চাঁদপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’। জেলায় ৪ হাজার ৫শ’ ১৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ১ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা সঞ্চয়ী হিসেবে আমানত রয়েছে।
স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতে ২০১০ সালের নভেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ‘স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ’ শুরুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতেই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়্ াহয়। প্রথম দিকে কিছুটা কম থাকলেও ক্রমান্বয়ে এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। সামনের দিনে এ হিসাব খোলার প্রবণতা আরও বাড়বে বলে জানা যায় ।
স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীর মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলতেই বিভিন্ন নামে সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁদপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, জনসংখ্যার বড় একটা অংশ স্কুল শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তাগণ, স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা আরো আন্তরিক হলে ‘স্কুল ব্যাংকিং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে ।
তবে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ব্যাংকিং’ এর জন্যে হিসেব খোলার মনোভাব বেশি বলে জনতা ব্যাংক চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত চাঁদপুরের বিভিন্ন ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেয়া তথ্যমতে, ৪ হাজার ৫শ’ ১৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ১ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা সঞ্চয়ী হিসেবে আমানত রয়েছে।
এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ২০টি শাখায় ৯২৬ টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ,জনতা ব্যাংকে ২০টি শাখায় ৪৭৬ টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ,কৃষি ব্যাংকের ২৮টি শাখায় ৮৬৬ টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা,অগ্রণী ব্যাংকের ১৭টি শাখায় ২৪৮ টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৪ হাজার টাকা ,ইসলামী ব্যাংকের ৫ টি শাখায় ১ হাজার ৯৪৭ টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে জমা আেেছ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার টাকা ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ টি শাখায় ৫০ টি হিসাব খোলা হয়েছে । তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকার হিসেব দিতে সম্মত হননি । ইসলামী ব্যাংক জেলার মধ্যে এ অবস্থায় শীর্ষে রয়েছে।
চাঁদপুর সোনলী ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানাজার অঞ্জন কুমার দে স্কুল ব্যাংকিং বিষয়ে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘নতুন প্রজন্মকে ব্যাংকিং কার্যক্রম বুঝানোর জন্যই এটি চালু করা হয়। ব্যাংক ব্যতিত অর্থনীতি অচল। ছোটবেলা থেকেই তারা সঞ্চয়ীমনা হলেও প্রচুর টাকা জমা করতে পারবে এবং শিক্ষাজীবনে তা’ ব্যয় করতে পারবে।
চাঁদপুর ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোশারফ হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিদেশে আমাদের অনেক যুবক ব্যাংকিং কার্যাক্রম বুঝে উঠতে পারেনা বলেই অন্যের সাহায্যে ব্যাংকিং লেন-দেন করে থাকে। তাই স্কুল বয়স থেকেই তাদেরকে ব্যাংকিং কর্যক্রম শিখানোর জন্য স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এছাড়াও উচ্চ শিক্ষা গ্রাহণে সঞ্চিত টাকা ব্যায় করার সুযোগ পাবে। চাঁদপুরে এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ,অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এ ব্যাংক কর্মকর্তা।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের ৫৬ টি ব্যাংকের ৫৫ টিতেই স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্কুল ব্যাংকিং শুরু হওয়ার ছয় বছরের ব্যবধানে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। একই সময়ে সঞ্চয় স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি সুদেরহার পাচ্ছেন।
১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা তাদের বাবা-মা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। মাত্র ১ শ ’ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংক শাখায় এ হিসাব খোলা যায়। এ হিসাবে কোনো ফি বা চার্জ আরোপ করা হয় না। এমনকি ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতাও নেই।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে ২ লাখ ২ হাজার ৯শ’৯৯টি, যা মোট হিসাবের ১৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের ১ লাখ ৩৬ হাজার ১শ’৮টি হিসাব রয়েছে।
প্রতিবেদক : আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮ : ৩২ পিএম, ১ মে ২০১৭, সোমবার
এজি