চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের যমুনা অয়েল এজেন্সির জ্বালানী তেলের গোডাউনে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১ টায় স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ও পাঁচ অগ্নিদগ্ধের মধ্যে ১ জন নিহত হয়েছেন।
চাঁদপুরে এর আগে কখনো এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
অগ্নিকান্ডে পুড় গেছে কয়েক শ’ ব্যারেল তেল, তেলের লরি, ১ টি পিকআপ ভ্যান, মোটর সাইকেল, বিদ্যুতের তার, গাড়ি, বাড়িসহ কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। ব
আগুনের লেলিহান শিখা ছয়তলা ভবনের উপরে ও ছাড়িয়ে যায়। আগুনাতংকে জীবন বাচাঁতে এলাকাবাসি দিশা হারিয়ে দিবিদিকে ছুটাছুটি করতে থাকে। ঘটনার স্থল হাজী বাড়ি হতে শুরু করে মুন্সি বাড়ি, খান বাড়ি, বেপারি বাড়ি, খলিফা বাড়ি, মিজি বাড়িসহ ওই এলাকার পার্শবর্তী বাসাবাড়ির মানুষজন নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়িঘর রেখে জীবন বাঁচাতে দুরে নিরাপদ স্থানে সরে যান।
আগুনের লেলিহান শিখা আর উত্তাপে ঘুম থেকে উঠে সন্তান, পরিবার পরিজন রেখেই ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
অগ্নিকান্ডের খবর শুনে গভীর রাতে ও দুর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আগুনের দৃশ্য দেখতে বঙ্গবন্ধু সড়ক ও রের লাইনে দাড়িয়ে ভিড় জমায়।
আগুন নিভাতে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের উত্তর, দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জ মিলিয়ে ৬ ইউনিট কাজ করে। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ওইসময় আগুন নিয়ন্ত্রণের পর চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস উত্তরের কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আগুনের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। কি ভাবে আগুনের সুত্রপাত ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তেলের সাথে সিলিন্ডার গ্যাস হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রনে অনেক সময় লেগেছে। পরে আমরা পানির সাথে ফোম দিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিভাতে সক্ষম হয়েছি। আহতদের ক’জনকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।’
তেলের দোকানের মালিক মিজানুর রহমানের নিকটত এক আত্মীয় জানান, ‘তেলের লরি থেকে মোটর দিয়ে তেল গোডাউনের টাংকিতে লোড করার সময় বিদ্যুত সংযোগ দেওয়ার সাথে সাথে তা বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।’
এ ঘটনায় দু ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন কমবেশি আহত হয়েছে। অগ্নি চার জনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষনে লাইপ সাপোটে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত ব্যক্তি দোকানের মালিকের পুত্র রায়হান। আহতরা হলেন যমুনা এজেন্সীর মালিক মিজানুর রহমান (৪৫), নুর মোহাম্মদ (২১) মাসুদ (২৮), বাদশা মিয়া (৫০), মিজানুর রহমান (৫০) মো. বেলাল ভূইয়া (৩৫), ফায়ার সার্ভিস কর্মী খোকন মজুমদার (৪০) ও মাহমুদ খান (২১) বাচ্চু মিজি, (৩৫),।
এদের মধ্যে বহস্পতিবার রাতে মিজানুর রহমানের ছেলে রায়হানের মৃত্যু হয়। এছাড়াও হাজী বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন আগুন দেখে ভয়ে পালানোর সময় অন্তত আরো ২০ জনের মতো কম বেশি আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় হাজী বাড়ির সেলিনা ভবনের নিচতলার দুটি ইউনিট তেলের গোডাউনের জন্য ভাড়া নেন যমুনা অয়েল এজেন্সীর মালিক মিজানুর রহমান শেখ।
তিনি কয়েকদিন পর পরই গাড়ি দিয়ে নিয়ে আসা পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, মবিল, সয়াবিন ও কেরোসিনসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল মোটর দ্বারা গাড়ি থেকে তার গোডাউনের গ্যালনে লোড করেন।
ঘটনার দিন রাতেও ঝালকাঠি- ঢ ৪১,০০১৬ নং এর একটি তেলের লরি থেকে তাদের তেল নামাতে দেখেন স্থানীয়রা।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে আপ্রান চেষ্টা করে এক দেড় ঘন্টার মধ্যেও আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি। আগুন নিভাতে যতই পানি দেয়া হয় ততই তেল এবং পানির সংমিশ্রনে আগুনের ভয়াবহতা আরো বেড়ে উঠে।
পানি এবং বালু দিয়ে আগুন নেভানোর জন্য অরো এক ঘন্টা চেষ্টা চালায় প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
পরে পানির সাথে ফোম (তেলের আগুন নিয়ন্ত্রণ করার পদার্থ) স্প্রে করে প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর রাত তিনটার দিকে আগুন নিভাতে সক্ষম হয়।
স্থানীয়রা জানায় পুড়ে যাওয়া গোডাউনের গ্যালনের ভিতর বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় কয়েক লাখ টাকার তেল রয়েছ্ ে। এবং একটি পিকাআপ ভ্যান ও দুটি মোটর সাইকেল ও ছিলো। যা আগুনে পুড়ে যায়।
এছাড়া তার পার্শ্ববর্তী আতিকুর রহমান বাবুল জানায় আগুনে তার তানিসা মেডিসিন কর্ণার ও সায়মন ট্রেডাসসহ তার পুরো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
তিনি জানান এতে তার প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অগ্নিকান্ডে মমিন বেপারির মুদি দোকান এবং পুড়ে যাওয়া সেলিনা ভবনসহ ক্ষযক্ষতির মূল্য প্রায় এক কোটি টাকার মতো হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:৩০ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ