চাঁদপুর রেলস্টেশন এখন অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জুয়া খেলা, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে রেলস্টেশনকে ঘিরে।
কতিপয় পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং রেলের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্টেশনের চারদিকে চলছে দখল থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গা ঘেঁষেই চলছে রাতদিন জুয়ার আসর আর পতিতাবৃত্তি। প্লাটফর্ম এলাকায় যাত্রী ব্যতীত সাধারণ মানুষ প্রবেশ সংরক্ষিত না থাকায় চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের প্লাটফর্মগুলোতে দিন রাত ছোটোছুুুটি করে অপরাধীরা। প্লাটফর্মের যাত্রী বসার সিটগুলো মাদকাসক্ত এবং টোকাই ও বখাটেদের দখলে থাকে।
স্টেশনে চুরি ছিনতাই : রেলস্টেশনকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে ছিনতাইকারীদের একটি গ্রুপ। ১৫ থেকে ২০ জনের ওই গ্রুপের কাছে জিম্মি রেলের সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রীদের কা থেকে মোবাইল ফোন এবং নারী যাত্রীদের হ্যান্ডব্যাগ ছিনতাই এখন রেলস্টেশনে নিয়মিত ঘটনা। যাত্রীদের অভিযোগ, দিনে ও রাতে নানা অপরাধ কর্মকা- আর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য স্টেশন এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যাত্রীসাধারণ থেকে আশপাশ এলাকার ব্যবসায়ী পর্যন্ত কেউ এদের কাছ থেকে নিরাপদ নয়। নিরাপদে আছে শুধু অপরাধীরা।
প্রতিদিনই স্টেশনে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও রেলওয়ে পুলিশের কাছে মামলার তেমন রেকর্ড নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা নিলেও আসামি গ্রেফতার হয় না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা পুলিশি হয়রানির ভয়ে থানায় যায় না। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা স্টেশন ম্যানেজারকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়ে চলে যায়। মামলা দায়ের করার পর পুলিশের নানা ঝামেলার কারণে মামলা পরিচালনায় আগ্রহ হারায় বাদী। যার কারণে থানায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা অধিকাংশ মামলা বিচারের জন্য আদালতে ওঠে না।
মাদক ও জুয়ার আসর : চাঁদপুরে রেলস্টেশন দীর্ঘদিন ধরে মাদকের হাট হিসেবে পরিচিত। রেলস্টেশন সংলগ্ন শহীদ মিনারের পিছনের অংশ, স্টেশন কলোনি, রেলের প্লাটফর্ম, স্টেশন রোড, বড়স্টেশন মোড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলে অবাধে মাদক বেচাকেনা।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে রয়েছে টিনের ছাউনির কয়েকটি ঘর। এসব ঘরে শত শত মানুষ ক্যারাম বোর্ড, লুডু ও তাস খেলায় মশগুল। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গোল করে মাটিতে বসে চলে জমজমাট জুয়ার আসর। প্রতি গ্রুপের সামনে থাকে টাকার স্তুুপ। দিনমজুর ও শ্রমিকদের পাশাপাশি বিত্তবান পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানরাও অংশ নেয় এ জুয়ার আসরে। জুয়ার পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত চলে এখানে বিভিন্ন নেশার আসর।
অপরদিকে রেলস্টেশনে অবস্থিত দুই এলাকা এখন পতিতালয় এবং মাদক ব্যবসার নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে। স্টেশন এলাকায় কোনো অপকর্মেই বাধা নেই। সব কিছুই চলে অপরাধীদের ইচ্ছেমতো। মাদক, জুয়া এবং পতিতা ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে একাধিকবারম স্টেশন এলাকায় বিভিন্ন গ্রুফের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
দখলের মহোৎসব : চাঁদপুর রেলস্টেশন এলাকা ঘিরে চলছে দখলের মহোৎসব। হকার্স মার্কেটের মোড় থেকে রেলস্টেশনের আশপাস এলাকা অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে বিভিন্ন দখলদাররা। স্টেশন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৮ থেকে ১০টি দোকান ঘর তৈরি করে দোকানদারী করছে। এছাড়া রেলের রাস্তার পাশে এসব দোকান তৈরী করায় শহরের মধ্যে যেমন পথচাররী চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে অন্যদিকে যানজটের আকার ধারন করছে। শহরবাসী দাবী জানিয়েছেন চাঁদপুর রেলস্টশনে চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জুয়া খেলা, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকা- যাতে দ্রুত রেল কর্তৃপক্ষ নিরসন করেন।