বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে নামে বেনামে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ক্ষতি সাধনকারী ডাকাত মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ।
রোববার(৫ মে) সকাল ১০টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল কালাম মোহাম্মদ সামছুল আলম চিশতীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম.এ ওয়াদুদ।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা ন্যায় সংঙ্গত বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়েছি। ট্রেনে ডাকাতি করা মোস্তফা ভুয়া অভিযোগ দিয়ে ও তার এজেন্টের মাধ্যমে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করে থাকে। শহরের ওয়ারলেস এলাকার হাবিব মুন্সির কাছ থেকে মিথ্যা অপবাদ ও হয়রানির নামে মোস্তফা আড়াই লক্ষ টাকা নিয়েছে। এছাড়া অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ড প্রস্তুত রয়েছে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা একজন বেকার মুক্তিযোদ্ধা। চাঁদপুরে কথিত আছে যে, যুদ্ধ পরবর্তীকালে সে অনৈতিককাজে লিপ্ত ছিল। তৎকালীন উগ্রবাদী জাসদের সক্রিয় সদস্য ছিল এই মোস্তফা। তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসন তৎপর হলে সেই সময় সে গা ঢাকা দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। তাকে আমরা ৪০ বছর চাঁদপুরে দেখতে পাইনি। সাম্প্রতিকালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই বাছাই কার্যক্রম শুরু হলে সে হঠাৎ করে চাঁদপুর আসা শুরু করে এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের হুমকি দিয়ে এবং মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা পয়সা আদায় করে। ডাকাত মোস্তফার সাথে গুটি কয়েক মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলে।
তারা সহজ সরল বিশেষ করে স্থানীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং ভারতের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ভিত্তিফৌঝ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির নিকট ও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ উপস্থাপন করে এবং স্থানীয় দুষ্ট প্রকৃতির মুক্তিযোদ্ধার মাধ্যমে এসব অভিযোগ মোস্তাফিজকে টাকা দিয়ে সমাধান করবে বলে হয়রানি করছে। ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক থেকে লোন দেওয়ার নাম করে সে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী নির্বাচন অণুষ্ঠিত হলে ওই মোস্তফা চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিত্বা করে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়।
অতঃপর সে ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ঢেউ টিন, নগদ অর্থ ও বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতির নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। যার সভাপতি মোস্তফা নিজেই এবং সাধারণ সম্পাদক জনৈক হাবিলদার অবসরপ্রাপ্ত সুলতান আহমেদ। ওই সংগঠনের নাম করেবিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার থেকে অর্থ আদায় করে সে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যায়।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মোস্তফা পুনরায় চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধঅ কমান্ডার হিসাবে পরাজিত হয়ে চাঁদপুর থেকে চলে যায়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই বাচাই শুরু হলে তার বিপক্ষীয় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ডালাওভাবে অভিযোগ শুরু করে। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা ও সহচরদেরকে প্রতিরোধ করলে প্রাণ ভয়ে চাঁদপুর ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে সে মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দেওয়ায় ও টাকার বিনিময়ে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তার অনুগত সহচর দিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মোস্তফার এহেন কর্মকাণ্ডে চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধারা নাজেহাল হচ্ছে এবং সমাজে তারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব অপকর্মের তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের মাধ্যমে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার আইয়ুব আলী মাষ্টার, মৃনাল কান্তি সাহা, মহসিন পাঠান, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাধন সরকার, ইসমাইল সিরাজী, রওশন আলী বেপারী, আব্দুর রশিদ খান, আব্দুল্লাহ হিল বাকী, বশির পাটওয়ারী, আমিনুল হক, মোঃ ইউনুছ ভূইয়া, মোঃ ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, আব্দুর রহমান গাজী, সুলতান আহমেদ তপাদার, ফজলুূল হক, শাহজাহান তালুকদার, আব্দুল আজিজ খান, মোঃ হানিফ খান, আব্দুল গফুর খান সহ আরো অনেকে।
সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট
৫ মে ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur