চাঁদপুর

চাঁদপুরে হাত বাড়ালেই মিলছে ছুরি-চাপাতি : অশান্ত হয়ে উঠছে শহর

কথায় আছে ‘ধারালো অস্ত্রের সামনে, আগ্নেয়াস্ত্রও অনেক সময় অসহায়’। সাম্প্রতিক সময়ে এমন প্রচলিত ধারণার সাথে বাস্তবতাও মিলে যাচ্ছে কখনো কখনো। আর সেই ভয়ানক ধারালো অস্ত্রই এখন সহজলভ্য হয়ে ওঠেছে একসময়ের শান্তির শহর নামে খ্যাত চাঁদপুরে।

খোদ শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ও বিপনীবিতানগুলোতেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ধারালো দেশি-বিদেশি ধারালো অস্ত্র। প্রশাসন, সচেতন শহরবাসীর চোখের সামনে এসবব দোকানগুলোতে সহজেই নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে ধারালো ছুরি-চাপাতি। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ‘ওয়ান টু নাইনটি নাইন’ ‘ওয়ান টু থ্রি হানড্রেড’ এর দোকানগুলোতে। এসব দোকানে চকচক করে সাজিয়ে রাখা হয় কম মূল্যের দেশি-বিদেশি অস্ত্র।

ধারালো এসব অস্ত্র বিক্রিতে কোনরকম কড়াকড়ি বা নিয়মনীতি না থাকার কারণে দিন দিনই তা সহজলভ্যতা হচ্ছে।

আর এর সুযোগ নিচ্ছে উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণরা ও বখাটে যুবকরা। তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করছে।

খোজ নিয়ে দেখা যায় শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, কুমিল্লা রোড়ে রয়েছে এমন বেশ কিছু ‘ওয়ান নাইনটি নাইট’ বা ১টাকা থেকে ৯৯টাকার দোকান। বিশাল পরিশসের এসব দোকান গুলোতে প্রকাশ্যে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হয় কম মূল্যের দেশি-বিদেশী ছুরি-চাপাতি। এসব দোকানগুলো রান্নার কাজে ব্যবহৃত করার নামে নারী ক্রেতাদের কাছে এসব ছুরি-চাপাতি বিক্রি করার কথা থাকলেও মূলত এর প্রধান ক্রেতা হয়ে দাড়িয়েছে উঠতি বয়সের কিশোর-তরুন ও বখাটে যুবকরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরেই চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নতুন নতুন গ্রæপ বেড়েছে। যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সহিংসতা ও সামজিক অপরাধ। আর এসবের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জড়িত উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণরা। তারা প্রায়ই সিনিয়র জুনিয়র বিষয় সহ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহরের হাসান আলী সপ্রাবি মাঠের বিজয় মেলার সামনে সিনিয়র জুনিয়ন বিষয়ে উঠতি বয়সের দু- গ্রæপের মধ্যে মারামামি হয়। এতে এ পক্ষের ধারালো ছুরির আঘাতে তিন যুবক মারাত্মক আহত হয়। সেখানে বিজয় মেলার শত শত দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী নাসিম (১৭) ও জেএসসি পরীক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রিফাতকে ঢাকার রেফার করা হয়।
গত ১৮ জানুয়ারী একই বিষয়ে শহরে ট্রাকরোড়ে দুই গ্রæপে সংঘর্ষ হয়। এতে ১৪ বছরের এক কিশোরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কান কেটে ফেলা হয়। এইঘটনার রেস ধরে পরের দিন বঙ্গবন্ধু সড়কে পুনরায় সংর্ঘসের ঘটনা ঘটে।

গত১৯ জানুয়ারি শহরের মাদ্রাসা রোড় নিশি বিল্ডিং এলাকায় জিহাদ হোসেন নামক কিশোর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার আপন দাদি ও চাচিকে কুপিয়ে যখম করে। এছাড়াও প্রায় কোনো না কোনো চাঁদপুর শহর এবং জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এ ব্যাপারে একাধিক অভিভাবকের সাথে আলাপ হলে তারা বলেন- ধারালো অস্ত্র যেমন ছুরি, চাপাতি, রামদা এগুলো বিক্রিতে কোন রকম নিয়ম নীতি না থাকায় খুব সহজেই এসব অস্ত্র পেয়ে যাচ্ছে উঠতি বয়সের বখাটে এবং ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাই প্রায়ই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে চলছে।

চাঁদপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানায়, বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। দোকানগুলোতে প্রকাশে ধারালো অস্ত্র বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি দেখবো এবং ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে দায়িত্ব দেন।

আশিক বিন রহিম ও মাজহারুল ইসলাম অনিক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৪৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share