চাঁদপুর সদর

চাঁদপুরে সরকারি খাল ভরাট : জলাবদ্ধতায় ৫০ একর কৃষি জমি

চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে সরকারি খাল বালু দিয়ে ভরাট করার কারণে ৫০ একর জমি জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এতে করে এ বছর ২ শতাধিক কৃষক মৌসুমী সব্জিসহ রোপন আমন ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ওই এলাকার গফুর আলী শেখের বাড়ীর রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, সরকারি খাল ভরাট করে পাকা দেয়াল করা হয়েছে এবং ওই স্থানে থাকা কাঠের পুলটির কাঠ, বাঁশ বালু ভরাটকারী সম্পত্তির মালিক ও তার লোকজন নিয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র কাঠের পুলের উপরের কাঠগুলো রাস্তার পাশে পড়ে আছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম বেপারী জানান, বহু বছর যাবৎ এই সরকারি খালদিয়ে ফসলি জমির পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হতো। কিন্তু প্রভাবশালী লোকজ ড্রেজার দিয়ে সরকারি খাল ভরাট করার কারণে কৃষকরা এখন চরম বিপাকে পড়েছে। স্থানীয় আলী আকবর খান বাড়ীর হারুন খান খালসহ জমি ভরাট করার সময় কৃষকরা বাঁধা দিলে তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। জলাবদ্ধতা দূর করার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

কৃষক আব্দুল বাতেন বেপারী জানান, তিনি প্রতি বছর এই এলাকায় ৪ একর জমিতে মৌসুমী সব্জির চাষ করতেন। এতে তিনি খরচ বাদে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করতেন। এ বছর তিনি রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে কোন চাষাবাদ করতে পারছে না।

কৃষক সফিক বেপারী, আঃ বারেক, শাহ আলম, খোকন খান, মান্নান পাটওয়ারী, শহীদ খান, মাহবুব মিজি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, খাল ভরাটকারী প্রভাবশালী হওয়ার কারণে আমরা কিছু বলতে পারিনি। গত ৬ মাস পূর্বে ইউপি নির্বাচনের সময় যখন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত। ওই সুযোগে খাল ভরাটকারী হারুন খান ড্রেজার দিয়ে খাল ও জমি ভরাট করেন। আমাদের জমিগুলো জলাবদ্ধ হওয়ার কারণে এখন আমরা বেকার হয়ে পড়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ছলেমান মিজি জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে সরকারি খাল এবং কাঠেরপুল ছিলো। হারুন খান কোন প্রকার সরকারি অনুমতি ছাড়াই খাল ও জমি ভরাট করেছেন। এই অঞ্চলের প্রায় ২শতাধিক কৃষক শাক-সব্জি চাষ করে এলাকার চাহিদা মেটাতো। কিন্তু এখন সব কৃষকই হতাশাগ্রস্থ।

এই বিষয়ে ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, নির্বাচনের সময় হারুন খান খাল ও জমি ভরাট করেন। সে আমাদের কাঠের পুলের কাঠসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়েগেছে। কৃষকরা এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দরখাস্ত করেছেন, সেই দরখাস্তের একটি অনুলিপি আমাকেও দিয়েছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলাপ করবো।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত হারুন খাঁর বাড়িতে গিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, অনুমতি ছাড়া সরকারি খাল ও জমি ভরাট করা অবৈধ। তারপরে কৃষকদের ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে আরো বড় ধরনের অন্যায় কাজ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমি এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উদয়ন দেওয়ান বলেন, ‘কৃষকদের জমি থেকে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য আমার কাছে শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত একাটি আবেদন জমা হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়ালি উল্যাহকে সরেজমিন দেখে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:২০ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share