শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যে শিল্পকর্মকে অবমাননা করে রঙের প্রলেপ

যেকোন ভাস্কর্যে রঙ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী লেকের ওপর মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অঙ্গীকার শিল্পকর্মকে অবমাননা করে রংয়ের প্রলেপ দেয়া হয়েছে। জনমনে নানান প্রশ্নে এবং সচেতন মহলের তাগিদে আবার রঙের প্রলেপ ধুয়ে মুছে সেই ভুল সুধরালেন কর্তৃপক্ষ।

জানাযায়, মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতি স্মরনে ১৯৮৮ সালের ১৪ জুন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, চাঁদপুরের ততকালীন জেলা প্রশাসক আলহাজ্ব এস এম শামসুল আলম। তারপর ১৯৮৯ সালের ২ মে ভাস্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। আর ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের’অপরাজেয় বাংলা, ভাস্কর্যের শিল্পী প্রয়াত সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ।

খবর নিয়ে জানা যায়, বিজয়ের মাস ডিসম্বরে প্রতি বছরের মতো এবারো চাঁদপুর হাসান আলী মাঠে মাসব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার মাঠের পাশাপাশি তার সামনে লেকের ওপর থাকা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অঙ্গিকারটিকে আলোকসজ্জা করা হয় এবং চাঁদপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সেটিকে ধুয়ে মুছে রং ও পরিস্কার করার দায়িত্ব দেন চাঁদপুর এলজিডিকে।

কিন্তু সরজমিনে দেখা যায়, দু’দিন পূর্বে এলজিডি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে অঙ্গিকারের সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হাত, এবং শর্টগানে রং করার জন্য সিলারের প্রলেপ দেন। যা একজন ভাস্কর্য শিল্পীর মুল সৌন্দর্যকেই ঢেকে দেয়া হয়। যা নিয়মের বাহিরে।

চাঁদপুরের বেশ ক’জন সুনামধন্য ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়,ভাস্কর্য শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ অঙ্গিকারটি এভাবে নির্মাণ সম্পর্কে বলে গেছে, যে মা মাটির জন্য যুদ্ধ করা হয়েছে। তাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রকৃত পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য গুলো মাটি দিয়ে তৈরি করা দরকার। যাতে ভাস্কর্যের গায়ে মাটির চিহ্ন থাকে। মাটি দিয়ে তৈরি করলে তা কখনোই স্থায়ীভাবে টিকে থাকবে না। তাই মাটির পরির্বতে সিমেন্ট দিয়ে তা নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে ভাস্কর্যে মাটির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়।

কিন্তু একজন ভাস্কর্য শিল্পের এমন সুন্দর মনোভাবকে অবমাননা করে প্রকৃত সৌন্দর্য মুছে সেখানে সিলারের প্রলেপ দেয়া হয়। পরবর্তীতে চাঁদপুরের সুধী সমাজ এবং বিজয় মেলা কর্তপক্ষের আলাপ চারিতায় ও চাঁদপুর পৌরসভার নির্দেশে মঙ্গলবার সকালে অঙ্গিকারে দেয়া সেই সিলারের প্রলেপ ধুয়ে মুছে উঠিয়ে ফেলেন এলজিডি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ভাস্কর্য শিল্পী প্রয়াত সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের স্ত্রী উন্মে কুলসুমার সাথে।

তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান,একজন শিল্পীর প্রকৃত মনোভাবকে যদি রঙ্গের প্রলেপ দিয়ে মুছিয়ে দেয়া হয়। তাহলে তার প্রকৃত সৌন্দর্য এবং স্থায়ীত্ব টিকে থাকে না। তাছাড়া কোন একজন শিল্পীর ভাস্কর্যের ওপর রঙ্গের প্রলেপ দেয়া নিয়মের মধ্যে পড়েনা।

তিনি খুব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যিনি এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন, সেখানে কোন ন্যামপ্লেটে তার নামটি পর্যন্ত রাখা হয়নি। যখন এটি তৈরি করেছেন তখন তার পাশে শাপলা লাগানোর কথা ছিলো। তার কোনটাই করা হয়নি। এটিকে সংস্কার এবং পরিস্কার পরিছন্ন করা হয়নি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটি রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব কার?

আমি চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে কথা বলেছি,তারা আমাকে বলেছেন শিল্পীকে তারা নাগরিক সংবর্ধনা দিয়েছে। তাহলে আজকে কি এই তার প্রতিদান?যেখানে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে,আজ তার ওপর আলকাতরা মেখে তার স্থায়িত্ব ঢেকে দেয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

Share