স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চাঁদপুর:
চাঁদপুর বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে আটক ইংরেজি শিক্ষক অঞ্জন দেকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। এর আগে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী স্কুলকক্ষ ও তার বাড়িঘর ভাংচুর করে।
বৃহস্পতিবার সন্ধায় তাকে গ্রেফতার করে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) মডেল থানা পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
অপরদিকে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান উর্মির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
আদালত তাকে গাজীপুর কোনাবাড়িতে অবস্থিত কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
ইতোমধ্যে পুলিশ ছাত্রীটির মেডিকেল পরীক্ষা করেছে। মেডিকেল রিপোর্ট দু এক দিনের মধ্যে জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে আটক শিক্ষককে ছেড়ে দেয়ার জন্যে পুলিশের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ ছিলো বলে জানা গেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ে কথিত নেতা পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ করেছে এমন অভিযোগে এক নেতার বিরুদ্ধে জিডিও করেছে পুলিশ।
ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলা নং-১৯ তাং ১০-০৯-২০১৫।
থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত সাত-আট মাস ধরে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ওই স্কুল ছাত্রীর সাথে অবৈধভাবে অনেকটা হুমকি দিয়ে শিক্ষক অঞ্জন অবৈধ সম্পর্ক করেন। ঘটনাটি বৃহস্পতিবার সকালে জানাজানি হলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ধর্ষক শিক্ষকের কোচিং সেন্টার ভাংচুর করে। এর আগে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির পরপরই ওই শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পালিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি বালিয়া থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানান, অভিযুক্ত রঞ্জন দে এর দুটি বিয়ে করেছে। ধর্ষণের শিকার ওই প্রতিষ্ঠানের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অঞ্জন দে (৩৮) নামে ইংরেজি শিক্ষক বেশ কয়েক মাস যাবৎ তার কোচিং সেন্টারে এবং শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন।
এর সুবাদে মুসলিম ছাত্রীটির পরিবারের সাথে এ শিক্ষকের সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাত্রীর বাবা প্রবাসে থাকেন। ছাত্রীর মায়ের অনুপস্থিতিতে শিক্ষক অঞ্জন দে নানা প্রলোভনে প্রায়ই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে শারীরীক সম্পর্ক করতো। গত মঙ্গলবারও ওই শিক্ষক ছাত্রীটির সাথে তাদের বাড়িতে একই ঘটনা ঘটায়। ঘটনাটি মাকে ওই ছাত্রী জানালে ছাত্রীর মা পরদিন কলেজ অধ্যক্ষকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানান।
এ খবর জানার পর লম্পট শিক্ষক অঞ্জন দে একটি পদত্যাগপত্র লিখে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে লোক মারফত পাঠিয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই ছাত্রী তার মাকে নিয়ে লিখিতভাবে তার উপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষক অঞ্জন দের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট।
পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বসে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে জেলা শহর থেকে কয়েকজন ফটো সাংবাদিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে ঘটনা জানতে চাইলে তখনই ঘটনা অনেকটা ফাঁস হয়ে যায়।
তবে একটি গ্রুপ চেয়েছিলো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু সংবাদকর্মীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরই কলেজের অধ্যক্ষ পুলিশকে বিষয়টি জানাতে বাধ্য হয়।
চাঁদপুর মডেল থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মোঃ মামুনুর রশিদের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ছাত্রীটির মেডিকেল রিপোর্ট হয়েছে। আগামী ১৩ তারিখে ডাক্তারদের রিপোর্টের পর সবকিছু ভালোমতো জানা যাবে। মেয়েটিকে আদালতে জবানবন্দির জন্য পাঠানো হয়েছে। আর আটক শিক্ষককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিচুল হক জানান, “আমরা ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক অঞ্জন দেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ওই ছাত্রীটির সাথে সে এ ধরনের খারাপ কাজে জড়িত ছিলো। ছাত্রীটি পুলিশের কাছে ওই শিক্ষকের অপকর্মের কথা বলেছে। সে খুব খারাপ ধরনের একজন শিক্ষক ছিলো ”
মামলার তদন্তকারী কর্মকতা এসআই জাহাঙ্গীরের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, “গত বছর থেকে ওই শিক্ষক মেয়েটির সাথে খারাপ কাজ শুরু করেছে বলে মেয়েটি আমাদেরকে জানিয়েছে। ইতোমধ্যে মেয়ের গলার স্বর্ণের চেইন ও মেয়ের মার কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই শিক্ষক। মডেল থানার অফিসার ইনচার্জসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি ”
চাঁদপুর টাইমস- ডিএইচ/২০১৫।