চাঁদপুর

চাঁদপুরে ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ডে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা

চাঁদপুর জেলায় ভিক্ষুকমুক্তকরণের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেন জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (যুগ্ম-সচিব ) মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। আর এ উদ্যোগকে সফল করতে চাঁদপুর জেলা ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১দিনের বেতন জমা দিয়েছেন। সে টাকায় উক্ত ফান্ডে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জমা পড়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭হাজার ১শ’ টাকা।

সেই সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সুপারিশের ভিত্তিতে চাঁদপুর জেলায় মোট ২হাজার ৩শ’ ৬৮ জন ভিক্ষুককের তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এবিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (যুগ্ম-সচিব ) মো. আব্দুস সবুর মন্ডল জানান, একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যে দিয়ে জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। পুরো টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট কিংবা সঞ্চয় পত্র ডিপোজিট করা যায়। সে টাকা থেকে লভ্যাংশ টাকা দিয়ে পর্যায়ক্রমে জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা যাবে। এতে সরকারও সহযোগিতা করবে। সেই সাথে পুরো টাকা ডিপোজিট থাকবে।

জানা গেছে, জেলা ভিক্ষুকমুক্তকরণে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন দপ্তরে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সাঁড়া পড়ে। জেলার সুধীজন, ধর্নাঢ্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিগণ স্বাগত জানান।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সবার মতামত গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ এরই মধ্যে জনপ্রতিনিধি ও ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সদরকে ভিক্ষুকমুক্তকরণের কাজ পুরোদমে চালচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুক্ত ফান্ড থেকে কোন সহযোগিতা না নিয়েই সদর উপজেলা এ কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ধর্নাঢ্য বক্তিগণ। আগামী ২/১এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন নিজস্ব প্রচেষ্টায় সদর উপজেলাকে ভিক্ষুক্ত করবেন বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা।

জানা গেছে, খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা ভিক্ষুকমুক্তকরণের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

চাঁদপুর জেলা ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জেলাকে ভিক্ষুকমুক্তকরণের কাজের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। জেলার সরকারি -বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১দিনের বেতন এ ফান্ডে জমা দেন। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে ১দিনের বেতন জমা হয় সর্বোচ্চ। অত্যন্ত সচ্ছ প্রক্রিয়ায় জেলা ভিক্ষুকমুক্ত এ ফান্ড গঠন করা হয়।

জেলা প্রশাসন জনতা ব্যাংকে এ নিয়ে একটি হিসাব খোলা হয়। এ ফান্ডে জেলা প্রশাসন সরাসরি নগদ কোন টাকা গ্রহণ করেননি। জেলা প্রশাসন জনতা ব্যাংক ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ডে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্যোগই ১দিনের বেতনের টাকা জমা দেন।

চাঁদপুরের জনতা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলা ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ডে জমা পড়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭হাজার ১শ’ টাকা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় জনতা ব্যাংক ব্যবস্থাপক জানান, স্ব স্ব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা এসে জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ডে টাকা জমা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জনবান্ধব অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ) মোহাম্মদ শওকত ওসমান জানান জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করণে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে । এ ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা করার কাজ চলছে। আশা করি চাঁদপুর জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা সম্ভব হবে। তবে এটা চলমান প্রক্রিয়া। ভিক্ষুকমুক্ত করণের কাজ চলমান থাকবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (যুগ্ম-সচিব) মো. আব্দুস সবুর মন্ডল মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জাটকা ও ইলিশ অভয়াশ্রম রক্ষা বাস্তবায়নে সভা তিনি বলেন, ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ডে টাকা সকল বিভাগ থেকে এখনো টাকা আসেনি। তাই সরকারের কাছে টাকা চাইতে পারছি না। সকল বিভাগ থেকে টাকা আসলে সরকার ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ডে ৫০ লাখ টাকার বেশি দিবে।

তিনি আরো বলেন অনেকে মনে করেছেন জেলা প্রশাসক চলে গেলে ভিক্ষুকমুক্ত ফান্ড কী হবে। অনেকে ফেসবুকেও বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু এটি লেখা ঠিক হবে না। এটি একাউন্টে জমা পড়ে আছে। পরবর্তী জেলা প্রশাসক এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।

লেখক : সোহেল রুশদী
সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক চাঁদপুর খবর
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০ : ৩০ পিএম,২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার
এইউ

Share