Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা
চাঁদপুরে সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা

চাঁদপুরে সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা

দেলোয়ার হোসাইন:

আর ক’দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলমানদের ২য় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। এ দিনটিতে মুসলমানরা ঈদুল আযহার নামাজ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করে। আর পশু কোরবানির কাজে ব্যবহৃত সব অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁদপুরের কামার শিল্পীরা।

দোকানের সামনে সাজসজ্জা করে দিনরাত কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে দগদগে লাল লোহার খ- পেটাচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন শান আর কেউবা দিচ্ছেন ‘আইতনা’ দিয়ে কয়লার আগুনে বাতাস কিংবা সাহায্য করছেন সহকর্মীদের।

সবারই হাত-মুখ, পা কালিতে ভরা। তীব্র গরমে শরীর ঘামছে দর দর করে। কিন্তু বৈদ্যুতিক কিংবা হাতপাখার বাতাস নেয়ারও কোনো অবস্থা নেই। প্রায় সবার’ই কাপড়জুড়ে বা পরনের লুঙ্গির চেহারাও ময়লায় বেশ ভারি। ব্যস্ততার চাপে ক্লান্তি যেন কারও কাছেই ঠাঁই পাচ্ছিল না। এটি চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন কামারপাড়ার চিত্র। আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই তাদের এ ব্যস্ততা।

দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা। আরাম-আয়েশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়মতো খাদ্যগ্রহণ, সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প-গুজব, সবই বন্ধ। কেবল সহকর্মীর সঙ্গেই চলছে একটু-আধটু কথা, তাও সংশ্লিষ্ট কাজের। আর কিছু কথা হয় ক্রেতার সঙ্গে।

চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন কামারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানালেন তাদের ব্যস্ততার কথা। বললেন, সারা বছরই কামারদের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তবে কোরবানি ঈদের সময় চাহিদা থাকে খুব বেশি। তাই সে অনুযায়ী কাজ করতে হয় দীর্ঘ সময়। কোনো কোনো সময় ১৬-১৮ ঘণ্টা টানা পরিশ্রম করেও অর্ডারের সময়ানুযায়ী মাল দিতে হিমসিম খেতে হয়।

তারা জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদ’ই থাকে মূল টার্গেট। সারা বছর ব্যবসায়ের বড় লভ্যাংশটা এ সময়ই ওঠে। তবে এ বছর কামাররা বেশ হতাশার কথা শোনালেন কয়লা নিয়ে। লোহার দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও কয়লার দাম বেগতিক। কয়লার দাম বেড়েছে গত বছরের দ্বিগুণ।

কোরবানির পশু জবাই, মাংস-হাড় কাটার জন্য বিভিন্ন ধরনের এবং দামের লৌহজাত সামগ্রী বানাচ্ছেন। কেউবা কারখানার পাশে বসিয়েছেন ছোট্ট দোকান। এসব দোকানে আকারভেদে বিভিন্ন দামের ছুরি, দা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, মাঝারি আকারের জবাইয়ের ছুরি ২০০-৫৫০, বড় ছুরি ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মাংস কাটার কিংবা চামড়া ছাড়ানোর ছোট ছোট ছুরি। এসব ছুরির আবার বিভিন্ন নামও রয়েছে।

চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিপরীত পাশে চাঁদপুর কর্মকার স্টোরের মালিক রবি কর্মকার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বেড়েছে বেশি। গত বছর বস্তাপ্রতি ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনলেও এবার ৮০০-৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বেচাকেনার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রবি কর্মকার জানান, নতুন মালও বিক্রি হয় এবং অনেকে আবার পুরোনো মাল হাতুড়িপেটা করে ধার দিতে আসে, সবমিলিয়ে মোটামুটি চাহিদা রয়েছে। তাছাড়ার কয়লার দাম বাড়লেও আমরা পণ্যের দাম তেমন একটা বাড়াইনি।

ছোট সাইজের প্রতিটি ছুরি ১৫০-৩৫০, বড় সাইজের ছুরি ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন আকারের পা যুক্ত দায়ের দাম ১০০ থেকে ১ হাজার আর পা ছাড়া ২৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। চাপাতি ৫০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী’ই চাপাতি বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে। তারা জানান, চাপাতিতে লোহা বেশি লাগে।

জানা গেছে, কাঁচা লোহার তৈরি চাপাতির কেজি ২০০-৩৫০, ইস্পাতের ৫০০-৬৫০ টাকা। এছাড়া দেশীয় তৈরি চাইনিজ কুড়ালের দাম ৫৫০-৭৫০ টাকার মধ্যে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে অর্ডারেও মাল সরবরাহ করেন কামাররা।