Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে ব্রাদারের ডাক্তারি : দেড় বছরের শিশু মৃত্যুপথযাত্রী
চাঁদপুরে ব্রাদারের ডাক্তারি : দেড় বছরের শিশু মৃত্যুপথযাত্রী

চাঁদপুরে ব্রাদারের ডাক্তারি : দেড় বছরের শিশু মৃত্যুপথযাত্রী

আশিক বিন রহিম || আপডেট: ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

 চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট সরাকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এক ব্রাদারের (সেবক) ভুলে মৃত্যুর পথে আদনান নামের দেড় বছরের এক শিশু।

সোমবার সকালে প্র¯্রাবজনিত সমস্যার কারণে ওই ব্রাদার কর্তৃক অতিমাত্রার জেসকীন লোকাল দিয়ে অচেতন করে সুন্নত করানোর চেষ্টাকালে এই ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক নাকে মুখে রক্ত বের হওয়ায় শিশু আদনানকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা করতে অপরাগতা প্রকাশ করে। এতে নিরুপায় পরিবারটি বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে আদনানকে ভর্তি করায়। বর্তমানে তার অবস্থা অশংখ্যাজনক।

ভুল করেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর সরাকরি জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মচারীগণ। তাদের দাবি, সুন্নত (খতনা) করানো বা লোকাল দেয়ার কারণে নয়, এটি একটি ভিন্ন সমস্য। এর আগেও এমন বহু সুন্নত তারা করিয়েছেন বলে জানান।

শিশু আদনানের চাচা মোস্তফা জানায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের স্বর্ণা গ্রামের রণি মোল্লার স্ত্রী বিয়ের প্রায় ৮বছর ধরে নিঃসন্তান ছিলো। গত দেড় বছর পূর্বে তাদের ঘরকে আলোকিত করে জন্ম নেয় শিশু আদনান। প্রস্রাবজনিত সমস্যার কারণে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অলিউর রহমানের পরামর্শে আদনানকে অপারেশনের মাধ্যমে সুন্নত করানোর জন্য জেনারেল হাসপাতলে নেয়া হয়। সেখানে জরুরী বিভাগের ব্রাদার ইউসুফ নিজেই সুন্নত (খতনা) করাতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটায়।

এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অলিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, “প্রস্রাবের সমস্যার জন্য আদনানকে সুন্নত করানোটা জরুরী ছিলো। তাই তিনি অপারেশনের মাধ্যমে সুন্নত করানো জন্য শিশুটির বাবা-মাকে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র সার্জারী ডাক্তার মনির হোসেনের কাছে প্রেরণ করেন। আদনানের বাবা না বুঝে শিশুটিকে জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে শিশুটির মায়ের বাধাকে উপেক্ষা করে ব্রাদারের ( ইউসুফ) পরামর্শে জরুরী বিভাগেই তার সুন্নত করানো হয়। সুন্নত করানোর সময় শিশুটিকে অচেতন করানোর জন্যে প্রায় ৩ এমএল জেসকীন লোকাল দেয়া হয়। অথচ শিশুটির ওজন মাত্র ৪ কেজি। এই ওজনের শিশুকে কোনোমতেই ১.৫ এমএল-এর বেশি জেসকীন লোকাল (অচেতন ইনজেকশন) দেয়া যায় না। শিশুটির শরীরে অতিমাত্রায় জেসকীন লোকাল প্রবেশের ফলে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। পরে আদনানের পরিবার বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে আমি সেখানে ছুটে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে নিয়ে দায়ী ব্রাদার ইউসুফকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে চলে যেতো বলি।”

তিনি আরো জানান, “জরুরী বিভাগের ব্রাদার কখনোই সুন্নত বা এধরনের কাজ করার ক্ষমতা রাখে না। এই দায়িত্ব সিনিয়র সার্জারী ডাক্তারের।”

আদনানের বাবার অভিযোগ, ডা. অলিউর রহমান ব্রাদার ইউসুফকে আমাদের সাথে ঢাকায় যাওয়ার কথা বললেও তিনি আমাদের সাথে যেতে রাজি হননি। ওল্টো তিনি আমাদের বেশ বকাঝকা করেছেন।

তবে এ ব্যাপারে জরুরি বিভাগের ব্রাদার ইউছুফের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। সহকর্মীদের কাছে ইউসুফের মোবাইল নাম্বার চাইলে তারা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫