চাঁদপুর মাছ ঘাট দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম মাছ ঘাট হিসেবে স্বীকৃত। এই মাছ ঘাটে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে এই সমস্ত ইলিশ মূলত ভোলা, বরিশাল ও সাগর থেকেই বেশি আসছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, মাছ ঘাটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সাগর থেকে আসা এই সমস্ত ইলিশকে মেঘনার ইলিশ বলে বিক্রি করে যাচ্ছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী এবং সন্দ্বীপসহ সাগর উপকূলীয় অঞ্চলের ইলিশে পরিপূর্ণ এখন চাঁদপুর মাছ ঘাট। স্বাদের দিক দিয়ে ওই সমস্ত এলাকার ইলিশের দাম মেঘনার ইলিশের চেয়ে কিছুটা কম। অন্যদিকে পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ যা-ই পাওয়া যাচ্ছে তার দাম কিছুটা বেশি। বড় স্টেশন মাছ ঘাটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা এসব ইলিশকে চাঁদপুর, মেঘনা ও পদ্মার ইলিশ বলে হরহামেশাই বিক্রি করে যাচ্ছেন।
৯ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে চাঁদপুর মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভিড়ে কর্মমুখর ঘাটটি। প্রত্যেক আড়তের সামনে ইলিশের স্তূপ রাখা আছে। জনসমাগম এত বেশি যে হাঁটার মতো জায়গাটুকুও নেই মাছ ঘাটের ভেতর। শ্রমিকরাও যে যার মতো ব্যস্ত প্যাকেটিংয়ের কাজে।
আড়তে দাম যাচাই করে দেখা যায়, ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ৯০০ টাকা। আর ১২শ থেকে ১৫শ গ্রামের ইলিশ এক হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মেঘনার ইলিশের দাম সেই হিসাবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সাগর ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশকে মেঘনার ইলিশ বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অধিক টাকা। মূলত সাগর ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশকে লবণ ও বরফ দিয়ে চকচকে করে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ বলে চালিয়ে দিচ্ছে তারা। ক্রেতারা আলাদাভাবে মেঘনার ইলিশ না চেনার কারণে প্রতারিত হচ্ছেন।
অপরদিকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ একেবারে কম পাওয়া যাওয়ায় জেলেদের ভেতর হতাশা বিরাজ করছে। স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানান, নদীতে মাছ কম থাকার কারণ দিনে দিনে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে তারা। এ নিয়ে তারা বেশ শঙ্কায় রয়েছেন।
প্রতারণার বিষয়ে চাঁদপুর মাছ ঘাটের খুচরা বিক্রেতা মনির হোসেন বললেন, ‘আমরা কি করতে পারি? চাঁদপুরে এখন যে ইলিশ আসছে তার প্রায় বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলের। এখন আমরা যদি হাতিয়ার, ভোলার, বরিশাল অথবা সাগরের ইলিশ বলি তাইলে কেউ আমাদের কাছ থেকে মাছ কিনবে না। তাই বাধ্য হয়েই আমাদেরকে চাঁদপুরের, মেঘনার ইলিশ বলতে হয়।’
চাঁদপুর মাছ ঘাটে ককশিটে ইলিশ প্যাকেটিংয়ের কাজে নিয়োজিত আলী আহমেদ জানান, আমি ইলিশ প্যাকেটিংয়ের কাজ করি। তবে দেখছি অনেকেই হাতিয়া-সন্দ্বীপের ইলিশকে মেঘনার ইলিশ বলে বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ বন্দুকসী জানান, বর্তমানে চাঁদপুর মাছ ঘাটে গড়ে ১০০ মণ লোকাল ইলিশও আসে না। আগের তুলনায় এখন মাছের আমদানিও কিছুটা কম
চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া বলেন, বর্তমানে ঘাটে অনেক কম ইলিশ আসছে। এখানে যেসব মাছ আসছে সেসব মাছের অধিকাংশই হচ্ছে হাতিয়া, সন্দ্বীপ এলাকার। চাঁদপুরের লোকাল মাছ এক রকম নাই বললেই চলে।’
করেসপন্ডেট,১০ সেপেটম্বর ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur