=> ইব্রাহিম জুয়েলের বাসা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর লুটপাট ও ছেলেসহ আহত শতাধিক
=> কম্পিউটার, সিসিটিভি ডিভিআর, মূল্যবান জিনিসপত্র ও লগদ টাকা লুট
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সরাসরি নির্দেশে জেলা বিএনপি, জেলা যুবদল, পৌর যুবদল, উপজেলা যুবদল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, জেলা ছাত্রদল, উপজেলা ছাত্রদল এবং পৌর ছাত্রদলের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব, জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক বিএনপির জনপ্রিয় নেতা কাজী ইব্রাহীম জুয়েলের বাসা-বাড়ী, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল ও প্রত্রিকা কার্যালয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।নেতাকর্মীদেরকে হামলা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। একই সময় তারা জেলা বিএনপির সভাপতির চাঁদাবাজী, দখল ও লুটপাটের প্রতিবাদ করায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারসহ বিভিন্ন উপজেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়।
জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা নাম না প্রাকাশ করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময় এভাবেই বার বার আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয় সাবেক জনপ্রিয় এই ছাত্র নেতা কাজী ইব্রাহীম জুয়েলের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি এবং হোটেল। বিগত ১৭ বছরের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার আটক হয়ে কারাবরণ করেছেন। বলতে গেলে আওয়ামী লীগের হামলা মামলায় তিনি একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তবুও তিনি দুঃসময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে সহযোগীতা করে গেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পতনের পর তার ব্যাবসা, হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যাবসা পুনরায় চালুকরতে গেলে আবারো তিনি বাঁধার মুখে পড়েনে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের মাধ্যমে। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতিকে বার অনুরোধ করেও কোন সুফল পাননি। বরং একই কায়দায় ফেসিবাদ আওয়ামী সরকারের মতো আচরণ করে জুয়েলকে টার্গেট করেন। এর আরো একটি কারণ হলো তিনি সাম্প্রতিক সময়ে জেলা বিএনপির সভাপতির বিভিন্ন চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে জুয়েলের উপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন বলে জানান দলের নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীরা বলেন, ‘আসলে জুয়েল ভাই শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে দলের ইমেজ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানিক সাহেব তা সহ্য করতে পারেননি। তাই জুয়েলকে দল থেকে বহিস্কারের পথ বেছে নেন। শুধু বহিস্কার করেই ক্ষান্ত হননি এবার তিনি জুয়েলকে প্রাণে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিএনপির উর্ধ্বতন মহল ব্যবস্থা না নিলে মানিক সাহেব জেলা বিএনপিকে শেষ করে দিবে যে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আমরা জেলা বিএনপি সভাপতির অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি দাবী জানাই।’
এদিকে প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, ৯ ডিসেম্বর ইব্রাহীম জুয়েল এর বাসার মূল গেইট ভেঙ্গে হামলাকারী কাজী ইব্রাহীম জুয়েলকে ঘেরাও করে হত্যার উদ্দেশ্যে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং তার পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন যেন না করেন তার জন্য হুমকি দেন।
এসময় তারা জুয়েলের কাছে সিসি টিভির ডিভিআর ও কম্পিউটার ল্যাপটপ তুলে দেওয়ার দাবী জানায়। এরপর তারা অস্ত্রের মুখে জোর পূর্বক অফিসের সকল কম্পিউটার ও সিসিটিভির ডিভিআর ও ক্যামেরাসহ সব খুলে নিয়ে যায়। তবে ইব্রাহীম কাজী জুয়েলকে পুলিশের সহযোগীতার নিরাপদে সরিয়ে নেয় উপস্থিত বিএনপির, যুব দল ও ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মীরা।
এদিকে যখন তারা নিশ্চিত হয়েছে যে এখানে আর কোন সিসিটিভি কাজ করছে না তখন তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বাসা, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান হোটেল ও পত্রিকা কার্যালয়ের সব কম্পিউটার, দামি মালামালসহ সব লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এর সাথে সড়কে যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে উপস্থিত উৎসুক লোকজনের উপর হামলা চালায়। এছাড়া তারা সড়ক থেকে হোটেল ও অফিসের দিকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়ে দরজা জানালা সব ভেঙ্গে ফেলে। এসময় লুটপাটকারীরা জানতে চান এসব কর্মকান্ড সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে কিনা। তাদেরকে নিশ্চিত করা হলেও তারা আরো সিসিটিভির ডিভিআর এর জন্য বাসা, অফিস কক্ষ, হোটেলসহ সবখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও কোন ডিভিআর খুঁজে না পেয়ে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারী ও সাংবাদিকদের উপর লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে ব্যাপকভাবে আহত করে।
অপর দিকে ইব্রাহীম জুয়েলকে না পেয়ে তাঁর একমাত্র ছেলে আফতাবকে কাছে পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তাকে প্রথমে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তারা তাকে ঢাকায় রেফার করলে তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার অবস্থা আসঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন তার পরিবার। এতিকে হামলায় ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সাংবাদিক সহ প্রায় শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে এই নেক্কারজনক ঘটনায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার রবিক উদ্দিন বলেন, ‘ আমরা সব জেনেছি এবং দেখেছি সঠিক দতন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে জেলা বিএনপির বেশ কয়েক জন নেতা সাংবাদিকদের জানান, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নির্দেশ দিয়েছেন কাজী ইব্রাহীম জুয়েলকে শেষ করে দেওয়ার জন্য। মূলতঃ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে।’
ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায় ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদা মানিকের নির্দেশ মত ছাত্রদল-যুবদলের অসংখ্যা দুর্বৃত্ত ইব্রাহিম জুয়েল এর বাড়িতে হামলার ছক আঁকেন। সেই মোতাবেক পরিকল্পিতভাবেই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি’র একাধিক সূত্র। হামলার সময় পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং চাঁদপুর কুমিল্লা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র জানায় সিসিটিভি ছিনিয়ে নিয়ে ইব্রাহিম কাজি জুয়েলকে গুম করে ফেলার নির্দেশনাও ছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তিনি এখনো অক্ষত রয়েছেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে ইব্রাহিম কাজী জুয়েলের একটি সূত্র জানায়, খুব দ্রুতই হামলা ভাঙচুর লুটপাট ও হত্যা চেষ্টার মামলা করা হবে।
এর আগে ৮ ডিসেম্বর রোববার রাত থেকেই ছাত্রদল ও যুবদলের একটি অংশ চাঁদপুর শহর ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা শত শত মোটরসাইকেল চড়ে এবং দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার, নতুন বাজার এবং ষোলঘর এলাকায় মহড়া দেয়। জনমনে প্রীতি ও এত সৃষ্টি করতে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। হঠাৎ করেই একেরপর এক ককটেল বিস্ফোরনের আওয়াজে কেঁপে ওঠে পুরো চাঁদপুর শহর। এতে চাঁদপুর কুমিল্লা মহাসড়কে যান চলাচলে ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে আতঙ্ক সৃষ্টিকারীরা সটকে পড়ে। পরের দিন গতকাল সোমবার সকাল থেকেই তারা চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার, নতুন বাজার এবং ষোলঘর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে মহড়া দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নির্যাতিত সাবেক কয়েকজন নেতা জানানা, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদা মানিকের নির্দেশে বিএনপি ছাত্রদল যুবদলের একটি অংশ চাঁদপুর শহর জুড়ে এই তাণ্ডব এবং হামলা চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর যে সকল সাবেক ছাত্র নেতারা চাঁদপুরে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের দখল, লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তাদের টার্গেট করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সাবেক ছাত্রনেতা কাজী জুয়েল আরো বলেন, গত ১৭ বছর আমি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি। অসংখ্যবার কারাবরণ করেছি। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ওষুধ বাড়িতে অসংখ্যবার আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলা ও লুটপাট করেছে। তবুও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথ থেকে এক পাও সরে যায়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং নির্দেশে রাজপথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। আমার কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। আজকে ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে আমার সন্তানকে রক্তাক্ত করা হলো। আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে। এ বিচার আমি মহান আল্লাহর কাছে দিলাম।’
‘ এছাড়া আমি দলের পরিক্ষীত কর্মী। আমাকে দলের নেতাকর্মীরা ভালোবাসেন এবং আমি সুনাম ক্ষুন্ন যেন না হয় সেই জন্য জেলা বিএনপি সভাপতি অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছি এটাই আমার অপরাধ। তাই আমার প্রতি ইর্শান্বিত হয়ে তিনি বার বার আমাকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি আমার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।’
এ বিষয়ে শান্তিপ্রিয় ও সচেতন চাঁদপুর বাসির দাবি, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। না হয় চাঁদপুরে বিএনপি জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকবে । পাশাপাশি চাঁদপুরবাসীর জান ও মালের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
স্টাফ রিপোর্টার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪