চাঁদপুর

চাঁদপুরে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবীতে ছাত্রদের বিক্ষোভ

চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়া (দাওরায়ে হাদীস) মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা শিক্ষককে চাকরীচ্যুত,অধ্যক্ষের অপসারণ,বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও মাদ্রাসা প্রায় ৩ ঘন্টা মুহতামিমকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

এক পর্যায়ে তারা মোহতামের অফিস কক্ষে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরও চালায়। এ সময় তারা পুরনো শিক্ষক হাফেজ মনসুর সাহেবকে পুর্নবহালেরও দাবি জানান।

এ ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রনে আনতে প্রশাসন ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহন করেছে এবং ঘটনাস্থলে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করেছে। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নাসিম উদ্দিন জানান।

১৮ নভেম্বর বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহকে বহিস্কারসহ ৬ দফা দাবী নিয়ে এ আন্দোলন করেন।

মাদ্রাসায় হট্টগোলের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাঁদপুর সদর সার্কেল স্নিগ্ধার সরকার ও ঘটনাস্থল ছুটে আসেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ওসি তদন্ত হারুনুর রশিদ পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: জাহাঙ্গীর আলম, বেগম ইন্ডাষ্টির পরিচালক হাবিবুর রহমান, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী বিল্লাল পাটওয়ারি,কোষাধ্যক্ষ হাজী আবুল কাসেম গাজী,গণ্যমান্য ব্যক্তি আরশাদ মিজি,গাজী মোঃ হাসান,হারুন খা,নিলু হাওলাদারসহ আরো অনেকে।

ক্ষুব্দ শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন জানান, বিভিন্ন অনিয়মের মধ্য দিয়ে মাদ্রাসার কার্যক্রম চলে আসলেও কোন অডিট হয় না।কোন শিক্ষক মোহতামেমের মতের বিরুদ্ধে হলে তাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে হেনস্তা করেন। হাফেজ মনসুর নামে একজন শিক্ষক ২১ বছর যাবৎ শিক্ষকতা করলেও তাকে কৌশলে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি জানান।

চাঁদপুর পুরানবাজার জাফরাবাদ এলাকায় অবস্থিত ইমদাদিয়া মাদ্রাসায় হেফজখানার এক শিক্ষকের অব্যাহতি নিয়ে ছাত্ররা অধ্যক্ষের কক্ষের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে এবং অধ্যক্ষের অপসারণ দাবীতে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ ও কমিটির লোকজন এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এবিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জাফর আহম্মেদ জানান, আমাদের এই মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে দুই জন হাফেজ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এদের মধ্যে হাফেজ মুনছুর আহম্মেদের বাড়ি মাদ্রাসার নিকটে হওয়ায় যার কারণে সে প্রতিদিন বাড়িতে আসা যাওয়া করতো এবং কিছু হলেই এলাকার লোকজন দিয়ে মাদ্রাসায় প্রভাব বিস্তার করতো এবং প্রতিদিনই ছাত্রদের পড়াদিয়ে সে বাড়ি চলে যেত।

এনিয়ে ছাত্রদের অভিযোগের কারণে আমি কয়েক শিক্ষকের উপস্থিতিতে মুনছুর আহম্মেদকে ডেকে সতর্ক করি, যেন বাড়িতে আসা-যাওয়া কম করে। ছাত্রদের পড়ার মান দিনদিন অবনতি হচ্ছে, তা বাড়াতে হবে। এ কথা বলার পর সে ১৬ নভেম্বের অব্যাহতি পত্র জমা দেয় এবং সে আর চাকুরি করবে না বলে জানিয়ে দেয়।

এরই মধ্যে সে এলাকার লোকজন মিলন হাওলাদার, ইয়াকুব ও মামুনসহ বেশ কিছু লোকজন এবং ছাত্ররা একত্রিত হয়ে অধ্যক্ষের অপসারণ ও অব্যাহতি নেওয়া হাফেজ মুনছুরকে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে স্লোগান দিতে থাকে এবং মাদ্রাসা ভাঙচুর করে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ছাত্রদের অভিযোগ, জামিয়া আরাবিয়া জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহহকে বহিস্কার করতে হবে। মাদ্রাসায় যোগ্যতা সম্পন্ন ওস্তাদ থাকা সত্ত্বেও দিন দিন শিক্ষা কারিকুলাম অবনতির দিকে যাচ্ছে কেন?

মসজিদের দানকৃত টাইলস, মাদ্রাসার লিল্লা-বডিংয়ের ছাগল, ইলিশ মাছ, চাল, ডাল মুহতামিম ও দালাল চক্রের বাড়িতে কেন? বোর্ডিংয়ের খাবারের মান খারাপ কেন? চাল ডাল সব কিছুতো লিল্লা-ফান্ড থেকেই আসে। মুহতামিম সাহেবের অফিসের খানার মান এবং শিক্ষক-ছাত্রের খানার মান ভিন্ন কেন?

হঠাৎ করে দুজন সুযোগ্য হাফেজ সাহেব (হাফেজ নূর মোহাম্মদ ও অত্র এলাকার কৃতি সন্তান যিনি এই মাদ্রাসায় দীর্ঘ ২১ বছর কোরআনের খেদমত করে আসছেন। মাদ্রাসা থেকে চলে যাওয়ার কারণ কি? তারা কি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন নাকি যেতে বাধ্য করা হয়েছে?

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ইতোপূর্বে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া বিনা কারণে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হল কেন? যেমন মুফতি শাহাদাত হোসাইন কাসেমী, মুফতি ইসমাইল সাহেব (দা:বা) গত বছর পবিত্র ঈদুল আযহার দিন নূরানী বিভাগের একজন ওস্তাদ ক্বারী রফিকুল ইসলাম সাহেবকে চামড়া কম কালেকশন করায় মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার কেন করা হয়? মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন ভাতা ঠিক মত দেওয়া হয় না।

স্টাফ করেসপন্ডেট,১৯ নভেম্বর ২০২০

Share