সংবাদপত্র সম্পাদক ও প্রকাশক, সাংবাদিক,সংবাদপত্র পাঠক, সংবাদপত্র বিলিকারক ও সংবাদকর্মীসহ সকল গণমাধ্যম কর্মীদের অকৃত্রিম বন্ধু ও প্রিয়জন ছিলেন নূরনবী পাটওয়ারী।
শুধু তাই নয় চাঁঁদপুর জেলা শহরের ভেতর সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষক কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও প্রতিভাধর সৃজনশীল ব্যক্তিদের কাছেও নূরনবী পাটওয়ারী ছিলেন সু-পরিচিত একজন ব্যক্তি।
তিনি চাঁদপুরে সংবাদপত্রের এজেন্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর এ সংবাদপত্র এজেন্ট ব্যবসা পরিচালনার ফলে চাঁদপুরের সকল প্রকার সুধিজনদের সাথে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সুহৃদয় সম্পর্ক। চাঁদপুরের সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাঁকে এক নামেই চিনতেন।
নূরনবী পাটওয়ারীর আধিনিবাস নোয়াখালীর চাটখিলে হলেও ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারিতে চাঁদপুর শহরের জামতলার জেটিসি কলোনিতে তিনি জম্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম তসলিম উদ্দিন পাটওয়ারী । মাতা নূরজাহান বেগম।
ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে তাঁর বাবা চাঁদপুরের জেটিসি অর্থ্যাৎ ৫নং ঘাট জুট কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তার পাশাপাশি চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে ‘দোয়াগঞ্জল’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।
নূরনবী পাটওয়ারী আক্কাছ আলী রেলওয়ে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও একাডেমি থেকে এসএসসি পাশ করেন। পিতার মৃত্যুর পর ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে চাঁদপুর কণ্ঠের বর্তমান প্রধান সম্পাদক ও তৎকালিন দৈনিক জনতার জেলা প্রতিনিধি কাজী শাহাদাতের সার্বিক অনুপ্রেরণায় ও সহায়তায় তিনি নিজেকে সংবাদপত্র এজেন্ট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করেন।
তিনিই চাঁদপুরে এ এজেন্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রধান ব্যক্তিত্ব। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এক কথায় বলা যায় প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদপত্রের জগত ছিলো স্বর্ণযুগ।
কেননা ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রঙে-ঢঙে প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদপত্রগুলো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটগুলো দেশের মানুষকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। সংবাদপত্রের কারণে চাঁদপুরেও এর হাওয়া লেগেছে।
প্রতিদিনই এক এক অবয়বে পত্রিকাগুলো দৃষ্টিনন্দন ‘হেডলাইন’ নিয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। কিন্ত কালের প্রেক্ষাপটে ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন সংবামাধ্যমের কারণে পাঠকরা নিজ ঘরে বসেই সংবাদ পাচ্ছেন। দেশের যে কোনো অঞ্চল কিংবা নিজ জেলার যে কোনো সংবাদ মুহূর্তের মধ্যেই হাতের ডিভাইসে পৌঁছে যাচ্ছে। যার ফলে প্রিন্ট মিডিয়ার আপেক্ষিক গুরুত্ব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব বর্তমানে কিছুটা হলেও দেখা দিয়েছে ।
১৯৯০ সাল থেকে চাঁদপুরের সংবাদপত্র জগতের উত্তাল মুহূর্তে নূরনবী পাটওয়ারী ‘মেসার্স পাটওয়ারী নিউজ পেপার এজেন্সি ’ নামে একটি সংবাদপত্র এজেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। যার প্রাথমিক রূপকার ছিলেন কাজী শাহাদাত। বর্তমান চাঁদপুর বার্তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদ পাটওয়ারীও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বলে বর্তমানে দায়িত্ব থাকা জসিম মেহেদি জানিয়েছেন।
আশি’র দশকে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলা, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক প্রভাত, দৈনিক শক্তি, ডেইলি ওভজারভার, নিউনেশন, সাপ্তাহিক বেগম, চিত্রালী,রূপালী, রোববার, ইত্যাদি পত্রিকাগুলো খুবই রমারমা সংবাদ পরিবেশন করতো। ওইসময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কারণে পত্রিকার কাটতি ছিলো অকল্পনীয়।
এ ছাড়াও ইরান-ইরাক যুদ্ধ,ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ, ফিলিস্থিনিদের দীর্ঘ সংগ্রাম, লিবিয়ার কর্ণেল গাদ্দাফী-ইরাকের সাদ্দাম এর পতন ইত্যাদি সংবাদগু চমকপ্রদভাবে পত্রিকাগুলোতে আসতো।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোও গুরুত্বসহকারে প্রকাশ হতো। পাঠকগণ এ সব সংবাদ জানার জন্যে আগ্রহ করে পত্রিকা কিনে নিতো।
প্রায় অর্ধ-শত দৈনিক সংবাদপত্র, মাসিক ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোর একমাত্র এজেন্ট ছিলেন নূরনবী পাটওয়ারী। পত্রিকা আসার আগ মূহূর্তে শত শত পাঠক, সংবাদকর্মী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ তার এজেন্সির সামনে পত্রিকার জন্যে ভিড় জমাতো।
প্রতিদিন সকাল ৯টার ট্রেন লাকসাম থেকে ছেড়ে চাঁদপুর আসামাত্র চাঁদপুর শহর জমজমাট হয়ে উঠতো। আবার বিকেল ৩ টার সময় একটি ট্রেন পূর্বদিকে চলে যেত তখন পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও অন্যান্য ধরণের বই কেনার হিড়িত পড়ত । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চাঁদপুর সরকারি কলেজে অধ্যয়ন কালে প্রতিদিনই বেশ কটা পত্রিকা ঘাটাঘাটি করে ইত্তেফাক বা আজকের কাগজ পত্রিকা কিনে ট্রেনে সাহাতলী চলে আসতাম । সেই থেকেই নুরনবী পাটওয়ারীর সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠে।
যার ফলে নূরনবী পাটওয়ারী সংবাদপত্র পেশায় খুুব সুনাম অর্জন করেন এবং সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে ঢাকাসহ স্থানীয় সকল প্রকার পত্রিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছের প্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
তিনি সকলের সাথে সু-সর্স্পক বজায় রেখে স-ুদীর্ঘ ২৫-২৬ বছর চাঁদপুর রেলওয়ে কোর্ট স্টেশনে নিউজ পেপার এজেন্সটি পরিচালনা করেন।
এ প্রতিষ্ঠানে ২৫ থেকে ৩০ জন পত্রিকা বিলিকারক কাজ করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন। জীবন-জীবিকার অন্বেষণের খোঁজ পেয়েছেন তারা।
পত্রিকার মালিক বা সম্পাদকগণ তাদের পত্রিকা চালাতে সহায়তা ও অর্থনৈতিক সার্পোট পেয়ে আসছেন। আজ হয়তোবা বয়সের কারণে তা এখন অনেকেই এ পেশা ছেড়েছেন।
চাঁদপুরের সংবাদপত্র ব্যবসার এ দিকপাল ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন। তার সহধর্মীনির নাম পারুল বেগম। ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ৩ মাসব্যাপি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
বর্তমানে তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মের্সাস পাটওয়ারী নিউজ পেপার এজেন্সটি চাঁদপুর সরকারি কলেজে তার একমাত্র ছেলে ¯œাতক পড়ূয়া হাবিবুর রহমান শুভ ও তার ভাগ্নে বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার ও মের্সাস পাটওয়ারী নিউজ পেপার এজেন্সির পরিচালক জসীম মেহেদী খুবই দক্ষতা ও সুনামের সাথে পরিচালনা করছেন।
আমরা সকল সংবাদকর্মী,শুভাকাংখী,শুভানুধ্যয়ী ও পাঠক সমাজ সংবাদপত্রের এজেন্ট ব্যক্তিত্বের রুহুহের মাগফেরাত কামনা করি। (তথ্যঋণ- জসীম মেহেদী , ২৫ জুন ২০১৮)
লেখক : আবদুল গনি,
সহ-সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস ।