Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে মাদক বিক্রি ও আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ : আটক ১০, আহত ৩০
চাঁদপুরে মাদক বিক্রি ও আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ : আটক ১০, আহত ৩০

চাঁদপুরে মাদক বিক্রি ও আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ : আটক ১০, আহত ৩০

চাঁদপুরের পুরাণবাজার এলাকার ১নং ওয়ার্ডের কবরস্থান ও বৌ-বাজার নামক দু’টি মহল্লায় আবারো মাদক বিক্রি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২য় দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে ২য় দফায় সংঘর্ষে প্রায় শতাধিক বসতঘর-দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এতে ৩০ জন আহত ও আটক হয়েছে ১০ জন।

আটককৃতরা হচ্ছে মিন্টু, সিন্টু, সোহেল, মুরাদ, আহম্মদ, জাহঙ্গির মোল্লা, মিজান, আকাশ, সুমন ও মাসুদ।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড মধ্যশ্রীরামদী এলাকার কবরস্থান ও বৌ-বাজার নামক দু’টি মহল্লায় গত ৩ বছরে প্রায় দুই ডজন সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার মূলে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক বিক্রি।

এসব ঘটনায় পুলিশ ওই এলাকা থেকে মাদক নির্মূল ও আধিপত্য বিস্তারকারী ঘটনার হোতাদের আইনের আওতায় আনতে না পারায় একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

অপরদিকে একের পর এক ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে এলকার নিরীহ মানুষদের বসতঘর ওদোকানপাট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্লেখিত দু’টি মহল্লার এসব ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন বেশ ক’জন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। মূলত তাদের আধিপত্য বিস্তার ও মাদক বিক্রেতাদের শেল্টার দেয়াকে কেন্দ্র করেই এসব ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

সর্বশেষ ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় রিক্সাচালক রকমান গাজী জানায়, গত ৮ নভেম্বর বিকেলে মধ্যশ্রীরামদি বৌ-বাজার এলকার সুলতান মিঝির পুত্র আরশাদ (২৫) একই এলাকার শেখ বাড়ির কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে গাঁজা সেবন করছিলো। এসময় সেলিম শেখ এরশাদকে ধমক দিলে সে বিতর্ক শুরু করে। একপর্যায়ে সেলিম শেখ গাঁজা সেবনকারী এরশাদকে চড়থাপ্পর দেয় এবং এলকায় আর কখনো মাদক সেবন করতে দেবে না বলে জানায়। এতে এরশাদ কবরস্থান এলাকার শহর যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর খন্দকারের কাছে গিয়ে নালিশ করে যে, সেলিম শেখ জাহাঙ্গীর খন্দকারকে অকথ্যভাষায় গালমন্দ করেছে। এ খবর শুনে জাহাঙ্গীর খন্দকার দলবল নিয়ে বৌ-বাজার গিয়ে সেলিম শেখকে মারধর করে এবং ছুরিকাঘাত করে। মূলত সেই থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। ওই রাতেই আনুমানিক ১০টার দিকে উভয়পক্ষের মধ্যে হামলা এবং পাল্টা হামলার সৃষ্টি হয়। এতে প্রথম দিনের সংগর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক বসতঘর-দোকানপাট ভাংচুর ও আহত হয় ২৫জন। ওই দিনের ঘটনায় খবর পেয়ে এএসপি হেডকোয়ার্টার শাকিল আহমেদ ও মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশ হামলাকারীদের লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও কাউকে আটক করতে পারেনি।

পরদিন সোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীর খন্দকারের লোকজন একত্রিত হয়ে পুনরায় বৌ-বাজারে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে রকমান গাজি, হাকিম গাজী, বুট্টু, মান্নান মিয়াজী, আনু মোল্লা, রকমান দিদার, সিরাজ শেখ, আমির আলী শেখ, আনোয়ার দিদার, শামসুল গাজী, সেলিম শেখ, কাজলী বেগম, মরইন্না, শাহজাহানের বসত ঘরসহ প্রায় ৫০টি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এছাড়াও স্বপন, শফিক, খলিল, রকমান গাজি, সিরাজ, নারগিছ, মফিক, আমির খাঁ, কদম আলী, হারুন বোয়ালের স্টেশনারী দোকানসহ প্রায় ১০টি দোকানে লুট করা হয়।

স্থানীয় কাজলী বেগম জানায়, ‘আমারা গরিব মানুষ, দিনমজুরের কাম কইরা ভাত খাই, অনেক কষ্টে একটা ঘর উডাইছি। গত ২বছরে মারামারি কইরা আমাগো ঘর ৪/৫বার ভাংচে’।

স্টেশনারী দোকানদার শফিক সরকার জানায়, সোমবার ‘মারামারি হবে জানতে পেরে আমি সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে ঘরে শুয়ে থাকি। অথচ হামলাকারীরা আমার দোকানের শার্টার ভেঙ্গে আমার তত্ত্বাবধানে থাকা সমবায় সমিতির প্রায় ২ লাখ টাকা ও দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের ওপর একের পর এক হামলা করা হলেও পুলিশ ঘটনার ইন্দনদাতাদের আটক করছে না।

এলাকাবাসীর দাবি, এই এলাকা থেকে যতদিন মাদক নির্মূল না হবে ততদিন এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেই যাবে। তাই এ ব্যাপারে তারা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনা নিয়ে বর্তমানে এলাকাজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আশিক বিন রহিম

 

||আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

এমআরআর