সারাদেশ

ইংরেজিতে ডুবলো কুমিল্লা বোর্ড : ফেল ৩৮ হাজার

চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় সব সূচকেই কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয় হয়েছে। পাসের হার,জিপিএ-৫ ও শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এ বছর কমেছে। শূন্যভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও তিনটি। ইংরেজিতে ফেলের কারণে এ বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে।

রোববার (২৩ জুলাই) দেড়টায় বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ। সারা দেশের ৮টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লার ফলাফল সবার নিচে। গেলো ১০ বছরের মধ্যে এ বোর্ডে এইচএসসিতে এত খারাপ ফল হয়নি।

ফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মমিনুল হক চৌধুরী বিকেলে বলেন,‘ইংরেজিতে শিক্ষকের অভাব। যাঁরা আসেন,তাঁদের মান অত্যন্ত নিম্ন। শিক্ষকতাকে এখন পেশা হিসেবে দেখা হয় না। কোচিং,প্রাইভেট-বাণিজ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। যে কারণে ফল তলানিতে ঠেকেছে।’

এ ছাড়া বোর্ডের বর্তমান ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত দুর্বল। তারা উদ্যোগ নিলে কলেজগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি ফলাফল ভালো হতো। সব মিলিয়ে জিপিএর কারণে উচ্চ শিক্ষায় কুমিল্লার শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়বে।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,‘এ বছর কুমিল্লা বোর্ডে ১ লাখ ৩শ’৭২ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪৯ হাজার ৭ শ’৪ জন পাস করেন। পাসের হার ৪৯ দশশিক ৫২। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫৬ এবং মেয়েদের পাসের হার ৪৯ দশমিক ৪৮।

বিজ্ঞানে ২০ হাজার ১শ’৬৪ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয় ১৪ হাজার ৬শ’৬৩ জন। পাসের হার ৭২ দশমিক ৭২। এর মধ্যে ছেলেদের হার ৭১ দশমিক ৯২, মেয়েদের হার ৭৩ দশমিক ৭২।

মানবিকে ৪২ হাজার ৩শ’৯৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১৬ হাজার ২শ’৭২ জন। পাসের হার ৩৮ দশমিক ৩৮। ছেলেদের পাসের হার ৩৬ দশমিক ৮৬, মেয়েদের পাসের হার ৩৯ দশমিক ২১।

ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৩৭ হাজার ৮শ’১৫ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১৮ হাজার ৭শ’৬৯ জন। পাসের হার ৪৯ দশমিক ৬৩। ছেলেদের পাসের হার ৪৬ দশমিক ৭৪ এবং মেয়েদের পাসের হার ৫৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এ বছর ৬৭৮ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর মধ্যে ছেলে ৩২৫ ও মেয়ে ৩৫৩ জন। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ৫৫৭ জন, মানবিকে ৩৯ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৪৯। এবার কমেছে ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছর এক হাজার ৯১২ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

ইংরেজিতে ফেল ৩৮ %

কুমিল্লা বোর্ডে এ বছর ইংরেজিতে ১ লাখ ৩শ’৮১ জন পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে ৩৮ হাজার ৮৩ জন। পাস করেছেন ৬২ হাজার ২শ’৯৮ জন। পাসের হার ৬২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ফেল করেছেন ৩৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী।

৩ কলেজ থেকে পাস করেনি কেউ

ফেনীর বেগম শামসুন্নাহার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফয়জুমিয়ারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আপার মডেল কলেজ থেকে কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেনি। কলেজ তিনটিতে যথাক্রমে ১৪,৪ ও ১৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।

৭ কলেজে শতভাগ পাস

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এ বছর ৭ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো কুমিল্লার ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ,কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ড.মনসুর উদ্দিন কলেজ,কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ছোটতুলাগাঁও মহিলা কলেজ,কুমিল্লা মডেল কলেজ ও চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার নিন্দুপুর এম কে আলমগীর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত বছর ৮ টি কলেজ থেকে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছিলেন।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন,‘ইংরেজিতে ৩৮% শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ আরও ৪০ টি বিষয়ে কমবেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এতে করে সার্বিক পাসের হারের ওপর প্রভাব পড়েছে।

যে কারণে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার কম।’

ডেস্ক নিউজ
:আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:০০ পিএম,২৩ জুলাই ২০১৭, রোববার
এজি

Share