ক্লিনিকগুলোতে পল্লী এলাকার জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক। ক্লিনিকগুলোতে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ১৬ সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে।
প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৬ সহস্রাধিক শিশু,কিশোর-কিশোরী, গর্ভবতী মা ও তার,সন্তান প্রসবকালীন সময় ও পরে, নবজাতক শিশু,বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে। কোনো কোনো জটিল রোগীকে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা ঢাকায় রেফার করে থাকেন।
আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী জ্বর,সর্দি,কাশি ,আমেশয়.ডায়রিয়া,এ্যাজমা,কীটপতেঙ্গের কামড়ের চিকিৎসা,পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শ ও ব্যবস্থা প্রদান প্রভৃতি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা পাচ্ছে।
এ ছাড়াও জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিসহ ৬ টি অত্যাবশকীয় টিকা প্রদান করা হয়। এখানে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মী ও ২ শ’ ১৮ জন হেলথ প্রোভাইডর নিয়োজিত রয়েছে। প্রতি মাসে সরকারিভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ৩০ প্রকারের ঔষধ দু’বারে প্রদান করা হয়। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রোগীদের দেয়া হয়।
১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে তৎকালীন আ’লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সারা দেশব্যাপি পল্লী এলাকায় প্রতি ৬ হাজার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্যে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে বারান্দাসহ ৬ শত্যাংশ ভূমির ওপর একটি আর্সেনিকমুক্ত টিওবেল বা কলসহ ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জমিদাতা ও স্থানীয় পর্যায়ের ৭ সদস্য বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সার্বিক পরামর্শে পরিচালিত হচ্ছে।
২০০০-২০০১ অর্থবছর পর্যন্ত ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করার পর পরবর্তী সরকার পরিবর্তনের ফলে বাকিগুলোর নির্মাণ কাজ ভেস্তে যায় ।
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার পাটগাতি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামে দেশের প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ শেষে ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন ।
সে সময়ে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২শ’ ৯১টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের প্রস্তাব স্বাস্থ্যবিভাগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিলো ২শ’২৭ টি। ২০১০ সালের আগে নদী ভাঙ্গন ও চরাঞ্চলে ৮টি মেঘনা নদীর কবলে বিলীন হযে যায় । বর্তমানে চালু রয়েছে ২ শ’ ১৮ টি
প্রতিবেদক : আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:৪০ পিএম,২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ,মঙ্গবার
এজি
