চাঁদপুরে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ চাওয়ায় আপন বড় ভাই কর্তৃক ছোট ভাই এবং তার স্ত্রী-সন্তানকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৬ আগস্ট শনিবার রাতে সদর উপজেলা কল্যাণপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বকাউল বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
আহতরা বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। অমানবিক এ ঘটনার একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
আহতরা হলেন, চাঁদপুর আদালতের সহকারি আইনজীবী আরিছুর রহমান (৩৪), তার স্ত্রী আফরিন আক্তার (২০) এবং তাদের দেড় বছরের শিশু পুত্র আরহাম আদিল আবিদ। আহত আরিছুর রহমান কল্যানদী গ্রামের বকাউল বাড়ির মরহুম আহসান উল্লাহ মাস্টারের পুত্র।
আহতদের মধ্যে আরিছুর রহমানের অবস্থা বেশ অসংখ্যজনক। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আরিছুলের মাথার বড় অংশ মারাত্মক যখম হয়েছে। মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো সেলাই করা হয়েছে।
আহত আরিছুর রহমান জানান, আমার দুই বছর বয়সে বাবা মৃত্যুবরণ করেন। আমরা ৪ ভাই। বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাই অনিস বকাউল বাবার রেখে যাওয়া ঢাকা এবং বাবুরহাটের সম্পদগুলো একাই বিক্রি করে দিয়েছেন। অর মেজো ভাই মাওলানা আতিক বকাউল নানার বাড়ি থেকে পাওয়া মায়ের (ওয়ারিশের) সম্পদগুলো একাই আত্মসাৎ করে ফেলেছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমরা পিতার রেখে যাওয়া ১২০ শতক জমিতে ৪ ভাই বসবাস করছি। এই সম্পত্তির ভাগ করা কথা বলায় গত বছরের ৭ অক্টোবর আমার বড় ভাই আনিছ বকাউল আমার ঘরে হামলা করে আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার আমি তাৎক্ষণিক স্থানীয় মেম্বারকে অবগত করেছি। অথচ এক বছরেও তার কোন সুরাহা হয়নি।
শনিবার আমার মামা মাসুদুর রহমান আমাকে ডেকে বড় ভাইয়ের ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় আমার স্ত্রী পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করেই তারা আমার স্ত্রীকে মোবাইল ভিডিও করছে সন্দেহ করে বেদমভাবে পিটাতে থাকে। আমি স্ত্রীকে বাঁচাতে গেলে তারা আমার উপর হামলা করে। বড় ভাই আনিছ বকাউল, মাওলানা আতিক বকাউল, ভাবি শারমিন বেগম ও সাহিদা বেগম মিলে আমাদের বেদম পিটিয়ে আহত করে। আনিস ভাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কপালে এবং অতিক ভাই মাথায় কুপিয়ে যখম করে।
আহত আফরিন বেগম জানান, আমার দুই ভাসুর এবং তাদের স্ত্রী হঠাৎ করেই আমার উপর হামলা করে। তারা আমার কোলে সন্তানকে কোল থেকে টেনে নিয়ে মাটিতে আঁছার মারে।
আহতদের এক ভাই আরিফুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণাৎ স্থানীয় মেম্বারকে সাথে নিয়ে আমার ভাই আরিফুল রহমান এবং তার স্ত্রীকে উদ্ধার করি। গিয়ে দেখি তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। তাৎক্ষনাত আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।
তিনি আরো বলেন, আমার বড় ভাইদের এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমি মর্মাহত হয়েছি। এটি কোন ভাবেই কাম্য নয়। মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে না। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং দোষিদের শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয়ে কল্যাণপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম বকাউল বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক এবং অমানবিক। আমি চাই স্থানীয়ভাবে এটি সমাধান হোক এবং আহতরা যাতে ন্যায় বিচার পায়।
এই ঘটনা আহতদের পক্ষ থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩