ফরিদগঞ্জ

চাঁদপুরে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ আকিবুরের লাশ উদ্ধার

চাঁদপুরে লঞ্চ থেকে নিখোঁজের ৩দিন পর চাঁদপুর সদর থানা পুলিশ ফরিদগেঞ্জর নিখোঁজ যুবক আকিবের লাশ চাঁদপুরের লগিমারার চর থেকে উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

তবে মৃত আকিবের পরিবারের অভিযোগ আকিবকে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছেন।

এরপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সন্ধান দিতে বুধবার দিনভর মেঘনায় ও নদী তীরে তার পরিবার সদস্যরা মাইকিং করেছেন। এ ঘটনায় আকিবের বাবা আব্দুল মতিন মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় চাঁদপুর মডেল থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করেছেন।

জানা যায়, উপজেলা সদরের হাজী করিম বক্স পাটওয়ারী বাড়ির আব্দুল মতিনের ছোট ছেলে আকিবুর রহমান (২০)। তার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিতু জানান, আকিব চাকরীর জন্য গত ৯ অক্টোবর তার ভগ্নিপতির উদ্দেশ্যে ঢাকা যায়। ভগ্নিপতি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। ঢাকা পৌঁছার পর, ফোনে তার ভগ্নিপতি তাকে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে যেতে বলেন।

এ খবর শুনে আকিব তার দু’ বন্ধু রাসেল (২০) ও আতিফ (২১)কে রোববার সন্ধ্যায় ফোনে ডেকে নেয় ঢাকার সদরঘাটে। সেখান থেকে আকিবকে নিয়ে যাওয়া হয় ওয়ারীতে থাকা রাসেলদের ভাড়া বাসায়। সোমবার রাসেল তাদের বাসায় একটু সমস্যা আছে বলে আকিবকে আসিফদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে সন্ধ্যার পর আতিফ তাকে নিয়ে তাদের সাত তলা ভাড়া বাড়ির ছাদে উঠে। ছাদে গিয়ে আকিব কয়েকজন অপরিচিত ছেলেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভয় পায়। এতে, সে গোপনে ছাদ থেকে নেমে দৌড়ে সদরঘাটের দিকে পালিয়ে যায়। পেছন থেকে ওই অপরিচিত কয়েকজন ছেলে তাকে তাড়া করে। এসময় তাদের সঙ্গে আতিফও ছিলো।

সেখান থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় একটি লঞ্চে উঠে পড়ে। পরে দেখতে পায় পারাবাত-১২ নামের লঞ্চটি ঢাকা-বরিশাল রুটের। সে তখন আতংকগ্রস্ত হয়ে লঞ্চের ভেতর এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে। মিতু জানান, এসব কথা আকিবই তাকে রাত ১০টা হতে ১১টা পর্যন্ত ফোনে জানিয়েছে।

এদিকে, আকিবের বাবা আব্দুল মতিন (৬০) জানান, আকিব তাকেও ফোন করে আতংকের কথা জানিয়েছে। এক পর্যায় বলেছে, আতংকগ্রস্ত আকিবকে দেখতে পেয়ে তাকে ডেকে নিয়ে ঘটনা জানতে চান এক যাত্রী। তিনি বলেছেন, আকিব কিছুতেই আতংকমুক্ত হতে পারছিলো না।

এ অবস্থায় আকিবের কাছ থেকে আমার ফোন নাম্বার নিয়ে, রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক (প্রশাসন) খলিলুর রহমান পরিচয়ে তার ফোন (০১৮১১৪৫৮৫৪১) থেকে আমাকে ঘটনা জানান। এরপর আকিবকে তার কাছে রাখার জন্য আমি তাকে অনুরোধ করি। এর মাঝে কয়েকবার আকিবের সঙ্গে কথা হয় বলে তার বাবা ও স্ত্রী দু’ জনই জানান।

তারা বলেন, এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার পর হতে আকিবের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিলো না। তার ফোনে কল দিলেও, রিসিভ হচ্ছিলো না। রাত ১টায় খলিলুর রহমান নামের ওই ব্যাক্তি জানান, আকিব লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে।

পরে, আকিবের বাবা ও বড় ভাই পরদিন ভোর রাতে চাঁদপুর নৌ পুলিশকে ঘটনা জানান এবং দিনভর মেঘনায় মাইকিং করে আকিবের সন্ধান দিতে নদী তীরের মানুষকে অনুরোধ করেন।

এদিকে মিতু জানান, রাসেল, আতিফ দু’ জনই সোমবার রাতে আমার সঙ্গে ফেসবুক-এ ম্যাসেনঞ্জারে কথা বলে। তারা আমার কাছে আকিবের বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রথম ম্যাসেজ দেয় রাত ১২টা ৪১ মিনিট-এ। এরপর সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটেও ম্যাসেজ দিয়ে আকিবের খবর জানতে চায়। আকিবের পরিবারের সদস্যরা ব্যাপক খোজাখুঁজির পর অবশেষে গত বুধবার রাত চাঁদপুরের লগিমারার চর এলাকায় তার লাশের সন্ধান পায়।

ফরিদগঞ্জ থেকে আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫০ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share