চাঁদপুরের উপজেলাগুলোর শতভাগ স্যানিটেশন গড় অর্জন ৯৭ ভাগ । এখনো ৩ ভাগ বাকি রয়েছে। জেলা ব্রান্ডিং বাস্তবায়নে শতভাগ সাফল্য অর্জনকে জরুরি মনে করছেন স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকগণ।
সর্বপ্রথমে ২০০৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি রসায়ন বিভাগের সহায়তায় দেশব্যাপি একটি জরিপ কাজ পরিচালনা করে। ওই জরিপ রিপোর্ট মতে,চাঁদপুরের ৮ উপজেলার ৭৯ ইউনিয়নে তখন পরিবারের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার ২০ টি।
আর স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৯ শ’ ২৫ পরিবার। পরবর্তীতে ২০১১ সালের জাতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী চাঁদপুরের সব উপজেলাাগুলোর পরিবারের সংখ্যা জানুয়ারি ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২ শ’৬০ পরিবার।
২০১১ সাল থেকে জেলা ও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সহায়তায় ডিপিএইচই,স্ব-স্ব ইউনিয়নের ২০% উন্নয়ন কাজের তহবিল কর্তৃক, সরকারের অনুমোদিত এনজিও,পারিবারিক বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও কমিউনিটি কর্তৃক স্থাপিত বা নির্মিত স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এদের সংখ্যা ২০১৮ সালের মাথায় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬ টি পরিবার । যা বৃদ্ধি পেয়ে স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা মোট দাড়াঁয় ৪ লাখ ২১ হাজার ৯ শ’৭১ টি। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, আরো ১০হাজার ২শ’ ৮৯ টি পরিবারের মধ্যে স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের হাওয়া এখনো লাগেনি। যার হার শতকরা ৩ দশমিক ৩৮ ভাগ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চাদঁপুরের দেয়া তথ্য মতে, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জানুযারি ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত চাঁদপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে চাঁদপুরর সদরে অর্জনের হার ৯৬.২৭ %,কচুয়ার অর্জনের হার ৯৯.৯৬ %, শাহরাস্তির অর্জনের হার ৯৭ .৪২%, ফরিদগঞ্জের হার ৮৪. ৩৭%,হাজীগঞ্জের হার ৯৮.৮২%, মতলব দক্ষিণের হার ৯৮.৩৭ %, মতলব উত্তরের হার ৯৭.৪৭% ও হাইমচরের হার ৮৪.৮২%।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, স্যানিটেশন অর্জনের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কচুয়া উপজেলা এবং সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে হাইমচর উপজেলা। বিশেষ করে পৌরসভার শহরতলি বা পল্লী এলাকা ও চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক পরিস্থিতিতে বিরাজ করছে ।
এ ছাড়াও যৌথ পরিবারগুলো পারিবারিক কারণে একান্নভুক্ত পরিবারে পরিণত হওয়ায় স্যানিটেশন পরিসংখ্যানের পরিবর্তনও হচ্ছে। এদিকে জেলার ৫০’টির ওপর ইউনিয়নে শতভাগ স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের ভেতর রয়েছে ।
চাঁদপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ কবির চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে জানান , ‘ স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সাফল্য হয়েছে। পরিবেশগত দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই উম্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করার প্রবণতা মানুষের ভেতর এখন নেই বললেই চলে। তবে শতভাগ আশা করা সম্ভব নয়। কেননা প্রতিদিনই নতুন নতুন বাড়ি হচ্ছে ,সংসার ভেঙ্গে আলাদা হচ্ছে ও নদীভাঙ্গন পরিস্থিতিতে স্যানিটেশন ল্যাট্রিন ভেঙ্গে যাচ্ছে ।’
তিনি আরো বলেন , ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারে ব্যাপক সচেতনতা বেড়েছে। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে নিজ নিজ পরিবারের ভেতর একটি স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন পারিবারিক মার্যাদা বাড়িয়ে দিচ্ছে ও বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখছে। জাতীয়ভাবে ২০১৮ সালের মধ্যে সারা দেশে শতভাগ স্যানিটেশন অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ও স্যানেটারি প্রজেক্টের আওয়াতায় চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি, হাজীগঞ্জ ও কচুয়ায় জুন ২০১৫-১৬ বছরে প্রাথমিক স্কুলের শতভাগ স্যানিটেশন অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল । ২০১৬-২০১৭ বছরে বাকি উপজেলার প্রাথমিক স্কুলগুলো রয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ প্রথমে ২০১৫ সালের ভেতর অর্ধেকে অর্থ্যাৎ ৫০% অর্জনের ঘোষণা দেন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখার নির্দেশ ছিলো।
স্যানিটেশনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশে গ্রামঞ্চলে ঝোপ-জাড়.বন-জঙ্গল, ডোবা , নালা , সড়কের পাশে কিংবা যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করার মতো বদ অভ্যাস বন্ধ হয়েছে। দেশের প্রতিটি স্থানীয় ইউপি পরিষদ, এনজিও ও শিক্ষিতÑঅশিক্ষিত পরিবারে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে ।
স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতির কারণেই বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চলে সকলকে নিজের আয়ু বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালনে এবং শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে সঠিক নিয়মে হাত ধোঁয়াসহ স্বাস্থ্যসম্মত চলাফেলায় উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষক ও অভিভাকদের এখানে ভূমিকা রয়েছে। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে আগামী প্রজন্মের মারাত্মক সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া পাবে ।
স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস করে তা’হলে পানিবাহিত নানা ধরনের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর সম্ভব হবে। প্রাত্যহিক জীবনে এর গুরুত্ব বুঝে তা’ মেনে চলা উচিত। হাত ধোয়ার সুফল পেতে হলে সঠিক সময়ে যেমন খাবার আগে ও টয়লেটের পর হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে সহজ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায় হিসেবে বিবেচিত । আর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস হচ্ছে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা তৈরির প্রচারণার একটি দিন।
আমাদের দেশে ভূ-গর্ভস্থ পানি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহৃত পানির মধ্যে ৮০ % ভাগ ভূ-গর্ভস্থ ও ২০% ভাগ পানি ভূ-উপরিভাগস্থ।
প্রতিবেদক- আবদুল গনি: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭: ৩০ এএম,২১ জুলাই ২০১৮,শনিবার
ডিএইচ