চাঁদপুরে ভেসে গেছে ১৫০ কোটি টাকার মাছ, ফসলের ক্ষতি ৭৯ কোটি টাকা

চাঁদপুরে এবারে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে ভেসে গেছে দেড় শ কোটি টাকার মাছ এবং রোপা আমন ও রবিশস্যের ক্ষতি ৭৯ কোটি টাকা। বুধবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে। গত সপ্তাহের শুরু থেকে চলতি সপ্তাহের তৃতীয় দিন মোট ১০ দিনে এমন ক্ষতির মুখে পড়েন জেলার কৃষক ও মাছের খামারিরা।

চলতি মৌসুমে ভারি বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ১০০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ অভ্যন্তরে।

চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের ৬টি উপজেলা নিয়ে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প। মূলত কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চালু করা হয় প্রকল্পটি। তবে সেই প্রকল্প এখন স্থানীয়দের গলার কাটা। কারণ, ৪ যুগের পুরোনো এই প্রকল্পের ভেতর নদী, খাল, বিল আর বড় বড় জলাশয় এখন মাছ চাষের আধার।
ফলে মাছের খামারিরা যে যার মতো করে বাঁধ আর ফাঁদ তৈরি করে এসব নদী, খাল, বিল আর জলাশয়ের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারণে, টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত হলে তা আটকে গিয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়, নিচু এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের। এমন ৫০ হাজার পরিবার আছে।

যাদের বসতবাড়ি নিচু এলাকায় তৈরি করা হয়। শুধু তাই নয়, গ্রাম্য সড়কের উন্নয়ন করতে গিয়ে পুল ভেঙে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বক্স কালভার্ট। এতেও বাধা পেয়ে পানি গতি প্রবাহ প্রাণ হারাচ্ছে।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প অভ্যন্তরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা, সংগঠক ফরিদ আহমেদ রিপন জানান, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের ফলে পানি নিষ্কাশনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে অস্তিত্ব হারিয়েছে নালা-নর্দমাগুলোও।

তাই এখন থেকে পরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা না গেলে আগামীতে আরো কঠিন সঙ্কটে পড়তে হবে। কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার বন্যার পানিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে শাহারাস্তি উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল। সেখানে পানিবন্দি এখনো ২০ হাজার পরিবার। জানালেন, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ফয়েজ আহমেদ। তিনি জানান, এরইমধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে এসব মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, ইতিমধ্যে তালিকা করে যে তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে এরইমধ্যে ১২ হাজার পুকুর এবং ৫৫টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এতে খামারিদের প্রায় দেড় শ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। চাঁদপুরে কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শাফায়েত সিদ্দিকী জানান, রোপা আমন ধান এবং রবিশস্যের ১২ হাজার হেক্টর জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা।

তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং অতিদরিদ্র কৃষকের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে সরকারি প্রনোদনা হিসেবে বীজ, সার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, জেলায় যেখানে যে পরিমাণ সহায়তা দেওয়া দরকার। চাহিদা মোতাবেক তাই করা হচ্ছে। এতে চাল ও নগদ টাকাও দেওয়া হচ্ছে।

স্টাফ করেসপন্ডেট/ ২৯ আগস্ট ২০২৪

Share