চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে গত ৮০ দিনে প্রায় ১৪ হাজার রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে, যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর অভিভাবকরা এই ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
এ ব্যাপারে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শীতের মৌসুম, অপরিচ্ছন্ন থাকা ও কাঁচা ফলমূলের সঙ্গে রোটা ভাইরাস বেশি ছড়ায়। আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পরিচর্যা করলে এটা সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব।
জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চাঁদপুরসহ আশপাশের সব কটি জেলা থেকে গত নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি মাসে বিপুল সংখ্যক শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুধু জানুয়ারি মাসের ২০ দিনে প্রায় ৩৫শ’ শিশু ভর্তি হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের তুলানায় প্রায় তিনগুণ।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে এই হাসপাতালে শিশুরা বেশি চিকিৎসা নিয়েছে। ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসের প্রথম দিনেই ১০৯ জন শিশু ভর্তি হয়। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ২০৪ জন শিশু ভর্তি হয়।
এছাড়া, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী ৮০ দিনে প্রায় ১৪ হাজার শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রায় ৪ হাজার ৬শ’, ডিসেম্বর মাসে ৪ হাজার ৭শ’ আর জানুয়ারি মাসের ১৯ দিনে ৩ তিন হাজার ২শ’ শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্মীপুর থেকে ২২৪ জন, কুমিল্লা সদর উপজেলা থেকে ১৫৩ জন, রায়পুর থেকে ১৬৭ জন, চান্দিনা উপজেলা থেকে ১৮৩ জন ও হাজীগঞ্জ উপজেলা থেকে ২২৫ জন চিকিৎসা নেয়। এছাড়া জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট হাসপাতালে প্রায় ৩ হাজার শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে আসা শিশু ওবায়েদুলের মা শিউলী বেগম বলেন, ‘সাত দিন ধরে শিশু পাতলা পায়খানা করছে। প্রথমে কুমিল্লা মুন হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। তারপর তিন দিন ধরে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আসছি। এখন শিশু সুস্থ হয়ে উঠেছে।’
হাজীগঞ্জ উপজেলার তারাপাল্লা গ্রাম থেকে আসা শিশু তানজিদের মা সুমি বেগম বলেন, ‘প্রথমে জ্বর আসে। তারপর বমি হয়েছিল। এখন পাতলা পায়খানা করছে। তাই দুই দিন ধরে এই হাসপাতালে শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে আসছি।’
এই রোগ সম্পর্কে আগে কোনো ধারণাই ছিল না বলেও জানান সুমি বেগম।
নোয়াখালী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু নুসরাতের মা রুবিনা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে আসার পরই রোটা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারলাম।’
কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলা থেকে আসা শিশু ফাইজা ইবনাথের মা রেহানা পারভীন বলেন, ‘এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় শিশুকে রাখি, তারপরও কীভাবে যে জীবাণুটা ঢুকে পড়ল তা বুঝতে পারছি না।’
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এ বছর তুলনামূলক শীত কম থাকার পরও স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ শিশু অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এ কারণে এ হাসপাতালে দুইজন খণ্ডকালীন ডাক্তার ও দশজন স্টাফ বাড়ানো হয়েছে।
মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. আল ফজল খান বলেন, ‘সাধারণত দুই বছরের নিচের বাচ্চাদের শীতকালে রোটা ভাইরাস হয়ে থাকে। এই রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার কারণে আমাদের হাসপাতালে তিন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। বাচ্চার ডায়রিয়া শুরুর সাথে সাথে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্যালাইনের প্যাকেটে একসাথে আধা লিটার পানি মেশাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অল্প অল্প করে মেশানো যাবে না। বাচ্চার চোখ বেশি দেবে গেলে, মেজাজ খিটখিটে ও নিস্তেজ হয়ে গেলে বা প্রস্রাব ঠিকমতো না করলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে।’
প্রতিকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. আল ফজল খান বলেন, ‘বর্তমানে রোটা ভাইরাস নির্মূলের জন্য একটি ভ্যাকসিন টিকা পাওয়া যাচ্ছে। ওই টিকা দিলে শিশুরা রোটা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে।’
সাধারণত শীতে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া, কাঁচা ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়াসহ পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁদপুর সিভিল সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘৯০ ভাগ শিশুই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। জেলার সকল স্বাস্থ্য ক্লিনিকে মায়েদেরকে হাত ধোয়া শিখিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।’
তথ্যসূত্র : দ্য রিপোর্ট
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৬:৪৮ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার
এমআরআর