চাঁদপুরে সর্বমহলে প্রশংসিত ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ

চাঁদপুরের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। যিনি মাত্র ৫ মাস আগে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। নিয়মিত রুটিন কাজের বাহিরেও তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসতি হচ্ছেন। শুধুমাত্র প্রশংসাই নয়, মানবতার দৃষ্টান্তও একের পর এক তৈরী হচ্ছে। করোনার এমন কঠিন সময়েও মাত্র ৫ মাসেই যিনি কর্মদক্ষতা দিয়ে মন জয় করেছেন রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের।

মানুষের চাওয়াগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে চান বলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমার প্রশাসনিক কাজের মাধ্যমে যাতে আমার এলাকার মানুষগুলো উপকৃত হয়, এটি হচ্ছে আমার মূল ফোকাস। তাদের উপকার ও সেবাকে সহজ করার জন্য আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যত কাজ আছে করতে চাই এবং আমিও শুরু করেছি। আমার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি কাজ করে, সেটি হলো জনগণের দৌড়গড়ায় সৎ ভাবে সঠিক সেবা পৌঁছে দেওয়া। যাতে মানুষ কোনরূপ হয়রানী না হয়ে সঠিক সেবা এখান থেকে নিয়ে যেতে পারে।

অসহায়দের পাশে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক

জেলা প্রশাসক বলেন, আমি জবাবদিহি মূলক একটি প্রশাসন গড়ে তোলতে চাই। আমি প্রতি বুধবার এখানে গণসুনানি করি। অনেকে বিভিন্ন দপ্তরে হয়রানীর শিকার হন, তাদের জন্য আমার দ্বার খোলা। আমি যে শুধু বুধবারই শুনি তা কিন্তু নয়, অন্য সময়ও আসলে আমি মানুষের কথা শুনি এবং দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করি। যদি কোথাও কোন ধরনের অসামঞ্জস্যতা দেখি, সেখানে আমি সমাধানের জন্য সচেষ্ট হই।

চাঁদপুর ব্র্যান্ডিং ও পর্যটনময় গড়তে খান মজলিশ বলেন, চাঁদপুরে ব্র্যান্ডিং ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রথমেই আমরা বড়স্টেশন মোলহেডকে চিহিৃত করেছি। আমরা যদি চাঁদপুরের মানুষকে কোথাও নিয়ে যেতে চাই, প্রথমেই কিন্তু মোলহেডের নাম চলে আসে। তিন নদীর মোহনায় যদি আমরা যাই, সেখানে পর্যটকদের জন্য মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলতে হবে। তার জন্য আমরা সেখানে একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে কাজ করছি। এছাড়া পর্যটকরা যে সকল স্থানে ঘুরতে যাবে, সেখানকার প্রত্যেকটি স্থানেই নাম ফলক থাকতে হবে। মোলহেডে কিন্তু প্রবেশ পথের গেইট নেই এবং বিভিন্ন হকার ও ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন মানুষ সেখানে এমন ভাবে অবস্থান নেয়, যে কারনে পর্যটকরা ভোগান্তির শিকার হয়।

এ জন্য আমার মূল কাজ হচ্ছে এই স্থানটিকে আমি একটি পর্যটন নির্ভর স্থান গড়ে তোলবো। যাতে পর্যটকরা এখানে এসে বুজতে পারে একটি পর্যটনময় এলাকায় তারা এসেছে। এখানে এসে পর্যটকদের জন্য আলাদা বসার স্থান থাকবে এবং বাচ্চারা যাতে খেলাধুলা করতে পারে এমন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া মোলহেডে প্রবেশ পথে একটি সেলফি কর্ণার করা হয়েছে, সেটির অসামাপ্ত কাজটি দ্রæত সম্পন্ন করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি।

আরও পড়ুন…চাঁদপুর টাইমসে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসকের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ

চাঁদপুর জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করণ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুকমুক্ত করণ একটি ফান্ট ছিলো, যা আমার আগের জেলা প্রশাসক করোনাকালীন সময়ে খরচ করে গিয়েছেন। ওই ফান্টের অধিকাংশ টাকাই তিনি খরচ করে গেছেন। সেখানে এখন তেমন টাকা নেই। আমরা একটি সভা করেছি, যাতে পর্যায়ক্রমে ভিক্ষুকদের পুর্নবাসন করা যায় কিনা। আমরা ২০ জন ভিক্ষুককে চ‚ড়ান্ত করেছি, তাদেরকে কি জাতিয় কাজ দিলে তারা আর ভিক্ষা করবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ভিক্ষাটি একটি মানষিক সমস্যা। তাদেরকে ভিক্ষা না দিতে অন্যকে উৎসাহ দিতে হবে। কারন তাদের ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতেই আগ্রহ বেশি। এ জন্য তাদের প্রতি পর্যবেক্ষন এবং জীবিকা নির্বর কাজ দিতে হবে। আমরা সবকিছু নিয়েই মূলক কাজ করছি, শুধু করোনার কারনে আমাদের কার্যক্রমগুলো একটি পিছিয়ে গেছে। আশা করি সামনে সকল কাজই পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হবে।

অঞ্জনা খান ২০০৩ সালে ২২তম বিসিএস প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হন।

এরপর মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অঞ্জনা খান মজলিশ। পরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব হন তিনি। এ পদে দায়িত্ব পালন শেষে চাঁদপুরের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান অঞ্জনা খান মজলিশ।

প্রতিবেদক:শরীফুল ইসলাম,৯ জুন ২০২১

Share