চাঁদপুরে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রে শহীদ উল্লেখ করে (মৃত দেখিয়ে) দীর্ঘ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধা ভাতা ভোগ করে আসছেন মোঃ শাহাদাত হোসেন নামের এক ভুয়া মুক্তিযুদ্ধা।
এনিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নিয়ম রয়েছে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কমপক্ষে ১২ বছর ৬ মাস বয়স হতে হবে। সেখানে এই এই নামধারী মুক্তিযোদ্ধা তার কাগজ পত্রে নিজেকে শহীদ উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধা ভাতা ভোগ করে আসছেন।
অথচ এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ভোটার আইডি কার্ডে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৬৩ সাল। যেখানে তার বয়স দাঁড়ায় মাত্র ৯ বছর। এছাড়া তার এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১ মার্চ ১৯৭৩ সালে উনার বয়স ছিল ১১ বছর ৭ মাস। মুক্তিযোদ্ধা গেজেট অনুযায়ী যা কখনোই একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার আওতায় তা পড়েনি।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লাল মুক্তিবার্তার ২০৫০১০৩২৮ ক্রমিক নং অনুযায়ী তাকে শহীদ মাওলানা মোঃ শাহাদাত উল্লেখ করা হয়েছে। আবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেটের ৩৩৭৭,০৬-০৪-২০১৭ পৃষ্ঠায় শহীদ শব্দটি বাদ দিয়ে সেখানে তার নাম মোঃ শাহাদাত হোসেন উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পর্নভাবে প্রতারনা করে তিনি মুক্তিযুদ্ধা ভাতার কোটায় নিজের নাম লেখিয়ে নিয়েছেন। এভাবেই তিনি প্রতারণা করে দীর্ঘ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করে আসছেন।
তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ওই এলাকায় মানুষদের সাথে বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে আসছেন এবং যেকোন বিষয়ে তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে পাড়া প্রতিবেশিকে ম হুমকি ধমকি দিয়ে মানুষের সাথে জোর জুলুম অত্যাচার করে চলেছেন বলে অভিযোগ।
এজন্য এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগেন। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা বের করতে তার সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে জানতে পারেন, যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গেজেট অনুযায়ী তিনি কখনোই মুক্তিযুদ্ধের আওতায় পড়েননি। তাই এলাকাবাসী ক্ষুব্দ হয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আর সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাঁদপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়ে একটি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা তদন্ত পত্র (পত্র নং ১৩৭) পাঠানো হয়েছে।
ওই তদন্ত পত্রে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দীয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল মোল্লার ছেলে মোঃ শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ জামাল উদ্দিন জানান মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে সঠিক মুক্তিযুদ্ধা তদন্ত পত্র পাঠানো হয়েছে।আমরা উভয় পক্ষের কাগজপত্র নিয়েছি এবং অভিযোগকারী ও ওই মুক্তিযুদ্ধার সাক্ষাৎকার আমরা নিয়েছি। আমরা সবকিছু যাচাই বাচাই শেষে তদন্ত করে তা টিউনো ম্যাডামের কাছে দিবো। তবে উনার জন্ম তারিখ অনুযায়ী তা কখনো মুক্তিযুদ্ধার আওতায় পড়েনা। বাকিটা সমস্ত যাচাই-বাছাই পরে বুঝা যাবে।
এ বিষয়ে মাওলানা মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তারা তাদের কাগজপত্র দিয়েছে। আমিও আমার সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছে। কেউ আমাকে কেউ ভুয়া বললে তো আর আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাইনি। আমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই তারা দেখবে আমি ভুয়া নাকি সঠিক।
প্রতিবেদকঃকবির হোসেন মিজি,২০ মার্চ ২০২১