চাঁদপুর

চাঁদপুরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ভুল নিরিক্ষা : রক্ষা পেলো মা-শিশু

চাঁদপুরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ব্লাড নিরিক্ষায় ভুল প্রতিবেদনের কারণে নবজাতক শিশু ও মা মৃত্যুর হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ মে) রাতে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার দাস পারায় সূর্যের হাসি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।

রক্তের গ্রুপ নিরিক্ষা করে গর্ভবতী সুমী বেগমকে ’ও’ নেগেটিভ লিখে রিপোর্ট দেয়। কিন্তু সুমি বেগমের রক্তের গ্রæপ ছিলো ’ও’পজেটিভ যা শহরের যমুনা ও আলআমিন হাসপাতালে সাত বার পরীক্ষা করে প্রমাণ পাওয়া যায়।

গতকাল সোমবার গর্ভবতী সুমী বেগম অসুস্থ হয়ে পরলে সন্তান প্রসবের জন্য আলআমিন হাপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবারের লোকজন।

চিকিৎসক সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নেয়। তার রক্ত শূন্নতার কারণে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের রক্তের গ্রুপ টেস্ট রিপোর্টের কাগজ দেখে হাসপাতালের ডাক্তার অপারেশন করার পূর্বেই এক ব্যাগ ’ও’নেগেটিভ রক্ত আনতে বলে। অপারেশন করার পূর্বেই সুমি বেগমের স্বজনরা ‘ও’নেগেটিভ রক্ত সংগ্রহ করে।

আলআমিন হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ও ল্যাব টেকনিশিয়ান রুগীর রক্তের গ্রæপ পূনরায় পরীক্ষা করে দেখতে পায় তার রক্তের গ্রæপ ‘ও’পজেটিভ। সুমির রক্তের গ্রæপ আবারো নিশ্চিত হবার জন্য যমুনা হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করে ’ও’পজেটিভ দেখতে পায়। একে একে সাতবার রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা করে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে রক্তের গ্রæপ টেস্ট রিপোর্ট তা যে ভুল তার প্রমাণ মিলে।

এদিকে তাৎক্ষণিক রক্ষা না পেয়ে গর্ভবতী সুমী বেগম প্রসব যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকে। সুমির রক্তের গ্রুপ নিশ্চিত হয়ে হাসপাাতালে থাকা তার আত্বীয় বিল্লাল মুন্সী তার শরীর থেকে ‘ও’পজেটিভ রক্ত দিয়ে সুমিকে শেষ রক্ষা করে।

অবশেষে সিজারের মাধ্যমে সুমি বেগমের পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ভুল রিপোর্টের কারণে ও অতি বিলম্বে রুগী ও তার পরিবারের লোকজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জানা যায়, পুরানবাজার দাস পাড়া আমজাদ আলী রোডে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সূর্যের হাসি ক্লিনিক দেওয়া হয়।

সূর্যের হাসি ক্লিনিকের কর্মকর্তা মাঠ পর্যায় কাজ করতে কয়েকজন পেরামেডিকেল মহিলা নিয়োগ দেয়। তারা পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন বাসায় গিয়ে গর্ভবতী মহীলাদের বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষা করতে ও সেবা নিতে বলে।

তেমনি গত কয়েকদিন পূর্বে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত দিলরুবা বেগম পুরানবাজার মমিনবাগ রিনা ভিলার ভাড়াটিয় সুমী বেগমের বাসায় যায়। দিলরুবা বেগম পরিক্ষা করে বিভিন্ন টেস্টের নামে সুমী বেগমের কাছ থেকে ১৭৭০ টাকা নেয়। পরে দিলরুবা বেগম তাদের টেকনিশিয়ান রাজশাহীর মজিবুর রহমানের মাধ্যমে সুমীর রক্তের গ্রæপ ও বিভিন্ন পরিক্ষা করায়। অদক্ষ টেকনিশিয়ান মজিবুর রহমান সুমী বেগমকে ’০’নেগেটিভ লিখে রিপোর্ট দেয়।

সেই ভুলের কারনে অপারেশন করার সময় রক্তের গ্রæপ নিয়ে ডাক্তারের হিমশিম খেতে হয়।

ভূক্তভূগী সুমী বেগম জানায়, সূর্যের হাসি ক্লিনির মাঠ পর্যায় কর্মী দিলরুবা বেগম বিভিন্ন টেস্টের নামে ১৭৭০ টাকা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দেয়। টাকা নেওয়ার পরে তাকে অনেক ফোন করেও তার দেখা মিলেনি।

এদের ভুল রিপোর্টের কারনে অপারেশন করার সময় রক্ত নিয়ে জটিলতায় অল্পের জন্য মৃত্যু দেখে রক্ষা পেলাম। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আর যাতে করে কোন গর্ভবতী মহিলার ক্ষতিসাধন না হয়।

সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ল্যাব টেকনিশিয়ান মজিবুর রহমান তার এই চরম ভুল স্বিকার করে ও এই ধরনের ভুল আর হবে না বলে জানায়।

সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার শাহেদ রিয়াজ জানায়, সুমী বেগমের রক্তের গ্রæপ পরিক্ষাটি ভুল হয়েছে। আমাদের টেকনিশিয়ান মজিবুর রহমান ভুল করেছে। আর বিভিন্ন পরিক্ষার নামে যে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে তা প্রমান করতে পেরামেডিকেল দিলরুবাকে নিয়ে সুমি বেগমের বাসায় যাবো।

এদিকে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ম্যানেজার শাহেদ রিয়াজ বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। প্রতিবেদককে টাকার বিনিময়ে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা চালায়।

প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম

Share