চাঁদপুর ছেড়ে লঞ্চটি যখন মেঘনার মাঝখানে, তখন রোববার(১০ জুলাই) রাত ১১টা। মা পরী বেগম লঞ্চের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশু নাজিয়াও পিছু নেয় মায়ের। হঠাৎ গহীন অন্ধকারে ঝাঁপ দেন মা পরী বেগম। মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায় ছোট্ট শিশু নাজিয়া।
এর আগে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে বিকেলে ঢাকা-বরগুনা রুটের এমভি কিং সম্রাট লঞ্চে উঠেছিলেন গৃহবধূ পরী।
লঞ্চে দুই মেয়েকে বুকে নিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন তিনি। কান্নার ফাঁকে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। মায়ের ভারাক্রান্ত মন দেখে ঘুম হয়নি শিশুদেরও।
এদিকে, মা আর বোনকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে অপর শিশু নুসরত (৭)। মেঘনায় ঝাঁপিয়ে পড়া মা ও মেয়ের খোঁজে ঘণ্টা খানেক লঞ্চ থামিয়ে রাখে কর্তৃপক্ষ। এরপর কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে পুনরায় বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে লঞ্চটি।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে বরগুনার ঘাটে এসে পৌঁছায় এমভি কিং সম্রাট লঞ্চ। বর্তমানে ছয় বছরের শিশু নুসরতকে বরগুনা থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সে তার বাবার নাম আক্তার হোসেন বলে জানিয়েছে।
বাবা আক্তার হোসেন এক চশমার দোকানে কাজ করেন। আর বাবা-মাসহ তারা যাত্রাবাড়ি থাকতেন বলেও জানায় নুসরাত।
নুসরাত আরো জানায়, তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বড় ভাইয়ের নাম আল-আমিন। মাওয়া চৌরাস্তায় তাদের গ্রামের বাড়ি। নানা-দাদার নাম বলতে না পারলেও মামা মানিক, টোকন এবং রাজিবের নাম বলতে পারে নুসরাত। এর মধ্যে মামা রাজিব বিদেশে থাকে আর মানিক জামা-কাপড়ের দোকানি।
এ বিষয়ে এমভি কিং সম্রাট লঞ্চের মাস্টার আবুল হোসেন জানান, রাত যখন ১১টা তখন তাদের লঞ্চ মিয়ার চরের কাছাকাছি।
সাধারণ যাত্রীদের কাছে খবর পেয়ে তারা লঞ্চটি থামিয়ে দেন। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। সে সময় মেঘনা ভীষণ উত্তাল ছিলো।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে লঞ্চের মাস্টার জানান, পরী বেগম তার দুই শিশুকে নিয়ে লঞ্চের নিচ তলার ডেকে বসে ছিলেন।
সে সময় সেখানে তিনি কোরাআন শরীফ পড়েছিলেন। নামাজ পড়েছেন। কান্নাকাটিও করেছেন অনেক। বাচ্চাদের ঘুম পড়ানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে রাত ১২টার দিকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন পরী বেগম। এসময় মেয়ে নাজিয়া মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়।
মাস্টার আবুল হোসেন বলেন, ‘উত্তাল মেঘনায় বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। তারপরও বেশ কিছুক্ষণ মা-মেয়েকে খোঁজার চেষ্টা করে না পেয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা হই’।
এ ব্যাপারে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন জানান, শিশুটির মা পরী বেগম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পুরোপুরি তদন্ত না করে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। শিশুটির পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে যাত্রাবাড়ি এবং মাওয়া থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ০৭:০৫ পিএম,১১ জুলাই ২০১৬,সোমবার
এইউ